প্রতীকী চিত্র। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
যে কোনও ফোনেরই নির্দিষ্ট আয়ুষ্কাল রয়েছে। নতুন ফোন কেনার আগে পুরনো ফোনটিকে আমরা সাধারণত ফেলে দিই বা কোনও সংস্থাকে বিক্রি করে দিই। পুরনো ফোন বিক্রির সময় ফোন থেকে যাবতীয় ব্যক্তিগত তথ্য মুছে ফেলাটাই রীতি। তার জন্য ফোনটিকে ‘ফ্যাক্টরি রিসেট’ করতে হয়। কিন্তু নিরাপদ থাকতে এই ভাবে ফোন ‘খালি’ করার পদ্ধতিও বর্তমান সময়ে যথেষ্ট নয় বলেই জানাচ্ছেন ডিজিটাল প্রযুক্তিবিদদের একটা বড় অংশ। সাবধান না হলেই জালিয়াত এবং হ্যাকারদের হাতে পরতে পারে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য। তাই পুরনো ফোন বিক্রি করা বা ফেলে দেওয়ার আগে কয়েকটি বিষয় খেয়াল রাখা উচিত।
‘ফ্যাক্টরি রিসেট’ কী?
এই পদ্ধতিতে ফোনের সেটিংস থেকে যাবতীয় অ্যাপ, ছবি, ভিডিয়ো এবং অন্যান্য তথ্য মুছে ফেলা যায়। অর্থাৎ পদ্ধতি কেনার সময় যে অবস্থায় ছিল, সেই অবস্থায় নিয়ে যায় ফোনটিকে। ‘দ্য জার্নাল অফ ডিজিটাল ফরেনসিক্স, সিকিউরিটি অ্যান্ড ল’ এই প্রসঙ্গে একটি পরীক্ষা করে। তারা ২১টি বিভিন্ন ধরনের ফোন ফ্যাক্টরি রিসেট করে দেখেছে, ফোনের মধ্যে মধ্যে তার পরেও সংবেদনশীল তথ্য রয়ে গিয়েছে। অ্যান্ড্রয়েডের ক্ষেত্রে ছবি এবং ভিডিয়োর সূত্রও রয়ে গিয়েছে, যা কোনও সফ্টঅয়্যারের সাহায্যে পুনরুদ্ধার করা যেতে পারে।
তবুও রয়ে যায় তথ্য
একাধিক পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ‘ফ্যাক্টরি রিসেট’ করা সত্ত্বেও ফোনে বেশ কিছু তথ্য রয়ে যেতে পারে। অ্যান্ড্রয়েড ফোনে এই ঝুঁকি আরও বেশি থাকে। ফলে যে কোনও উন্নত ডেটা রিট্রিভিং সফ্টঅয়্যারের সাহায্যে ফোনের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উদ্ধার করা সম্ভব। তাই কোনও হ্যাকার চাইলে ফোনে ব্যবহৃত গুরুত্বপূর্ণ আইডি, পাসওয়ার্ড বা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের তথ্য হাতিয়ে নিতে পারে।
ব্যতিক্রম ‘অ্যাপ্ল’
সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ২০ শতাংশ অ্যান্ড্রয়েড ফোন বাতিল করার আগে তার মধ্যে ব্যবহারকারীর তথ্য (যেমন, অ্যাকাউন্ট সেটিং) রয়ে যায়। অ্যান্ড্রয়েডের তুলনায় আইফোনে তথ্য অপেক্ষাকৃত বেশি সুরক্ষিত থাকে। কারণ অ্যাপ্ল তথ্য জমা করার ক্ষেত্রে ডেটা এনক্রিপশন প্রযুক্তি ব্যবহার করে। তার ফলে ফ্যাক্টরি রিসেট করার পরে সেই ফোন থেকে পুরনো তথ্য উদ্ধার করা খুবই কঠিন।
কী করা উচিত
১) যে কোনও ফোন রিসেট করার আগে যাবতীয় তথ্যের ব্যাক আপ নেওয়া উচিত। ক্লাউডের পাশাপাশি সম্ভব হলে ব্যক্তিগত হার্ড ড্রাইভেও ব্যাকআপ নেওয়া উচিত।
২) অ্যান্ড্রয়েড ফোনের ক্ষেত্রে এখন ডেটা এনক্রিপশনের সুযোগ থাকে। সেই মোড চালু করলে ফোনের মুছে যাওয়া তথ্য পুনরুদ্ধারের জন্য এনক্রিপশন কি বা পাসওয়ার্ডের প্রয়োজন হয়। ফলে তথ্য বেহাত হওয়ার ঝুঁকি কমে।
৩) ফ্যাক্টরি রিসেট করার আগে ফোনে ব্যবহৃত অ্যাকাউন্টগুলি (ইমেল, সমাজমাধ্যম, পেমেন্ট অ্যাপ ইত্যাদি) এক এক করে ডিলিট করা উচিত। তার পর ফোনটিকে রিসেট করা উচিত।
৪) এক বার রিসেট করার পর, পড়ে থাকা কোনও তথ্যকে ওভাররাইট করার জন্য ফোনে কোনও অডিয়ো বা ভিডিয়ো ট্রান্সফার করা উচিত। তার পর আরও এক বার ফোনটিকে ফ্যাক্টরি রিসেট করা উচিত।
৫) বর্তমানে যে কোনও হার্ড ড্রাইভ থেকে সুরক্ষিত ভাবে তথ্য মোছার জন্য আলাদা সফ্টঅয়্যার (যেমন ‘আইশ্রেডার’) পাওয়া যায়। এই ধরনের সফ্টওয়্যার হার্ড ড্রাইভের বিভিন্ন স্তরের গভীরে গিয়ে ধীরে ধীরে তথ্য মুছে থাকে। ফলে তথ্য চুরির সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যায়।
৬) ফোন যদি কোনও সংস্থাকে বা অন্য কাউকে বিক্রি না করা হয়, সে ক্ষেত্রে নতুন ফোন কেনার পর পুরনো ফোনটিকে ভেঙে নষ্ট করে দেওয়া যেতে পারে।