কণিকা নস্কর
বাবা আর দাদু তাকে নিয়ে গিয়েছিল হাটে হাতুড়ের কাছে দাঁত তোলাতে। হাতুড়ের চিমটে থেকে ফস্কে তোলা দাঁতটি গিয়ে পড়ে মেয়েটির গলায়।
পরিবারের অভিযোগ, বিপদের তোয়াক্কা না করে হাতুড়ে মেয়েটিকে বাড়ি নিয়ে যেতে বলেছিলেন। আশ্বাস দিয়েছিলেন, খানিক বাদে এমনিই সব ঠিক হয়ে যাবে। শ্বাসনালীতে দাঁত আটকে যন্ত্রণায় ছটফট করতে-করতে খানিক বাদে মেয়েটি মারা যায়।
সাড়ে চার বছরের মেয়েটির নাম কণিকা নস্কর। বাড়ি দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলতলিতে নাপিতখালি নস্করপাড়ায়। ডান দিকে উপরের দিকে একটি দাঁতে তার যন্ত্রণা হচ্ছিল কিছু দিন ধরেই। কাছাকাছি ভাল ডাক্তার নেই, স্বাস্থ্যকেন্দ্র অন্তত ১৫ কিলোমিটার দূরে। বাধ্য না হলে অত দূরে এলাকার কেউ যেতে চান না।
নাপিতখালি থেকে কিলোমিটার খানেক দূরে মহিষমারি হাট। সেখানে হাতুড়ে মন্টুলাল মণ্ডলের চেম্বার। সেই চেম্বারেই রবিবার বিকেলে কণিকাকে নিয়ে গিয়েছিলেন তার বাবা, পেশায় দিনমজুর তাপস নস্কর। দাদু ধনঞ্জয় নস্করও সঙ্গে ছিলেন। পৌনে ৫টা নাগাদ দাঁত দেখে হাতুড়ে জানান, সেটি তুলতে হবে। বাবা ও দাদু রাজি হয়ে যান। ইঞ্জেকশনের পরে লম্বা চিমটে দিয়ে টানাটানি শুরু হয়। অনেক কসরতের পরে দাঁতটি উপড়ে আসে।
তাপসবাবুদের অভিযোগ, চিমটের সঙ্গে বাইরে আসার বদলে দাঁতটি ফসকে কণিকার গলায় পড়েছিল। সে ছটফট করতে থাকে। কিন্তু মন্টুলাল বলেন, বাড়ি নিয়ে গেলেই ঠিক হয়ে যাবে। বাড়ি ফিরে ছটফট করতে-করতেই নিথর হয়ে যায় কণিকা। তাকে নিয়ে তাপসবাবুরা মন্টুলালে চেম্বারে ফিরে এসে দেখেন, তিনি তালা ঝুলিয়ে হাওয়া। পাশেই অন্য এক হাতুড়ের কাছে নিয়ে গেলে তিনি মেয়েটিকে ‘মৃত’ ঘোষণা করেন।
এর পরেই এলাকার লোকজন মন্টুলালের চেম্বারের সামনে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। পরে কুলতলি ও জয়নগর থানার পুলিশ এসে সামাল দেয়। বছর বত্রিশের মন্টুলালের বাড়ি জয়নগর থানার গুমুরবেড়িয়া গ্রামে। তার শিক্ষাগত যোগ্যতা এলাকার কেউ জানে না। কিন্তু বছর দুই যাবৎ ‘দাঁতের ডাক্তার’ হিসেবে তার বেশ নামডাক হয়েছিল। মন্টুলালের বিরুদ্ধে অনিচ্ছাকৃত খুনের মামলা রুজু করা হয়েছে। কিন্তু সোমবার রাত পর্যন্ত তাঁকে ধরা যায়নি। কলকাতার মোমিনপুর হাসপাতালে মৃতদেহের ময়নাতদন্ত করানো হয়েছে।
গ্রামবাসীর বক্তব্য, কণিকার এই অপমৃত্যু কার্যত গোটা এলাকার স্বাস্থ্য পরিষেবার দেউলিয়া দশা সামনে এনেছে। যেখানে কেউ অসুস্থ হওয়া মানেই ১৫-২০ কিলেমিটার দূরে জামতলা ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র অথবা ৩০-৪০ কিলোমিটার দূরে জয়নগরের পদ্মেরহাট স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যেতে হয়। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অসীম দাস মালাকােরর দাবি, ‘‘কলকাতাতেও হাতুড়ে দিয়ে কাজ চালানো হয়।’’