জ্বরে মৃত আরও ৩

বাড়তি টিকার আর্জি কেন্দ্রকে

সংক্রমণ ঘটছে বারবার। কিন্তু ফি-বছরের সেই রোগ-নামচা থেকে রাজ্য সরকার শিক্ষা নিয়েছে, এমন কোনও প্রমাণ এখনও পর্যন্ত মেলেনি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০১৫ ০৩:৫৯
Share:

উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে খিঁচুনি জ্বর নিয়ে ভর্তি রোগীদের চিকিৎসা চলছে বিশেষ ওয়ার্ডে। ছবি: সন্দীপ পাল।

সংক্রমণ ঘটছে বারবার। কিন্তু ফি-বছরের সেই রোগ-নামচা থেকে রাজ্য সরকার শিক্ষা নিয়েছে, এমন কোনও প্রমাণ এখনও পর্যন্ত মেলেনি।

Advertisement

গত বছর উত্তরবঙ্গে জাপানি এনসেফ্যালাইটিস (জেই) এবং অ্যাকিউট এনসেফ্যালাইটিস সিনড্রোম (এইএস) দাপট দেখে কেন্দ্রীয় দল নানা ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিল। ব্যাপক প্রাণহানির পরে রাজ্যও জানিয়েছিল, পরিকাঠামোর উন্নয়ন ঘটিয়ে টিকা-সহ নানা ভাবে রোগ প্রতিরোধের বন্দোবস্ত হবে। তার আগের দু’বছরও ওই খিঁচুনি-জ্বর ছড়িয়ে পড়েছিল। কিন্তু এ বারেও রোগ ছড়িয়ে পড়ার পরে দেখা যাচ্ছে, এনসেফ্যালাইটিস-প্রবণ উত্তরবঙ্গের ৫৪টি ব্লকের মধ্যে মাত্র ন’টি ব্লকের মধ্যেই টিকাকরণ সীমাবদ্ধ। গত তিন বছরে কোন কোন ব্লকে জেই, এইএস আক্রান্ত রোগী পাওয়া গিয়েছে, তার তালিকা করে টিকা কর্মসূচি চালু করতে এত দিনে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের কাছে দরবার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য।

জেই পরিস্থিতি নিয়ে বৃহস্পতিবার উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে বৈঠকের পরে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, ‘‘কোন কোন ব্লকে জেই এবং এইএসের কত রোগী রয়েছেন, তার তালিকা তৈরি করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে পেশ করা হবে। মুখ্যমন্ত্রীর মাধ্যমেই আরও টিকার জন্য তদ্বির-তদারক করা হবে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের কাছে।’’

Advertisement

রাজ্য সরকার কি তিন বছর আগেই এই ব্যবস্থা নিতে পারত না?

রা কা়ড়ছেন না স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা। তিন বছরে ৩৮০ জনেরও বেশি মানুষ এনসেফ্যালাইটিসে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন। এ বছরও এখনও পর্যন্ত ওই খিঁচুনি-জ্বরে ৩৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। তার মধ্যে অন্তত ২২ জন জেই-তে আক্রান্ত। চলতি মাসে এ-পর্যন্ত ২৪ জন মারা গিয়েছেন। এ দিনও তিন জনের মৃত্যু হয়েছে উত্তরবঙ্গে। তাঁদের মধ্যে দু’জন এইএসে আক্রান্ত। তৃতীয় জনের দেহরসে জেই-র জীবাণু মিলেছে।

এলসেফ্যলাইইটিসের উপসর্গ নিয়ে এ দিন ১৬ জন রোগী ভর্তি ছিলেন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। তাঁদের মধ্যে পাঁচ জন জেই-তে আক্রান্ত। ১১ জন এইএসে। খিঁচুনি-জ্বর নিয়ে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় প্রতিদিনই দু’তিন জন রোগী ভর্তি হচ্ছেন ওই হাসপাতালে। চিকিৎসকদের একাংশও জানান, রোগ সংক্রমণের পরে কোনও ওষুধ কাজে লাগে না। উপসর্গ দেখে আনুষঙ্গিক চিকিৎসা করা হয় মাত্র। তাই প্রতিষেধক দিয়ে রোগ ঠেকানো ছাড়া উপায় নেই।

প্রথম দফায় উত্তরবঙ্গের আটটি ব্লকে ১০ লক্ষ বাসিন্দাকে টিকাকরণ কর্মসূচির আওতায় আনা হয়েছিল। তার মধ্যে আছে আলিপুরদুয়ার ১-২, কালচিনি, ফালাকাটা, মালবাজার, নাগরাকাটা, নকশালবাড়ি ও মাটিগাড়া ব্লক। তাতেও মাটিগাড়া-নকশালবাড়ি ব্লকে প্রায় ১৫ হাজার প্রতিষেধক কম পড়ে। কোচবিহার জেলায় সবে এ বছর ওই টিকাকরণ কর্মসূচি শুরু হয়েছে বলে স্বাস্থ্য দফতরের খবর। ১৪ জুলাই টিকাকরণ শুরু হয়েছে ফাঁসিদেওয়ায়। দার্জিলিং জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের দফতর খড়িবাড়ি ব্লকের বাসিন্দাদের প্রতিষেধক দিতে ৭০ হাজার টিকা চায়। উত্তর দিনাজপুর জেলায় এ বছর জেই বা এইএসের সংক্রমণ বেশি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন