আশ্চর্য সমাপতন! যে হাসপাতালের গবেষণাগারে বসে ম্যালেরিয়া নিয়ে কাজ করে নোবেল পেয়েছিলেন রোনাল্ড রস, সেখানে ওই রোগের জীবাণুবাহিত মশার লার্ভা মিলল তাঁরই জন্মদিনে। বৃহস্পতিবার রসের জন্মদিন উপলক্ষে বিশেষ মশা নিধন অভিযান চালিয়েছিল পুরসভা। আর তাতেই এসএসকেএমের বেহাল দশা ফুটে ওঠে।
হাসপাতাল চত্বরে ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গি রোগের জীবাণুবাহিত মশার লার্ভা মেলায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পুর-কর্তৃপক্ষ। কলকাতা পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের মেয়র পারিষদ অতীন ঘোষ বলেন, ‘‘শহরের বিভিন্ন হাসপাতাল-সহ প্রায় সমস্ত এলাকাতেই সারা বছর পুরসভা মশার লার্ভা মারার কাজ করে। দিন দশেক আগেও পুরসভা এই হাসপাতালে রুটিন মাফিক মশার লার্ভা মারা হয়েছে। তার পরেও এ দিন যা দেখা গেল, তা যথেষ্ট উদ্বেগের।’’
কী দেখা গিয়েছে এসএসকেএমে? পুরকর্তারা জানিয়েছেন, এই হাসপাতালের নার্সিং হস্টেল চত্বরে ফেলে দেওয়া প্লাস্টিকের গ্লাস এবং চায়ের ভাঁড়ের মধ্যে ‘এডিস ইজিপ্টাই’ এবং ‘অ্যানাফেলিস স্টিফেনসাই’ মশার লার্ভা মিলেছে। এ ছাড়াও হাসপাতালের মণি ছেত্রী বিল্ডিং এবং অ্যাকাডেমিক বিল্ডিংয়ের আশপাশে এই ধরনের লার্ভার সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। বহু জায়গাতেই জঞ্জাল জমা ছিল। জমা জলও দেখা গিয়েছে একাধিক চত্বরে। পুরসভার এই অভিযানের পরে দৃশ্যতই অপ্রস্তুত ছিলেন এসএসকেএমের কর্তারা। সুপার মানস সরকার এ নিয়ে সরাসরি কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে হাসপাতালের এক অন্যতম শীর্ষ কর্তার দাবি, ‘‘পুরসভা মশার লার্ভা মারার কাজ করে। আমরাও নিজেদের মতো করে হাসপাতাল পরিষ্কার রাখার চেষ্টা করি। এ দিন হয়তো কোনও ভাবে লার্ভা পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু সেটাই রোজকার ছবি নয়।’’
এ দিন পুরসভার অভিযানের পরে মেয়র পারিষদ, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং পূর্ত দফতরের কর্তাদের বৈঠক শুরু হয়। পুরকর্তারা হাসপাতাল চত্বর পরিচ্ছন্ন রাখার ব্যাপারে কর্তৃপক্ষকে আরও সচেতন হওয়ার কথা বলেন। এই ক্ষেত্রে সচেতনতা এবং নজরদারির কি খামতি আছে? অতীনবাবু বলেন, ‘‘পুরসভা নির্দিষ্ট সময় অন্তর নজরদারি চালায়। মশার আঁতুড় ঘর ধ্বংস করে। কিন্তু তার পরেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও কর্মীদের কিছু দায়িত্ব থেকে যায়। সেই কারণেই আমরা এখানে নার্সিং হস্টেলের ছাত্রী ও হাসপাতালের কর্মী আবাসনের বাসিন্দাদের নিয়ে সচেতনতামূলক শিবির করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’’
পুরসভা সূত্রে খবর, এই বছর শহরের যে বাড়িগুলিতে উদ্বেগজনক হারে মশার লার্ভা পাওয়া গিয়েছে, সেই সব বাড়ির মালিককে চিঠি পাঠানো হয়েছে। অতীনবাবু জানান, এ দিনের বিশেষ অভিযানে তিনি নিজে সামিল ছিলেন। পুরসভার অন্যান্য মেয়র পারিষদকেও এ দিন মশার লার্ভা নিধনে বিশেষ অভিযানে শহরের বিভিন্ন জায়গায় সামিল থাকার আহ্বান জানিয়েছিলেন পুরকর্তৃপক্ষ।