রেড মিট বিলাসের পার্বণ শুরু

নলেনগুড় আর নিউ মার্কেটের জগতের বাইরে এ এক অন্য শীতের সুরভি। কাঁকুড়গাছির অ্যাম্বেট দম্পতি তার খোঁজখবর রাখেন। বেঙ্গালুরু থেকে মেয়ে-জামাইয়ের আবির্ভাব উপলক্ষে শহরের অ্যাংলো ইন্ডিয়ান ঘরে যেন উৎসব।

Advertisement

ঋজু বসু

শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০১৬ ০২:০৫
Share:

নলেনগুড় আর নিউ মার্কেটের জগতের বাইরে এ এক অন্য শীতের সুরভি।

Advertisement

কাঁকুড়গাছির অ্যাম্বেট দম্পতি তার খোঁজখবর রাখেন। বেঙ্গালুরু থেকে মেয়ে-জামাইয়ের আবির্ভাব উপলক্ষে শহরের অ্যাংলো ইন্ডিয়ান ঘরে যেন উৎসব। বুড়ো-বুড়ি এমনিতে রেড মিট এড়িয়ে চলেন। মরাঠি ব্রাহ্মণ জামাইটি আবার ‘নিষিদ্ধ মাংস’ অন্তপ্রাণ। স্যান্ডউইচের পুরে মিটলোফ মজুত রাখতে শ্বশুরশাশুড়ি আগেভাগে ফ্রি স্কুল স্ট্রিটের কালম্যানে হানা দেবেন।

তালতলার ক্রিস্টোফার গোমস ওরফে কেষ্টবাবুরও মনে পড়ে ছেলেবেলায় রোস্টের মাংস মাটির হাঁড়িতে জারিয়ে রেখে মাসখানেক ধরে তরিবত করে তৈরি করতেন বাবা। ‘সল্ট মিট’ নামে পরিচিত সেই মাংসের আস্বাদেই শীতের সকাল আলাদা মাহাত্ম্য পেত।

Advertisement

সাবেক স্কাইরুমের কুক বিজয় হালদারের রান্না পর্ক রাগু-র জন্যও শীত এলেই নাতি সুশান্তের প্রাণ আনচান করে। কিছু সাহেবি হার্ব, প্যাপরিকা গুঁড়োর সঙ্গতে জিরেগন্ধী কাইটায় মাংসের নিজস্ব বিচ্ছুরণ মাখোমাখো মাত্রা জুড়ত। দাদু হেঁসেলে ঢুকলে সে দিন বাড়িসুদ্ধ সক্কলের
ডবল ভাত খাওয়া হয়ে যেত। ডিসেম্বরের কলকাতা অবধারিত এ সব স্মৃতি উস্কে দেয়।

মণি স্কোয়ারের ‘চ্যাপ্টার টু’ রেস্তোরাঁ গড়েই উঠেছে স্কাইরুমের প্রেরণায়। সেখানে বিজয়বাবুর রেসিপি নিয়েই মাথা খাটিয়েছেন দুই শেফ সিতিকণ্ঠ দত্ত ও বিজয়বাবুর নাতি সুশান্ত। রেস্তোরাঁর টেবিলে অবশ্য পর্কের সঙ্গতে ভাত নেই। বদলে ইতালিয় ফেনা ভাত রিসোতো। হাল্কা চর্বিমেশা মাংসের কাইয়ের অভিঘাতে যার শরীরে এক আকাশ তারা জ্বলে ওঠে। চিজ বেক্‌ন ঠাসা নরম বিফের চাকতিও রেড ওয়াইন সসের ছোঁয়ায় জমকালো। এই শীত জুড়ে কলকাতার গত জন্মের স্মৃতিতে টান।

বড়দিনের লাঞ্চে টার্কি বা ডাকের রোস্টও মোটেই সাবেক অভিজাত ক্লাব বা সেকেলে রেস্তোরাঁর একচেটিয়া নয়। আজকের কলকাতায় বড়দিনের পার্বণটা গোটা ডিসেম্বরময়। সে ভাবে শীত এখনও না জমতেই জমে উঠছে নানা কিসিমের মাংসের আমেজ। সিরাজ-আমিনিয়ায় সাত-সকালে ধূমায়িত মটন পায়া বা জাকারিয়া স্ট্রিটের প্রভাতী নিহারির মতো এ সব রেড মিট বিলাসের জন্য শীতকালটাই মোক্ষম। পার্ক স্ট্রিটের অলিপাব কর্তৃপক্ষের দাবি, সসেজ-বেক্‌ন ভরপুর গ্রিল্‌ড মাংস কিংবা শাতোব্রিয়াঁ স্টেকের মতো জনপ্রিয় পদের চাহিদা এ মরসুমে ঢের বেড়ে যায়। কে কে’জ ফিউশন-কারি ক্লাবে প্রদীপ রোজারিওকেও ডিসেম্বর পড়তেই সর্ষের তেলে ভাজা বাঙালি খৃষ্টান ঘরানার পর্ক সসেজের বন্দোবস্ত করতে হয়। এই পথ ধরেই ‘চ্যাপ্টার টু’ ইতিমধ্যে টার্কি, বিফ, ডাক, পর্ক, ল্যাম্বময়।

শীত মানে, স্বাস্থ্য বিধিতে ছাড় দিয়ে ভোজ-বিলাস। রেড মিটের আমেজে বচ্ছরকার শাপমুক্তি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন