ভার্চুয়াল দুনিয়ায় মনের রসদ খুঁজছেন বয়স্করাও

ধূমপান বা সুরা নয়, তাঁরা বুঁদ ‘জাল’-এর নেশায়। তার ঘোরে রাতে ঘুম আসে না। স্মার্ট ফোন প্রায় সব সময়েই ‘চেক’ করতে না পারলে অস্বস্তি।

Advertisement

তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৩:০৮
Share:

ধূমপান বা সুরা নয়, তাঁরা বুঁদ ‘জাল’-এর নেশায়। তার ঘোরে রাতে ঘুম আসে না। স্মার্ট ফোন প্রায় সব সময়েই ‘চেক’ করতে না পারলে অস্বস্তি। শেয়ার করা ভিডিও বা ছবিতে লাইকের সংখ্যা শ’খানেক না ছা়ড়ালে মুখ ভার হয়ে যায়। এঁরা সকলেই বিনোদনের রসদ খুঁজছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়।

Advertisement

সদ্য কলেজে পা দেওয়া তরুণ-তরুণী নন। এঁদের সকলেরই বয়স ৭০ বা তার বেশি।

এক বেসরকারি সংস্থার সমীক্ষা বলছে, এ শহরের প্রবীণেরাও ক্রমে আসক্ত হচ্ছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। গড়ে দশ জন অবসরপ্রাপ্তদের মধ্যে ছ’জন এতে সক্রিয়। অন্তত ৮০ শতাংশ প্রবীণ কাজের জন্য যত না ইন্টারনেট ব্যবহার করেন, তার বেশি সময় কাটান সোশ্যাল মিডিয়ায়। কুড়ির কোঠায় পা দেওয়া বা ৩০ ছুঁই ছুঁই তরুণ-তরুণীরা সোশ্যাল মিডিয়ায় সময় কাটান গড়ে ২ ঘণ্টা। সেখানে ৬০ বছরের অধিক বয়সীরা কাটাচ্ছেন প্রায় ৩-৪ ঘণ্টা।

Advertisement

জেরেন্টোলজিস্টদের একাংশের মতে, সিনেমা, নাটক বা বই নিয়ে আলোচনা হোক কিংবা নিছকই গসিপ, বিনোদনের নানা উপকরণ পেতে একটা বড় সময় প্রবীণেরা কাটাচ্ছেন ভার্চুয়াল দুনিয়ায়। চ্যাট করার পাশাপাশি দেখছেন তাঁদের সময়কার বিভিন্ন সিনেমাও।

জনপ্রিয় একটি সোশ্যাল মিডিয়ায় সর্বদাই ‘অন’ থাকেন অবসরপ্রাপ্ত কলেজ শিক্ষক অমর্ত্য সরকার। ৭২ বছরের অমর্ত্যবাবু জানালেন, রাত জেগে বই পড়ার অভ্যাস তাঁর ছিল। সেই বরাদ্দে অনেকটাই ভাগ বসিয়েছে নেট দুনিয়া। কবিতা লেখার শখ তাঁর বরাবরই, কিন্তু ছাপানোর সুযোগ পাননি। এখন সোশ্যাল
মিডিয়ার কল্যাণে তিনি কবিতা লিখে শেয়ার করেন।

বালিগঞ্জের বছর ৬৫-র রুমিতা ঠাকুর আবার সোশ্যাল মিডিয়ায় যোগ দেওয়ার আগ্রহ পেয়েছেন রান্না আর ফ্যাশনের গসিপ করার সুযোগ পাওয়ায়। তিনি মনে করছেন, এই দুনিয়ায় সব বয়সীর সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করা যায়।

জেরেন্টোলজিস্ট ইন্দ্রাণী চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘বয়স হলেও মানুষ একাকিত্ব থেকে বেরোতে আনন্দ খোঁজে।
তাই আধুনিক সমাজেও প্রবীণেরা সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয়।’’ মনোবিদ নীলাঞ্জনা সান্যাল আবার বলছেন, ‘‘শারীরিক সুখের বাইরে এখন অধিকাংশ মানুষ কিছু ভাবতে পারেন না। এর জেরে প্রবীণ বয়সেও সোশ্যাল মিডিয়ায় বিনোদন খোঁজার চেষ্টা চলছে। কিন্তু সর্বদা মস্তিষ্কের এই অতি সক্রিয়তা শরীর-মনকে আরও ক্লান্ত করে। সেই দিকটাও মনে রাখতে হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন