এসএসকেএম

অনুপস্থিত ডাক্তারের নামেই দেড় বছর আউটডোর টিকিট

দেড় বছরের বেশি হয়ে গিয়েছে তিনি এসএসকেএম হাসপাতাল থেকে বদলি হয়েছেন, গত প্রায় সাড়ে ছ’মাস হল তিনি এ রাজ্যেও নেই। অথচ সেই চিকিৎসক অরুণ সিংহের নামে এখনও এসএসকেএম-এ নিওনেটোলজি আউটডোরের টিকিট হয়ে চলেছে! কর্তৃপক্ষ যদিও দাবি করেছেন এটি অনিচ্ছাকৃত ভুল। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, অরুণ সিংহের নামের ইউনিটে ভর্তি হওয়া শিশুরোগীদের ভালমন্দ কিছু ঘটলে তার জন্য খাতায়কলমে দায়ী থাকবে কে? তখন কি অরুণ সিংহকেই সামনে দাঁড় করানো হবে?

Advertisement

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০১৪ ০২:৫১
Share:

দেড় বছরের বেশি হয়ে গিয়েছে তিনি এসএসকেএম হাসপাতাল থেকে বদলি হয়েছেন, গত প্রায় সাড়ে ছ’মাস হল তিনি এ রাজ্যেও নেই। অথচ সেই চিকিৎসক অরুণ সিংহের নামে এখনও এসএসকেএম-এ নিওনেটোলজি আউটডোরের টিকিট হয়ে চলেছে! কর্তৃপক্ষ যদিও দাবি করেছেন এটি অনিচ্ছাকৃত ভুল। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, অরুণ সিংহের নামের ইউনিটে ভর্তি হওয়া শিশুরোগীদের ভালমন্দ কিছু ঘটলে তার জন্য খাতায়কলমে দায়ী থাকবে কে? তখন কি অরুণ সিংহকেই সামনে দাঁড় করানো হবে?

Advertisement

স্বাস্থ্য দফতরের অন্দরে এমন অভিযোগও উঠেছে যে, অরুণ সিংহকে বিপাকে ফেলতে ইচ্ছা করেই তাঁর নাম টিকিট থেকে সরানো হয়নি। এসএসকেএম কর্তৃপক্ষ অবশ্য একে ‘নিছক রটনা’ বলেছেন। কিন্তু ‘মেডিক্যাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া’ (এমসিআই)-র সদস্যরাই জানিয়েছেন, হাসপাতালে নিযুক্ত নন এমন চিকিৎসকের নামে সেই হাসপাতালে আউটডোর টিকিট হওয়াটা ‘মেডিকো-লিগাল’ দিক থেকে মারাত্মক। এর জন্য নিওনেটোলজি বিভাগের অনুমোদন কাঠগড়ায় উঠে যেতে পারে। যাঁকে নিয়ে এত কিছু, সেই অরুণ সিংহ অবশ্য টেলিফোনে বলেন, “আমাকে কিছু বলতে অনুরোধ করবেন না।”

নিওনেটোলজিস্ট অরুণ সিংহ রাজ্য সরকারের অনুমতি ছাড়াই দীর্ঘদিন কাজে অনুপস্থিত। এর জন্য তাঁর বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য দফতর বিভাগীয় তদন্ত শুরু করেছে। বন্ধ রয়েছে তাঁর বেতনও। ২০১২ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত এসএসকেএম হাসপাতালের নিওনেটোলজি বিভাগের প্রধানের দায়িত্বে ছিলেন অরুণবাবু। তার পরে তাঁকে সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজে বদলি করা হয়। সে সময়ে তিনি চাকরিতে ইস্তফা দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আবেদন গ্রাহ্য হয়নি। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, ২০১৩ সালের ৩ ডিসেম্বর অরুণবাবু সাগর দত্ত মেডিক্যালে কিছু কাগজপত্র জমা দিয়ে জানান, ‘রাষ্ট্রীয় বাল সুরক্ষা কার্যক্রম’-এর উপদেষ্টা হিসেবে দিল্লি যাচ্ছেন তিনি। রাজ্য তাঁকে যাওয়ার অনুমতি না দিলেও তিনি চলে যান এবং ৩ ডিসেম্বরের পর এক দিনও তিনি এ রাজ্যে কাজ করেননি।

Advertisement

অথচ সেই চিকিৎসকের নামে এখনও এসএসকেএমের নিওনেটোলজি বিভাগে আউটডোর টিকিট হয়ে চলেছে। তাঁর নামের ইউনিটেই চলছে রোগী ভর্তি এবং রেফার। মেডিকো-লিগাল বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি গর্হিত অপরাধ। এতে রোগী ও তাঁর বাড়ির লোককে ঠকানো হচ্ছে। তাঁদের অনেকেই এটা ভাবতে পারেন যে রোগী অরুণ সিংহের তত্ত্বাবধানে থাকবেন। অথচ তা আদপেই সত্যি নয়। দ্বিতীয়ত, যে ইউনিট হেডের আওতায় রোগী ভর্তি হয়, কী চিকিৎসা হবে তা ঠিক করার দায়িত্ব তাঁর। চিকিৎসায় গাফিলতি হলে তাঁর ও তাঁর ইউনিটের বিরুদ্ধেই অভিযোগ হবে।

এ ক্ষেত্রে অরুণ সিংহের নাম লেখা থাকলেও আসলে কে তাঁদের রোগীর দায়িত্বে আছেন, তা জানতে পারছেন না পরিজনেরা। যদিও নিওনেটোলজির বর্তমান প্রধান সুচন্দ্রা মুখোপাধ্যায় দাবি করেছেন, তিনিই ইউনিটটি দেখাশোনা করেন এবং রোগীর চিকিৎসার ব্যাপারে সব সিদ্ধান্ত নেন, তবে তার কোনও লিখিত প্রমাণ নেই। সাধারণ মানুষ জানতে পারছেন না আদতে কে ওই ইউনিটে ভর্তি তাঁদের শিশুর অস্ত্রোপচার বা রেফারের সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। প্রশ্ন উঠেছে, চিকিৎসায় কোনও গাফিলতি হচ্ছে মনে করলে রোগীর পরিজনেরা কি অরুণ সিংহের নামেই অভিযোগ দায়ের করবেন? কেস আদালতে গেলে আদালতও কি অরুণ সিংহকেই ধরবে?

এসএসকেএমের অধ্যক্ষ প্রদীপ মিত্র বলেন, “বিষয়টিকে এত জটিল করা ঠিক হবে না। নিছক কর্মীদের গড়িমসির জন্য টিকিটে নাম পরিবর্তিত হয়নি। আমি কয়েক মাস আগে ভুলটা ধরেছিলাম। যাঁরা কম্পিউটারে টিকিট করেন, তাঁদের শুধরে নিতে বলেছিলাম। তাঁরা করেননি। আমি তাঁদের জবাবদিহি করতে বলেছি আর নাম বদলাতে নির্দেশ দিয়েছি।” এমসিআই-র সদস্যরা অবশ্য বলছেন, এটি চিকিৎসা নীতির বিরোধী। এমসিআই-এর এথিক্যাল কমিটির সদস্য সুদীপ্ত রায়ের কথায়, “আউটডোর টিকিট প্রেসক্রিপশনের সমতুল। এক জনের নামে প্রেসক্রিপশন হচ্ছে আর রোগী দেখছেন আর এক জন, এটা বেআইনি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন