কলকাতাতেই আছে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কলেরা অ্যান্ড এন্টেরিক ডিজিজেস (নাইসেড)। কিন্তু এনসেফ্যালাইটিসের জীবাণু শনাক্ত করা বা সচেতনতা বাড়ানোর কাজে প্রথমে ওই কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থার কোনও সাহায্য নেয়নি রাজ্য সরকার। এ বার ঠেলায় পড়ে উত্তরবঙ্গে নাইসেডের শাখা চালু করতে কোমর বাঁধছে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর।
রবিবার উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পরিদর্শনের পরে সেখানে নাইসেডের শাখা খোলার প্রয়োজনের কথা জানালেন স্বাস্থ্য দফতর নিযুক্ত আট সদস্যের পরামর্শদাতা দলের প্রধান সুব্রত মৈত্র। তিনি জানান, উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে নাইসেডের শাখা খোলার ব্যাপারে ইতিমধ্যেই ওই কেন্দ্রীয় সংস্থার কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। তাঁর দাবি, “নাইসেডের কর্তারাও এখানে একটি কেন্দ্র খুলতে চাইছেন। ওঁদের সঙ্গে আমার কথাও হয়েছে।”
নাইসেডের অধিকর্তা শেখর চক্রবর্তী জানান, বছর দুয়েক আগেই এ বিষয়ে কথাবার্তা শুরু হয়েছিল। এ ব্যাপারে তিনি উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব এবং শিলিগুড়ির বিধায়ক রুদ্রনাথ ভট্টাচার্যের সঙ্গেও কথা বলেছিলেন। শেখরবাবু বলেন, “আমরা ওখানে একটা কেন্দ্র গড়তে চাই। এ ব্যাপারে রাজ্য সরকার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানালে আমরা বিষয়টি ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসাচর্র্ (আইসিএমআর)-কে জানাব। ওরাই কেন্দ্রটি গড়ে তুলবে।”
এ দিন শিলিগুড়িতে সুব্রতবাবুর নেতৃত্বাধীন আট সদস্যের দলের সঙ্গে উত্তরবঙ্গের স্বাস্থ্যকর্তাদের বৈঠক হয়। সেখানে ঠিক হয়েছে, উত্তরবঙ্গে নাইসেডের শাখা খোলার জন্য স্বাস্থ্য অধিকর্তার তরফে প্রস্তাব দেওয়া হবে। সুব্রতবাবু বলেন, “বিষয়টি যাতে দ্রুত কার্যকর হয়, আমরা সেই চেষ্টা চালাব। এখানে নাইসেডের শাখা চালু হলে এই অঞ্চলে সংশ্লিষ্ট রোগ নির্ণয়, সংক্রমণ পরিস্থিতির খতিয়ান নেওয়া, রোগ প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণের কাজ ঠিক ভাবে করা সম্ভব হবে।” প্রস্তাবিত শাখা কেন্দ্রে গবেষণাগার থাকবে। সেখানে এনসেফ্যালাইটিস, ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গি, অপুষ্টি সংক্রান্ত রোগ নিয়ে বছরভরই পরীক্ষানিরীক্ষা চালানো হবে বলে জানান সুব্রতবাবু।
উত্তরবঙ্গে এ বছর গোড়া থেকে এনসেফ্যালাইটিস প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে গাফিলতি ছিল কি না, উপদেষ্টা দলের প্রধান সুব্রতবাবু সেই প্রশ্নটি অবশ্য এড়িয়ে গিয়েছেন। তিনি বলেন, “এ বছর কোথায় কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, স্বাস্থ্য অধিকর্তা সে-সব বিষয়ে যা বলার বলেছেন। আমার কিছু বলার নেই।” কলকাতার বেলেঘাটায় নাইসেডের দফতর রয়েছে। উত্তরবঙ্গে এনসেফ্যালাইটিস মোকাবিলায় তাদের সাহায্য নেওয়া হয়েছে কি? সুব্রতবাবু বলেন, “ওই বিষয়ে কিছু বলতে আসিনি। স্বাস্থ্য পরিকাঠামো উন্নয়নের ব্যাপারে পরিদর্শন চলছে। ওই ব্যাপারে যা বলার, স্বাস্থ্য অধিকর্তাই বলবেন।”
সুব্রতবাবু বিষয়টি এড়িয়ে গেলেও এটা আর চাপা নেই যে, উত্তরবঙ্গে এনসেফ্যালাইটিসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজ্য সরকার কলকাতার নাইসেডের কাছে কোনও সাহায্যই চায়নি। রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর এখন উত্তরবঙ্গে নাইসেডের কেন্দ্র খুলতে উদ্যোগী হয়েছে। উত্তরবঙ্গে ওই মারণ রোগের প্রকোপ ছড়ানোর পরে তারা দিল্লি ও পুণের বিজ্ঞানীদের ডেকে এনেছে। কিন্তু হাতের কাছে নাইসেড থাকতেও তাদের কাজে লাগানো হয়নি। রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে পরিকাঠামোগত ব্যর্থতার পরে এখন নাইসেডের দ্বারস্থ হয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জনবাবু বলেন, “নাইসেডের কাছ থেকে কিট নিয়েছি আমরা। দক্ষিণবঙ্গে ওই রোগ ছড়ালে আরও বেশি সাহায্য লাগবে নাইসেডের।”