অভিনেত্রী সোহা আলি খানকে ছোট থেকে কোন শিক্ষা দিয়েছিলেন তাঁর বাবা? ছবি: ইনস্টাগ্রাম।
নবাব পরিবারের কন্যা তিনি। কিন্তু নবাবিয়ানা কী বস্তু, তা দেখেননি। প্রয়োজনে সবটুকুই পেয়েছেন। তবে অতিরিক্ত নয়। এক সাক্ষাৎকারে বাবা মনসুর আলি খান পটৌডির দেওয়া শিক্ষার কথাই বলেছেন সোহা আলি খান।
বলিউড অভিনেত্রী নবাব পরিবারের সন্তান। সেই পরিবারের যে কেউ বিলাস-বৈভবে বড় হবেন, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ছোট থেকেই সন্তানদের অর্থের মূল্য বুঝিয়েছেন মনসুর আলি খান পটৌডি। প্রাক্তন ক্রিকেট অধিনায়ক সন্তানদের ছোটবেলা থেকেই জিনিসের মূল্য বুঝতে শিখিয়েছিলেন। এক সাক্ষাৎকারে সোহা জানিয়েছেন, তাঁর বাবা পেট্রল এবং বিদ্যুতের খরচ নিয়ে সচেতন থাকতেন সব সময়। বাড়ির বিভিন্ন জায়গায় তিনি কাগজে সাঁটিয়ে রাখতেন মনে করে আলো বন্ধ করার কথা। কখনও বাবাকে অতিরিক্ত কেনাকাটা করতে দেখেননি তিনি। মা শর্মিলা ঠাকুরকেও দেখেছিলেন, সংসারের হিসাব-নিকাশ খাতায় টুকে রাখতে।
বাবা মনসুর আলির সঙ্গে মেয়ে সোহা আলি খান। ছবি: সংগৃহীত।
সোহা ছিলেন নবাবনন্দিনী। তা-ও তাঁকে খুব সাধারণ জীবনযাপন করতে হয়েছে। কারও মনে হতেই পারে, এ হয়তো অভিভাবকদের কার্পণ্যের লক্ষণ। কিন্তু মনো-সমাজকর্মী মোহিত রণদীপ বলেছন, ‘‘অর্থের বা জিনিসের অপচয় বন্ধ করার শিক্ষা সন্তানকে ছোট থেকেই দেওয়া উচিত। বাবা-মা নিজেরা যদি এই দর্শনে বিশ্বাসী হন, সন্তান তা দেখেই শিখবে।’’
ঠিক যেমন গাড়ি করে যেতে গেলে পেট্রল খরচ হয়। এবং পেট্রলের যে অনেক দাম, তা ছোট থেকেই বুঝতে শিখেছিলেন সোহা। বন্ধুর বাড়ি যাওয়ার আবদারও সব সময় তাঁর বাবা মানেননি। বরং বলেছিলেন, তোমার সেই বন্ধুর বাড়ি অনেকটা দূরে। সেখানে যেতে গেলে পেট্রলের খরচ হবে অনেক।
মোহিতও বলছেন, ‘‘জিনিসের মূল্য ছোট থেকেই তাদের বোঝানো যায়। আদিবাসী সংস্কৃতি যেমন প্রকৃতির সম্পদ একাকী ব্যবহার না করে সকলের মধ্যে বিলিয়ে দেওয়ার কথা বলে, ভবিষ্যতের জন্য সংরক্ষণের বার্তা দেয়, তেমনটাই কিন্তু শিশুকেও শেখানো যায়। শুধু অর্থ নয়, বিদ্যুৎ, জল— সবটাই বুঝে ব্যবহার করতে হয়। এক জন অনাবশ্যক খরচ করলে অন্যের অসুবিধা হয়, এই নৈতিক শিক্ষাও কিন্তু সন্তানের বড় হওয়ার পাথেয় হতে পারে।’’
সোহা জানিয়েছেন, অর্থ কী ভাবে সাশ্রয় করতে হয়, কৌশলে সেই শিক্ষাও তিনি ছোট বয়সেই বাবার কাছে পেয়েছেন। কেউ এক বার সোহাকে ৫০০ টাকা উপহার দিয়েছিলেন। মনসুর আলি তাঁকে পরামর্শ দিয়েছিলেন, যদি সোহা সেটি খরচ না করে জমানোর জন্য তাঁকে দেন, প্রতি বছর একই দিনে ৫০ টাকা করে পাবেন তিনি। সোহা জানান, তাঁর ২৫ বছর বয়স পর্যন্ত প্রতি বছর ওই মাসে তাঁর বাবা তাঁকে সেই টাকা দিয়ে গিয়েছেন।
মনোবিদেরাও বলছেন, অর্থ সঞ্চয়ের ভাবনা ছোটবেলা থেকেই সন্তানের মধ্যে সঞ্চারিত করা যেতে পারে। মোহিতের কথায়, “এখন অনেক অভিভাবকই একমাত্র সন্তানকে সবটুকু দিতে চান। চাওয়ার আগেই অঢেল পায় তারা। কিন্তু এই অভ্যাস যেমন অর্থের মূল্য তাদের বুঝতে দেয় না, তেমনই ভবিষ্যতেও শিশুর চাহিদা বাড়িয়ে দেয়। সে কারণেই, কোনও জিনিসের গুরুত্ব কতটা, তা বোঝানো প্রয়োজন। সবচেয়ে আগে প্রয়োজন অভিভাবকের যথেচ্ছ খরচ, যখন-তখন কেনাকাটায় লাগাম টানা। বড়দের যেমন ভাবে দেখবে সন্তান, তেমনটাই সে শিখবে।”
কী ভাবে সন্তানকে সঞ্চয়ী হতে শেখাবেন?
পিগি ব্যাঙ্ক: বাবা-মা নিজের জীবনবোধ দিয়ে সন্তানকে উদ্বুদ্ধ করতে পারেন। পিগি ব্যাঙ্ক বা ভাঁড়ে অল্প অল্প করে পয়সা জমানোয় উৎসাহ দেওয়া যায় ছোট থেকেই। খেলা হোক বা শখের জিনিস কিংবা চকোলেট— যে কোনও জিনিস কিনতেই টাকা লাগে। অর্থ জমালে তবেই সেই ইচ্ছা পূরণ করা যায়, সেই শিক্ষা ছোট থেকেই তাকে দেওয়া যায়।
খরচ থেকে সঞ্চয়: সন্তান একটু বড় হলে তাকে ঘরের টুকটাক কাজ করতে বলতে পারেন। সেই বাবদ তাকে টাকা দিন। সেখান থেকে তাকে তার পছন্দের জিনিসের জন্য টাকা জমাতে বলতে পারেন। এতে শিশু বুঝবে, কাজ করে অর্থ উপার্জন করতে হয় এবং শখ পূরণের জন্য টাকা সঞ্চয় করতে হয়।
সঞ্চয়ের গুরুত্ব শেখাতে বলছেন মোহিত। তাঁর পরামর্শ, সন্তানকে বোঝাতে হবে, দৈনন্দিন খরচের বাইরেও টাকার দরকার হয়। যদি বাবা বা মায়ের কখনও অসুখ করে কিংবা তার কিছু হয়, তা হলে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। হাসপাতালেও ভর্তি হওয়ার দরকার হলে অনেক টাকা লাগবে। এমন সময়ের জন্য কিছু টাকা আলাদা করে জমাতে হয়। শুধু খেলনা কেনার জন্য নয়, আরও অনেক জরুরি কাজের জন্য টাকা লাগে, এ কথা তাকে বোঝানো প্রয়োজন।
টাকা বেড়ে যায়: টাকা জমালে, ব্যাঙ্কে রাখলে তা অঙ্কে বেড়ে যায়, সেটাও কিন্তু সহজে শেখানো যায়। যেমন টানা এক বছর খুদেকে টাকা জমাতে বলুন। বছর ঘুরলে সেই টাকার উপর অতিরিক্ত অর্থ তাকে দিন। ব্যাঙ্কে যে ভাবে সুদ মেলে, সেটাই বোঝান। টাকার অঙ্ক বাড়লে সন্তান এ বিষয়ে কৌতূহলী হবে।
সিদ্ধান্ত: পুজোর বাজেট এত। তার মধ্যে কোন জিনিস কেনা যায়, কোনটি নয়, তার সঙ্গে আলোচনা করুন। সন্তানকে বলতে পারেন, এত টাকার মধ্যেই তাকে জামা, জুতো, সাজের জিনিস কিনতে হবে। এ বার সে ঠিক করবে, কত টাকার জামা নেবে, কত টাকার জুতো। কোনওটি বেশি দামি হলে, অন্য জিনিসের খরচ কমাতে হবে।
ধৈর্য: যেটা সে চাইছে, সেই খেলনাটি তাকে সরাসরি কিনে না দিয়ে প্রতি মাসে কিছু কিছু অর্থ দিন। বলুন, জিনিসটি কেনার জন্য যে দাম সেটা সে জমিয়ে ফেলতে পারলেই খেলনাটি পেয়ে যাবে। এতে সে খেলনাটিও পাবে, কিন্তু ধৈর্য ধরতেও শিখবে।