প্রতীকী ছবি।
দিনের অধিকাংশ সময়ে কাজের তাগিদে ল্যাপটপের পর্দায় চোখ রাখতে হয় তথ্যপ্রযুক্তি ইঞ্জিনিয়ার ইন্দিরা সাহার। গভীর রাত পর্যন্ত আবার স্মার্ট ফোনের স্ক্রিনে চোখ থাকে নিছক আড্ডার জন্য। সুখটানে বিভোর হয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় বন্ধুদের সঙ্গে গসিপ কিংবা নতুন ছবির ট্রেলার দেখা চলে শেষ রাত পর্যন্ত। কিন্তু দিন কয়েক ধরে চোখে যেন ঝাপসা দেখছিলেন বছর পঁয়ত্রিশের ইন্দিরা। চিকিৎসক জানান, ইন্দিরার চোখে ছানি পড়েছে। দ্রুত অস্ত্রোপচার করতে হবে।
ছানির সমস্যায় ভুগেছেন বছর চল্লিশের অগ্নি রায়ও। শহরের একটি রেস্তোরাঁর মালিক অগ্নি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। সে সমস্যার জন্য নিয়ম মাফিক ওষুধও খান তিনি। চল্লিশে পা দিতেই তাঁর দেখতে সমস্যা হচ্ছিল। চিকিৎসক জানান, চোখে অস্ত্রোপচার করলে সেই সমস্যা কমবে।
চল্লিশ না পেরোতেই ছানির সমস্যা শুনে অবাক হয়েছেন অনেকে। যদিও চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, ‘বুড়ো’ বয়সের অসুখ এখন বাসা বাঁধছে অল্প বয়সেও। চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানাচ্ছেন, আধুনিক জীবনযাপন এবং খাদ্যাভ্যাসের জেরে কম বয়সেই ছানির সমস্যা দেখা দিচ্ছে। সম্প্রতি কলকাতার একটি চোখের হাসপাতালে এই সংক্রান্ত সমীক্ষার পরিসংখ্যান বলছে, বছরে মোট ছানি অস্ত্রোপচারের প্রায় তিরিশ শতাংশ ৪০ বছরের কম বয়সী। কিন্তু বছর সাতেক আগেও ছানির সমস্যা দেখা যেত ষাটোর্ধ্বদের মধ্যে।
চিকিৎসকেরা বলছেন, চোখের মণি ক্যামেরার মতো। কালো অংশটা হল লেন্স। যা স্বচ্ছ থাকলে তবেই দেখতে পাওয়া যায়। ছানি আসলে লেন্সের স্বচ্ছতা নষ্ট করে দেয়।
কেন কম বয়সেই ছানির সমস্যা হচ্ছে? চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, ডায়াবেটিস থাকলে ছানির সমস্যা দেখা দেওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। আধুনিক খাদ্যাভ্যাস অর্থাৎ, নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে না খাওয়া এবং অতিরিক্ত তেলমশলা যুক্ত খাবারের জেরে তরুণ-তরুণীদের মধ্যেও হচ্ছে ছানির সমস্যা। এই অনিয়মিত খাওয়াদাওয়া এবং অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার জেরে শরীরে ডায়াবেটিস, স্থূলতা-সহ নানা রোগ বাসা বাঁধছে। তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে ছানির সমস্যা দেখা দিতে পারে। পাশাপাশি, দিনের অধিকাংশ সময়ে ল্যাপটপ-স্মার্ট ফোনে কাজ করার জেরেও বাড়ছে ছানির ঝুঁকি। দীর্ঘ দিন স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ ব্যবহারের ফলেও চোখে ছানি হতে পারে। অনেক সময়ে দী র্ঘদিন ধরে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই বিভিন্ন অ্যালার্জির ওষুধ খাওয়া হয়। তার থেকেও এই সমস্যার ঝুঁকি বাড়ে। পাশাপাশি, বিড়ি, সিগারেটের মতো তামাকজাত দ্রব্যের নেশা থাকলেও এই রোগের আশঙ্কা থাকে।
এ প্রসঙ্গে চক্ষু চিকিৎসক দেবাশিস ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আধুনিক খাদ্যাভ্যাসের জেরেই ডায়াবেটিসে ভুগছেন বহু তরুণ-তরুণী। এর জেরে বাড়ছে ছানির সমস্যা। এখন যাঁরা ছানির অস্ত্রোপচার করাতে আসেন, তাঁদের বড় অংশ চল্লিশ থেকে পঞ্চাশের কোঠায়।’’ আর এক চক্ষু চিকিৎসক জ্যোতির্ময় দত্ত বলেন, ‘‘তরুণ প্রজন্মের জীবনযাপন ছানির কারণ হয়ে উঠছে। ভিটামিন সি, ই জাতীয় খাবার অর্থাৎ পেয়ারা, কলা, কমলালেবুর মতো ফল বেশি করে খাওয়া দরকার। শর্করা এবং কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার অর্থাৎ ভাত, রুটি, মিষ্টি জাতীয় খাবার কম খেলে ঝুঁকি এড়ানো যেতে পারে।’’ চক্ষু চিকিৎসক শৌভিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, ‘‘হঠাৎ খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন দ্রুত ছানি পড়ার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। মফস্সল, গ্রাম থেকে আসা মানুষের আচমকা ফাস্ট ফুড জাতীয় খাবারের সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে যাওয়ায় কম বয়সেই ছানি পড়ছে। ’’