সন্তানের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে এত দিন কেরিয়ার কাউন্সিলরের দ্বারস্থ হতেন বাবা-মা। এমনকি জ্যোতিষীর কাছেও যেতেন অনেকে। বছর কয়েক আগেও এমন দৃশ্য আকছার দেখা যেত। এ বার বদলাচ্ছে সেই ছবি। ছেলে-মেয়েদের কী বিষয়ে আগ্রহ রয়েছে, কোন বিষয়ে পড়াশোনা করলে উন্নতির সম্ভাবনা বেশি, তা জানতে ডিএমআইটি (ডার্মাটোগ্লাইফিক্স মাল্টিপল ইন্টেলিজেন্স টেস্ট) ও ব্রেন ম্যাপিং পদ্ধতির সাহায্য নিচ্ছেন বহু অভিভাবক। পড়ুয়াদের দু’হাতের আঙুলের ছাপ কম্পিউটারে বিশ্লেষণ করে তা থেকে জন্মগত প্রতিভার আন্দাজ পাওয়া যেতে পারে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা।
মানুষের মস্তিষ্ক বাঁ এবং ডান— দু’ভাগে বিভক্ত। বাঁ দিকের মস্তিষ্কের সঙ্গে ডান হাত এবং ডান দিকের মস্তিষ্কের সঙ্গে বাঁ হাতের সরাসরি যোগ রয়েছে। বিজ্ঞানীদের দাবি, কারও বাঁ দিকের মস্তিষ্ক সক্রিয় হলে তাঁর মধ্যে বিশ্লেষণী ক্ষমতা, যুক্তিপূর্ণ ভাবনা, উপস্থিত বুদ্ধি, যন্ত্রের প্রতি আগ্রহ, ভাষা শেখার ক্ষমতা অন্যদের চেয়ে বেশি হয়। ডান মস্তিষ্ক যাঁদের বেশি সক্রিয়, তাঁরা বহু ক্ষেত্রে নেতৃত্বদানের অধিকারী। সৃজনশীলতা, কল্পনাশক্তি, নাচ, গান প্রভৃতিতে আগ্রহও তাঁদের বেশি বলে দাবি করা হয়।
ডিএমআইটি বিশেষজ্ঞেরা প্রথমে স্ক্যানারে পড়ুয়ার দু’হাতের আঙুলের ছাপ নেন। এর পরে কম্পিউটারে আঙুলের রেখাগুলির বিভিন্ন পর্যায়ে যাচাই করে তাঁর সহজাত দক্ষতা সম্পর্কে ধারণা পাওয়ার চেষ্টা হয়। চূড়ান্ত রিপোর্ট তৈরি হলে অভিভাবকদের তা ব্যাখ্যা করেন বিশেষজ্ঞেরা। অনেক সময়ে বাবা-মা এবং সন্তানকে একসঙ্গে বসিয়ে চলে কাউন্সেলিং।
ডিএমআইটি বিশেষজ্ঞ অজয় পাণ্ডের কথায়, ‘‘বিভিন্ন বয়সের ছেলেমেয়েদের নিয়ে বাবা-মায়েরা আসেন। কী নিয়ে পড়লে সন্তান উন্নতি করবে, জানতে চান। ছেলেকে ক্রিকেটার বানাতে ইচ্ছুক, এমন অভিভাবকও আসেন। ক’দিন আগে এক মহিলা তাঁর মেয়েকে এনেছিলেন। তিনি চান, ভবিষ্যতে মেয়ে মুম্বইয়ের নামী গায়িকা হোক।’’ দক্ষিণ কলকাতার এক ডিএমআইটি সেন্টারের কর্ত্রী অঞ্জু সাইনির কথায়, ‘‘সকলে চান ছেলেমেয়েরা প্রতিষ্ঠিত হোক। তাই হয়তো ডিএমআইটি-র প্রতি আগ্রহ বাড়ছে।’’ কলকাতায় এর খরচ কমবেশি ছ’হাজার টাকা।
প্রসঙ্গত আমেরিকা, সিঙ্গাপুর-সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ডিএমআইটি জনপ্রিয়। দ্বিতীয় বার আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরে দেশে ডিএমআইটি নিয়ে গবেষণার জন্য ২৫০ মিলিয়ন ডলার অর্থ বরাদ্দ করেছিলেন বারাক ওবামা। মুম্বই, দিল্লির অনেক স্কুলও পড়ুয়াদের ডিএমআইটি করাতে শুরু করেছে। গত জুলাইয়ে মধ্যমগ্রামের এক বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলেও এই পদ্ধতি শুরু হয়েছে। স্কুলের কর্ণধার সুব্রত ভট্টাচার্য বললেন, ‘‘আমেরিকায় বহু স্কুলে পড়ুয়াদের ডিএমআইটি ও ব্রেন ম্যাপিং করা হয়। তা দেখেই আমাদের স্কুলেও তা চালু করার ভাবনা মাথায় আসে। অভিভাবকদের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়াও মিলছে।’’
‘থ্রি ইডিয়টস’ সিনেমায় র্যাঞ্চো বন্ধু রাজুকে বলেছিল, ‘‘বাচ্চা কাবিল (যোগ্য) বনো। কামইয়াবী ঝক্ মারকে পিছে আয়েগি।’’
সন্তানদের ‘কাবিল’ বানাতে এ শহরের বাবা-মায়েরা তাই চেষ্টার কসুর করছেন না।