মারণ খেলার সচেতনতা নিয়ে অন্য উদ্যোগ স্কুলের

প্রসঙ্গত, ‘ব্লু হোয়েলের’ মতো মারণ গেমগুলিতে আসক্ত হয়ে পড়ছে বহু পড়ুয়া। ইতিমধ্যেই এ রাজ্যের পড়ুয়াদের অনেকের মধ্যে এই আসক্তির খবর পাওয়া গিয়েছে। সেই খবর পাওয়ার পরেই এই স্কুলের কর্তৃপক্ষ সচেতনতা ছড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন। প্রধান শিক্ষিকা সঙ্ঘমিত্রা ভট্টাচার্য জানালেন, স্কুলের পড়ুয়াদের মধ্যে ৯০ শতাংশেরও বেশি সংখ্যালঘু শ্রেণি থেকে আসে।

Advertisement

মধুমিতা দত্ত

শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০০:৫৩
Share:

সচেতনতা: প্রধান শিক্ষিকার সঙ্গে পড়ুয়াদের মায়েরা। নিজস্ব চিত্র

মায়েদের অনেকেরই সেই অর্থে অক্ষর জ্ঞান নেই। কেউ কেউ হয়তো স্কুল যেতে শুরু করেছিলেন, কিন্তু স্কুলের গণ্ডি আর পেরোতে পারেননি। তাঁদেরই তালিম দিয়ে পড়ুয়াদের মধ্যে সাইবার গেম এবং সাইবার অপরাধ নিয়ে সচেতনতা তৈরিতে উদ্যোগী হয়েছে গার্ডেনরিচ নুটবিহারী দাস গার্লস হাইস্কুল কর্তৃপক্ষ।

Advertisement

প্রসঙ্গত, ‘ব্লু হোয়েলের’ মতো মারণ গেমগুলিতে আসক্ত হয়ে পড়ছে বহু পড়ুয়া। ইতিমধ্যেই এ রাজ্যের পড়ুয়াদের অনেকের মধ্যে এই আসক্তির খবর পাওয়া গিয়েছে। সেই খবর পাওয়ার পরেই এই স্কুলের কর্তৃপক্ষ সচেতনতা ছড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন। প্রধান শিক্ষিকা সঙ্ঘমিত্রা ভট্টাচার্য জানালেন, স্কুলের পড়ুয়াদের মধ্যে ৯০ শতাংশেরও বেশি সংখ্যালঘু শ্রেণি থেকে আসে। অধিকাংশই প্রথম প্রজন্মের পড়ুয়া। এদের পারিবারিক পেশা দর্জির কাজ এবং অধিকাংশেরই অবস্থান দারিদ্রসীমার নীচে। সেই পড়ুয়াদের মায়েদের তালিম দিয়ে স্কুলের পড়ুয়াদের সঙ্গে এলাকার অন্যদের মধ্যেও সচেতনতা বাড়াতে উদ্যোগী স্কুল।

স্কুলে রয়েছে ‘মাতা-শিক্ষক সমিতি’। সেই সমিতিতে যে মায়েরা সদস্য, তাঁদের দেওয়া হয়েছে প্রথমিক তালিম। বিভিন্ন স্লাইড দেখিয়ে বেঝানো হয় এই গেমের কুপ্রভাব। তালিম দেওয়া হয় স্কুলের ‘শিশু সংসদ’-এর পড়ুয়াদের। তার পরে তালিম পাওয়া এই মায়েরা এবং পড়ুয়ারা স্কুলের অন্য ছাত্রীদের মায়েদের এবং শিক্ষিকাদের সঙ্গে স্কুলের আশপাশের এলাকায় গিয়ে সচেতনতা শিবিরের আয়োজন করছেন। প্রধানত গার্ডেনরিচ-মেটিয়াবুরুজ এলাকায় এখন পর্যন্ত আটটি এ রকম শিবির করা হয়েছে।

Advertisement

স্থানীয় বাসিন্দা রুকসার বিবির মেয়ে জেনিতা এই স্কুলের সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। রুকসার জানালেন, স্কুলে পড়লেও স্কুলের গণ্ডি তাঁরআর পেরোনো হয়নি। স্মার্ট ফোনের সব কিছু তিনি ভাল করে বুঝতেনও না। স্কুলে থেকেই তালিম দেওয়াহয়। বুঝিয়ে দেওয়া হয় মেয়ের ফোনের কোন বিষয়গুলির দিকে নজর রাখতে হবে।

তালিম পেয়ে এর পরে রুকসারেরা ছড়িয়ে পড়েন এলাকায়। তিনি জানালেন, শুধুই যে এই স্কুলের পড়ুয়া এবং অভিভাবকেরা এই সচেতনতা শিবিরে অংশ নিচ্ছেন তেমন নয়, এলাকার অন্যরাও আসছেন। সেখানেও বিভিন্ন স্লাইড দেখিয়ে বোঝানো হচ্ছে ব্লু হোয়েল গেমের প্রভাবের কথা। এই গেম খেললে ব্যবহারে কী কী পরিবর্তন হতে পারে, তা নিয়ে বিলি করা হচ্ছে লিফলেট। তিনি বলেন, ‘‘আমরা অভিভাবকদের বলেছি সন্তানের আচার-আচরণের দিকে নজর রাখতে। নজর রাখতে তার ফোনের উপরে।’’ এই ধরনের সচেতনতা শিবিরে অংশ নিতে কেমন লাগছে? আর এক অভিভাবক বলেন, ‘‘বিষয়গুলি তো কিছুই জানতাম না। সব কিছু জেনে অন্যকে বোঝাতে পেরে ভাল লাগছে। এমন মারণ জিনিস থেকে আমাদের সন্তানদের বাঁচাতেই হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন