blood transfusion

করোনা চিকিৎসায় এ বার ‘ব্লাড ট্রান্সফিউশন’, এটি কেমন পদ্ধতি? কতটা লাভ হবে?

স্প্যানিস ফ্লু থেকে শুরু করে টিটেনাস এমনকি, বিড়াল-কুকুরে মারাত্মক ভাবে কামড়ালেও এই ভাবে চিকিৎসা করা হয়েছে আগে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০২০ ১৬:৫৩
Share:

স্প্যানিস ফ্লু থেকে শুরু করে টিটেনাসের ক্ষেত্রেও ব্লাড ট্রান্সফিউশনের মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়। ছবি: শাটারস্টক।

করোনা প্রতিরোধে সম্প্রতি ব্লাড ট্রান্সফিউশন পদ্ধতির শরণ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। করোনা রোধে ইতিমধ্যে চিন, ইংল্যান্ড, আমেরিকাও এই পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়েছে। অনেকাংশেই সাফল্য মিলেছে। বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে যখন স্প্যানিশ ফ্লু হয়, তখন থেকে মহামারির সময়ে রক্ত ট্রান্সফিউশনের পদ্ধতি প্রচলিত। ভারতেও স্প্যানিস ফ্লু থেকে শুরু করে টিটেনাস এমনকি, বিড়াল-কুকুরে মারাত্মক ভাবে কামড়ালেও এই ভাবে চিকিৎসা করা হয়ে থাকে। তবে করোনার ক্ষেত্রে এখনও এ দেশে এ ভাবে চিকিৎসা হয়নি।

Advertisement

কী এই পদ্ধতি?

সোজা কথায় বললে, সুস্থ হয়ে ওঠা এক জনের অ্যান্টিবডি আক্রান্তের শরীরে ঢুকিয়ে দেওয়া।

Advertisement

কেমন তা? কোনও রোগে কেউ আক্রান্ত হয়ে সেরে উঠলে তার শরীরে সেই রোগের সঙ্গে যুদ্ধ করার জন্য প্রয়োজনীয় অ্যান্টিবডি তৈরি হয়ে যায়। তাই, ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার পর সেরে ওঠা কোনও ব্যক্তির রক্তের প্লাজমা প্রথমে সংগ্রহ করা হয়। সেই প্লাজমা থেকে নানা প্রক্রিয়ায় সেরাম আলাদা করা হয়। ওই সেরামেই অ্যান্টিবডি থাকে। তা থেকে নানা রকম ভ্যাক্সিন তৈরি করা হয়। সেই ভ্যাক্সিন দেওয়া হয় অসুস্থ মানুষের শরীরে। তখন সেই বাইরে থেকে প্রবেশ করানো অ্যান্টিবডির সাহায্যে আক্রান্ত লড়তে পারেন ভাইরাসের সঙ্গে। এই পদ্ধতিতেই করোনা-আক্রান্তদের সারিয়ে তোলার পথে নামতে চাইছেন বিশেষজ্ঞরা।

আরও পড়ুন: স্যানিটাইজার না সাবান? এই মুহূর্তে কোনটা বেশি প্রয়োজনীয়

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সুবর্ণ গোস্বামীর মতে, ‘‘আমাদের শরীরে যখন কোনও ভাইরাস ঢোকে, তখন রক্তের প্লাজমায় কিছু অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। ওই অ্যান্টিবডিগুলিই ‘ফরেন বডি’ বা ভাইরাসটির সঙ্গে লড়তে সাহায্য করে। কিন্তু সকলের শরীর ঠিক সময়ে প্রয়োজনীয় অ্যান্টিবডি তৈরি করতে পারে না। তার উপর অসুস্থ হলে শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি করার কাজেও অক্ষমতা আসে। তাই এ সব ক্ষেত্রে অন্যের অ্যান্টিবডির উপর নির্ভর করতে হয়। এটা নতুন বিষয় নয়। স্প্যানিশ ফ্লু থেকে শুরু করে টিটেনাস এমনকি, মারাত্মক ভাবে বিড়াল-কুকুরে কামড়ালেও এই ভাবে চিকিৎসা করা হত। তবে করোনার বেলায় এখনও এ দেশে এই পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়নি। হলে ফল ভাল হবে বলেই আশা করা যাচ্ছে।’’

ভাইরাস ও অ্যান্টিবডির লড়াই। কল্পিত চিত্র। ছবি: শাটারস্টক।

ভায়রোলজি বিষয়ক গবেষক ও বিজ্ঞানী ইন্দ্রনীল বন্দ্যোপাধ্যায় জানালেন যে, ‘‘রোগীকে সেরে ওঠা মানুষের প্লাজমা দিলে অ্যাকোয়ার্ড ইমিউনিটি অর্থাৎ অর্জিত অনাক্রমণতা বাড়ে। বেশির ভাগ মানুষের শরীরেই ইনেট ইমিউনিটি অর্থাৎ স্বাভাবিক অনাক্রমণতা থাকে। কিন্তু অনেক সময় বেশি বয়স, ক্যানসার, কেমোথেরাপি, পলিউশন, ক্রনিক অসুখ-সহ কিছু কারণে শরীরের সাধারণ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। ফলে রোগীর অবস্থা সঙ্কটজনক হয়ে দাঁড়াতে পারে। টিকা এবং ইনফেকশন ফাইটিং ইমিউন সেল (এ ক্ষেত্রে কোভিড-১৯ রোগী সেরে ওঠার পর তাঁর রক্তরস) দিয়ে অ্যাকোয়ার্ড ইমিউনিটি বাড়াতে পারলে রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করা সহজ হয়। ’’

আরও পড়ুন: সেপ্টেম্বরেই চলে আসছে করোনাভাইরাসের টিকা! দাবি অক্সফোর্ডের বিজ্ঞানীর

তবে এখানে একটা ‘কিন্তু’ আছে। আমাদের দেশে কোভিড-১৯ আক্রান্তের সংখ্যা, সেরে ওঠা মানুষের সংখ্যার তুলনায় অনেক বেশি। তা ছাড়া সেরে ওঠার পর তিনি আদৌ রক্ত দিতে ইচ্ছুক কি না, সে বিষয়েও প্রশ্ন থেকে যায়। এমনিতেই এ দেশে রক্তদাতার সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় পর্যাপ্ত নয়। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, কোভিড-১৯ থেকে সেরে ওঠার পর রক্ত দিলে কোনও সমস্যা হয় না।

এক ইউনিট রক্ত (গড়ে ৫২৫ মিলি) থেকে ২০০-২৫০ মিলি প্লাজমা পাওয়া যায়। এক জন করোনাভাইরাস থেকে সেরে ওঠা মানুষের এক ইউনিট রক্ত থেকে দুই ইউনিট প্লাজমা পাওয়া যায়। এক ইউনিট প্লাজমায় সেরে উঠতে পারেন ২ জন করোনাভাইরাস আক্রান্ত। দরকার আনুপাতিক হারে রক্তদাতা, প্রয়োজন সচেতনতাও।

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন