Anuttama Banerjee

‘বৈবাহিক প্রতিষ্ঠানে বিশ্বাসী নই’, কী করে বলব? আলোচনায় অনুত্তমা এবং ব্রততী

বিয়ে নিয়ে কোনও দিন তো মুখ খুলতে শুনিনি। তার মানে নিশ্চয়ই কোনও ব্যাপার আছে! ‘কী করে বলব? সঙ্গে অনুত্তমা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এ সপ্তাহের বিশেষ পর্ব, সঙ্গে অতিথি ব্রততী বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ২০:১১
Share:

‘নারীকে আপন ভাগ্য জয় করিবার কেন নাহি দিবে অধিকার’ ছবি- সংগৃহীত

‘‘একা মেয়ে, সুন্দরী! বয়স থাকতে বিয়ে করলি না কেন?’’ চাইলে এই প্রশ্নের উত্তর তা-ও দেওয়া যায়। কিন্তু, ‘‘এখন তোর স্টেটাস কী?’’ কিংবা জীবনের ব্যক্তিগত সম্পর্কগুলি নিয়ে তোলা অযাচিত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়েদের অনেকের পক্ষেই কঠিন। পারিবারিক কোনও অনুষ্ঠানে দেখা হলেই বিয়ে নিয়ে সমাজের নীতিপুলিশি বা আত্মীয়দের কানাকানি, মুখ বুজে বা হেসে সহ্য করে আসতে হয়েছে মেয়েদের।

Advertisement

বিয়ে হল না কেন বা ইচ্ছে না করলেও বৈবাহিক অবস্থান নিয়ে কথা বলতে হবে কেন? এই বিষয় নিয়েই সোমবার আনন্দবাজার অনলাইনের ফেসবুক পাতায় এবং ইউটিউব চ্যানেলে আলোচনায় বসলেন মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়। বর্ষপূর্তির বিশেষ এই পর্বে অতিথি ছিলেন আবৃত্তি শিল্পী ব্রততী বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘কী করে বলব? সঙ্গে অনুত্তমা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে মনোবিদ কথা বললেন পুরনো একটি বিষয় নিয়ে। কিন্তু সম্পূর্ণ নতুন আঙ্গিকে। এ সপ্তাহের বিষয় ছিল ‘বিয়ে করিসনি কেন’।

মেয়েদের জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে বদলে যেতে থাকে তাদের পরিচয়। কখনও কারও মেয়ে হয়ে, কখনও বা কারও স্ত্রী হয়ে, পরে কারও মা হয়েই জীবনটা কাটিয়ে দিতে হয়। এই হল জীবদ্দশায় তাদের পরিচয়ের বিবর্তন। যুগ যুগ ধরে চলে আসছে এই নিয়ম। নিয়ম ভেঙে বেরোনো বা তার প্রতিবাদ করতে বলা সহজ, কিন্তু বাস্তবে করে ওঠা কঠিন।

Advertisement

কোনও কারণ ছাড়াই বিয়ে না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া বা বিয়ের অবস্থান নিয়ে কথা বলতে না চাওয়াও সাধারণ পরিবারের মেয়েদের কাছে ‘অপরাধ’। বেশির ভাগ মেয়ের মধ্যে আবার একটা ধারণা থাকে, সমাজে এমন স্তর বা তথাকথিত ‘এলিট’ সমাজের মেয়েদের বোধ হয় আত্মীয় কিংবা প্রতিবেশীদের করা এমন প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় না। এমন ক্লিশে ধারণা ভেঙে দিলেন ব্রততী নিজে। জানালেন, অজস্র বার আত্মীয়, অনাত্মীয় এমন বহু মানুষের প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছিল তাঁকেও। ব্রততী বলেন, “বিয়ে মানে তো একত্র যাপন। তা যে শুধু নারী-পুরুষের মধ্যেই হতে হবে, তার তো কোনও মানে নেই। সৌভাগ্যবশত পরিবারের মানুষজনের কাছে এমন প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়নি কোনও দিন। কিন্তু আত্মীয়-পরিজনের কাছে শুনতে হয়েছে বহু বার। কিন্তু আমি বলেছি, আবার বিয়ে হয়েছে, আমার কাজের সঙ্গে। কাজ এমন ভাবে আমাকে সারা ক্ষণ ঘিরে রেখেছিল যে, আমি এই বিষয়ে ভাবার অবকাশ পাইনি।”

কম বয়সে রঙিন জীবনে পা বাড়ানোর হাতছানি থাকে অনেক বেশি। আত্মীয়-অনাত্মীয়দের কানাকানি, দর্শক, শ্রোতাদের কৌতূহল মেটানো— এই সঙ্কটে কিন্তু বেশি পড়তে হয় মেয়েদেরই। অনেক সময় পরিবার বা কাছের মানুষরা উদ্বেগ থেকেও তো এমন অনেক প্রশ্ন করেন! বেশি বয়সে যদি কোনও সমস্যা হয়, তখন কে দেখাশোনা করবে? এই ভাবনা কি ব্রততীর মনকে বিচলিত করেনি কখনও? প্রশ্ন মনোবিদের।

ব্রততীর উত্তর, “কম বয়সে মনে হয়নি। কিন্তু এখন বিশেষ করে অতিমারির সময়ে সত্যিই মনে হয়েছিল। তবে, এই যে দীর্ঘ সময় ধরে এত ছেলেমেয়ে তৈরি করলাম, তাদের কেউ না কেউ ঠিক আমার পাশে থাকবে। আমি আমার জীবন দিয়ে দেখেছি, অনেকের ক্ষেত্রেই বিপদের সময় রক্তের সম্পর্কের কাউকে পাশে পায়নি।”

শুধু ব্যক্তিগত জীবন নয়, পেশাগত জীবনেও ছকভাঙা ব্রততী। নিশ্চিত স্থায়ী রোজগার ছেড়ে, পূর্ণ সময়ের জন্য আবৃত্তি করেছেন তিনি। তাঁর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে অন্যের কৌতূহল মেটান কী ভাবে? তাঁর সম্পর্কে শ্রোতাদের মনগড়া নির্মাণ— এই সব সামাল দেন কী ভাবে? সব সময়ে যে বিদ্রোহ করে জানান দিতে হয়, এমনও তো নয়।

অনুত্তমার কথার সূত্র ধরেই ব্রততী জানান, “সকলকে সব কিছুর উত্তর দেওয়া তো সম্ভব হয় না। তাই কিছু ক্ষেত্রে দূরত্ব রাখতে হয়। কাজই যে আমার প্রেম, সেটিই যে আমার ভালবাসা, তা সকলকে বোঝানোর প্রয়োজন নেই। আর সব চেয়ে বড় কথা, আমার মধ্যে কোনও সময়ে সেই শূন্যস্থান ছিলই না, যেখানে আমি অন্য কারও কথা ভাবতে পারি। কারণ, কাজই আমাকে সব দিক থেকে পূর্ণ করে রেখেছে। তাই যখন এই বয়সে আরও এক বার ভেবে দেখার পরামর্শ দেন কেউ, আমি একমুখ হাসি নিয়ে তাঁর দিকে চেয়ে থাকি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন