Parenting Tips

কৈশোরে পৌঁছেও সন্তানের বন্ধু নেই সে ভাবে? বাবা-মায়ের জন্য তা কি চিন্তার?

কৈশোরে যখন বন্ধুরাই জগৎ হয়ে ওঠে, তখন একলা নিজের মতোই থাকছে সন্তান। তা কি স্বাভাবিক, না কি অভিভাবকের সতর্ক হওয়া প্রয়োজন?

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৫ জুন ২০২৫ ১১:০৩
Share:

কৈশোরেও বেশিরভাগ সময় একলা থাকে সন্তান? বন্ধু নেই তেমন? ছবি : সংগৃহীত।

যে কথা বাবা-মাকে বলা যায় না, সে কথা অনায়াসে বলে ফেলা যায় বন্ধুদের। মনের গোপন অনুভূতি, রোমাঞ্চ, কৌতূহল— এ সব মেটানোর জন্যই তো রয়েছে বন্ধুরা!

Advertisement

কৈশোর জীবনের এমন এক সময়কাল, যখন দেহ-মনে বদল হয়। কল্পনাও হয় রঙিন। মনে ভিড় করে অজস্র প্রশ্ন। আর সে সবের উত্তর পেতে সব সময় বড় নয়, বরং সমবয়সিদের মহলই খোঁজে এই বয়সিরা। আর সেটাই স্বাভাবিক বলছেন মনোবিদেরা। কিন্তু যে সময় বন্ধুমহল বেড়ে ওঠার কথা, সেই বয়সেই সন্তান যদি কিছুটা একলা থাকে, বন্ধু হয় হাতেগোনা, তখন কি তা চিন্তার?

সন্তানের তেমন বন্ধু নেই। বিষয়টি কি স্বাভাবিক? ছবি: শাটারস্টক।

মনোরোগ চিকিৎক শর্মিলা সরকার বলছেন,‘‘কোনও কোনও ছেলে-মেয়ে একটু লাজুক প্রকৃতির হয়, তারা চট করে মিশতে পারে না। আবার অনেকেই নিজের গণ্ডিতে নিজের মতো করেই থাকছে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। তাদের বন্ধুর সংখ্যা কম হয়।’’

Advertisement

আর কোন কারণে মিশতে অসুবিধা হতে পারে?

• পড়াশোনা, আঁকা বা নাচ-গান শেখা, গৃহশিক্ষকের কাছে পড়তে যাওয়া, বেশির ভাগ কিশোরের জীবন এখন এমন গতানুগতিক রুটিনে আবদ্ধ। খেলাধুলো বা আলাদা করে বন্ধুদের সঙ্গে কাটানোর পরিসর কম। আর আছে ইন্টারনেটের হাতছানি। মুঠোফোনের এক ক্লিকেই পৌঁছে যাওয়া যায় এমন সব সাইটে, যার রোমাঞ্চ এড়ানো সহজ নয়। সেই মোহে এক বার পড়লে, বন্ধুর সংখ্যাও কমতে পারে।

• সমস্যা হতে পারে অন্যও। মনের গোপন কথা বন্ধুকে বলার পর, সর্বসমক্ষে সেই তথ্য যদি ফাঁস করে সে বিব্রত করে, তা হলেও এমন সম্পর্কে আস্থা হারাতে পারে। কেউ বন্ধুমহল থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিতে পারে।

• ক্রমাগত বন্ধুদের ঠাট্টা, মশকরার লক্ষ্য হলেও মনে বিরূপ ভাব তৈরি হতে পারে। কেউ নিজেকে সেই পরিসর থেকে সরিয়ে নিজের জগৎ তৈরিতে মন দিতে পারে।

• পারিবারিক বা ব্যক্তিগত জীবনের সমস্যার প্রভাবও পড়তে পারে বন্ধুত্বের সম্পর্কে। বন্ধুমহলে অস্বস্তি তৈরি, ব্যক্তিগত বিষয়ে প্রশ্নের সম্মুখীন হওয়ার ভয়েও কেউ কেউ নিজেকে গুটিয়ে নিতে পারে।

কিন্তু এমন কোনও সমস্যা না থাকা সত্ত্বেও কি বন্ধু হচ্ছে না?

বন্ধুদের থেকে কেউ সযত্নে নিজেকে গুটিয়েও যেমন কেউ নিতে পারে, তেমনই বন্ধুরা পাত্তা না দেওয়ার জন্যও মনঃকষ্টে ভুগতে পারে এই বয়সের ছেলেমেয়েরা। সে ক্ষেত্রে দেখা দরকার, কোন আচরণ বন্ধুদের সঙ্গে মেশার ক্ষেত্রে সমস্যার কারণ হচ্ছে।

ক্রমাগত নেতিবাচক কথা, ঈর্ষার মনোভাব কাউকে অপছন্দ করার কারণ হতে পারে। জীবনে সমস্যা, দুঃখের কথা অবশ্যই ভাগ করে নেওয়া যায়। কিন্তু এক বিষয় নিয়ে ঘ্যানঘ্যানানি অন্যদের বিরক্তির কারণ হতে পারে।

বন্ধুত্বের সম্পর্ক সুদৃঢ় করার উপায় হল, ক্রমাগত নিজেরটা না বলে অন্য পক্ষের কথাও শোনা, সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া।

কোনও বিষয় অতিরঞ্জিত করা, নিজের সম্পর্কে বাড়িয়ে বলা বা দেখানো— এ সমস্ত কিছুই বন্ধুমহলে নিজের জায়গা নড়বড়ে করে দিতে পারে।

অভিভাবকদের কখন সতর্কতার প্রয়োজন?

বন্ধু কম থাকলেই যে সেটা ভীষণ চিন্তার, তেমনটা মনে করেন না মনোরোগের চিকিৎসক। শর্মিলা বলছেন, ‘‘অনেক ছেলেমেয়েই স্বভাবে অন্তর্মুখী। তারা নিজেদের জগতে থাকতে ভালবাসে। কারও আবার বন্ধু কম থাকলেও মা বা বাবার সঙ্গে খুব ভাল সংযোগ থাকতে পারে। সেখানেই তারা মনের কথা উজাড় করে দিতে পারে। ফলে কারও আচার-আচরণ যদি স্বাভাবিক থাকে, তা নিয়ে ভাবনা থাকার কথা নয়। তবে সকলের সঙ্গে মেলামেশায় সাবলীল ছেলে-মেয়ে হঠাৎ করে চুপ হয়ে গেলে, বন্ধুমহলে যাওয়া ছেড়ে দিলে বা মেজাজে বদল এলে তা নিয়ে ভাবা প্রয়োজন।’’ প্রথমেই সন্তানের সঙ্গে বসে কথা বলা প্রয়োজন। কিন্তু সে যদি বিষয়টি এড়িয়ে যায়, তার দিকে লক্ষ রাখতে হবে, পরামর্শ মনোরোগ চিকিৎসকের। প্রয়োজনে যার সঙ্গে মন খুলে কথা বলতে পারবে সে, এমন কারও কাছে নিয়ে যেতে পারেন বা এ ব্যাপারে কথা বলার অনুরোধ জানাতে পারেন। কাউন্সিলরের পরামর্শ নিতে পারেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement