Skin care

রুক্ষ ঋতুর রূপ-রুটিন

শীতে সব ধরনের ত্বকের চাই বাড়তি যত্ন। সেই প্রয়োজন মেটাতে ক্লেনজ়িং, টোনিং, ময়শ্চারাইজ়িং-ও হবে একটু আলাদা।শীত এলেই দেখা যায়, অধিকাংশ মহিলাই ত্বক নিয়ে বেশ ঝামেলায় পড়েছেন। গালে লাল আভা তো ফোটেইনি, বরং চামড়া খসখসে হয়ে গিয়েছে।

Advertisement

চিরশ্রী মজুমদার 

শ্রীনগর ও বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০২১ ০০:২৫
Share:

যাঁরা সাজতে খুব ভালবাসেন, সারা বছর ধরে এই শীতের জন্য কতই না অপেক্ষা করে থাকেন। ভাবেন, কোট-জ্যাকেটে খুব ফ্যাশন করা যাবে। আর ঠান্ডা পড়লেই গালে আসবে লালচে আভা। কিন্তু শীত এলেই দেখা যায়, অধিকাংশ মহিলাই ত্বক নিয়ে বেশ ঝামেলায় পড়েছেন। গালে লাল আভা তো ফোটেইনি, বরং চামড়া খসখসে হয়ে গিয়েছে। রঙিন গরম পোশাকের মাঝে রুক্ষ, শুষ্ক ত্বক দেখা গেলে তো গোটা সাজটাই মাটি। ফলে মন খারাপ। এই ঋতুতে শুষ্ক আবহাওয়ায় ত্বকের আর্দ্রতা দ্রুত খোয়া যায়। তাকে রুখে দেওয়া ও ত্বকে অতিরিক্ত ময়শ্চারাইজ়ার ধরে রাখাই এই সময়ের ত্বকচর্চার গোড়ার কথা। তার জন্য ত্বকের প্রাথমিক পরিচর্যার রুটিন অর্থাৎ ক্লেনজ়িং, টোনিং, ময়শ্চারাইজ়িংয়ে (সিটিএম)-এ কিছু শীতকালীন রদবদল আনতে হবে। তা করতে হবে ত্বকের ধরন বুঝে।

Advertisement

পরিচর্যার রকমফের

তৈলাক্ত ত্বকের জন্য: শীতের সময় এই ধরনের ত্বক খুব রুক্ষ হয়ে না পড়লেও তাতে উইন্টার পিম্পল দেখা দেয়। ত্বকের অংশবিশেষ মসৃণতা হারায়। ত্বকে ভীষণ ময়লা জমে। এই ধরনের ত্বক যাঁদের, তাঁরা অন্য মরসুমের মতোই অয়েল ফ্রি বা অ্যাকনেরোধক ফেসওয়াশ ব্যবহার করতে পারেন। কিংবা চারকোল দেওয়া ডিটক্স ক্লেনজ়ার। এগুলি ত্বকের কোষ থেকে ময়লা বার করতে সক্ষম। এর পর পিউরিফায়িং টোনার ব্যবহার করুন। তৈলাক্ত ত্বকের ক্ষেত্রেও কিন্তু ময়শ্চারাইজ়ার বাদ দেবেন না। তার জন্য অ্যালো ভেরা সমৃদ্ধ ময়শ্চারাইজ়িং ক্রিম বেছে নেওয়া ভাল। ত্বকের আর্দ্রতা ধরা থাকবে, আবার ব্রণ, র‌্যাশের ঝামেলা থাকবে না। ত্বক তৈলাক্তও দেখাবে না।

Advertisement

কম্বিনেশন বা সংবেদনশীল ত্বকের জন্য: এই ধরনের ত্বকে টি-জ়োন বেশি তৈলাক্ত হয়, চিবুক অল্প তৈলাক্ত আর কপাল শুষ্ক প্রকৃতির। এই ত্বকের পরিচর্যা করতে হয় যত্ন করে। প্রসাধনী নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা করা চলে না। এই ধরনের ত্বকের জন্য ওয়াটারপ্রুফ ফেসওয়াশ বেছে নিন, যা পরিষ্কার করবে আবার ত্বকের আর্দ্রতাও ধরে রাখবে। টোনারের বদলে সেনসিটিভ ত্বকের উপযুক্ত স্কিন টনিক বা মিস্ট ব্যবহার করতে পারেন। আর অনেকক্ষণ ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখবে, এমন ময়শ্চারাইজ়ার বাছতে হবে।

শুষ্ক ত্বকের রুটিন: এই মরসুমে এই ধরনের ত্বক নিয়ে বেশি চিন্তা থাকে। শীতের সময়ে শুষ্ক ত্বকে এমন কোনও ফেসওয়াশ ব্যবহার করবেন না যা, ফেনা তৈরি করে। এগুলি আর্দ্রতা টেনে নিয়ে ত্বক আরও শুষ্ক করে তোলে। পরিবর্তে ক্রিম বেসড ক্লেনজ়ার বেছে নিন। টোনার স্প্রে করবেন না, তুলোয় করে ত্বকে লাগিয়ে রাখুন। জেল স্টিক টোনারও ব্যবহার করা যায়। অতিরিক্ত শুষ্ক ত্বকের ক্ষেত্রে ত্বকের আর্দ্রতার পরত (ময়শ্চার ব্যারিয়ার) খুব তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যায়। এখনকার আবহাওয়ায় সেই ক্ষতির সম্ভাবনা আরও বেশি। এই ধরনের ত্বকের পক্ষে সবচেয়ে ভাল ময়শ্চারাইজ়িং ক্রিম। যখনই ত্বক শুষ্ক হয়ে যাবে, তখনই ক্রিম বেসড ময়শ্চারাইজ়ার লাগাবেন।

স্বাভাবিক ত্বকের জন্য: পরিচর্যায় অবহেলা করলে স্বাভাবিক ত্বকও কিন্তু চিরকাল সুন্দর আর সমস্যামুক্ত থাকবে না। বিশেষ করে শীতে এই ত্বকেরও অতিরিক্ত দেখভাল প্রয়োজন। এই সময়ের জন্য জেল ক্লেনজ়ার বেছে নিন। এটি আলতো স্পর্শে ত্বকের উপরিভাগের তেল, ময়লা বা মেকআপ তুলে আনে। শীতে কমলার নির্যাস বা লেমন জুস দেওয়া প্রাকৃতিক টোনার ব্যবহার করুন। আর শেষে হালকা ময়শ্চারাইজ়িং ক্রিম।

এই যত্ন দিনে কত বার?

জুন টমকিনসের ক্রিয়েটিভ হেড প্রিসিলা কর্নার বললেন, ‘‘এখন অনেকেই বাড়ি থেকে কাজ করছেন। রোজ রাস্তায় বেরোতেও হচ্ছে না। সে ক্ষেত্রে ক্লিনিং, টোনিং, ময়শ্চারাইজ়িংয়ের এই রুটিন দিনে দু’বার মেনে চললেই হবে। এ সময়ে ফেসওয়াশের আদর্শ বিকল্প হল ক্লেনজ়িং মিল্ক। যদি মেকআপ ওঠানোর দরকার না থাকে, তবে রাতে শোয়ার আগের রূপচর্চা রুটিনের প্রথম ধাপে ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধোয়ার বদলে ক্লেনজ়িং মিল্ক ব্যবহার করুন। টোনার এমনিতেই তৈলাক্ত ভাব দূর করে। তাই সব ধরনের ত্বকেই ক্লেনজ়িং মিল্ক চলবে। সকালে উঠে মুখ ধুয়ে নিন। তার পর টোনিং, ময়শ্চারাইজ়িং। তবে এই রুটিনে তিনটি ধাপের কোনওটি বাদ দিলে চলবে না।’’

ত্বক যে রকমই হোক, স্নানের সময়ে নরম ফেস ক্লেনজ়ার ব্যবহার করুন। তোয়ালে দিয়ে জলটা শুষে নিন, কিন্তু একেবারে মুছে ফেলবেন না। সারা শরীরে লোশন লাগান আর মুখে মেখে নিন ময়শ্চারাইজ়িং ক্রিম।

মুখ ধোয়ার সময়ে খুব বেশি গরম জল ব্যবহার করবেন না। শীতে অ্যাস্ট্রিনজেন্ট ব্যবহারও ঠিক নয়। এতে ত্বকের ময়শ্চার দ্রুত হারিয়ে যায়। এই রূপ-রুটিন মেনে চলার সঙ্গে পর্যাপ্ত পরিমাণ জলও খেতে হবে। মরসুমি আনাজ, ফল খেতে হবে। শরীরের ভিতরে পুষ্টি ও জলের পরিমাণ যথাযথ থাকলে ত্বকেও আর্দ্রতার অভাব ঘটবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন