CIMA Art Gallery

শিল্পের মোড়কে জীবনের নির্যাস, রং-তুলি-ক্যানভাসে রোজের যাপনের উদ্‌যাপন সিমার প্রদর্শনীতে

এ বছর দেশের ৩১টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল থেকে শিল্পীরা আবেদনপত্র পাঠিয়েছিলেন। এর মধ্যে ২২টি রাজ্য থেকে প্রায় ২০০ জন শিল্পীর শিল্পকর্মকে বাছাই করা হয়। তাঁদের মধ্যে থেকে ১২ জনকে বেছে নেওয়া হয়েছে ‘সিমা’-র পক্ষ থেকে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০২৫ ২২:০২
Share:

শিল্পনির্মাণের ক্ষেত্রেও সাধারণ বিষয়ও জীবনবোধের পরশপাথরের ছোঁয়ায় হয়ে উঠছে অ-সাধারণ। নিজস্ব চিত্র।

শিল্পী ও তাঁদের শিল্পসত্তাকে দেশের নানা প্রান্ত থেকে খুঁজে বার করার কাজটি সহজ নয়। সেই প্রয়াসই নিরন্তর চালিয়ে যাচ্ছে ‘সিমা আর্ট গ্যালারি’। একটি বড় মাপের প্রদর্শনী দেখিয়ে দিচ্ছে যে, সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে নবীন শিল্পীরাও কত গভীর ও অভিনব চিন্তাভাবনার নজির রাখছেন। কল্পনার গভীরে ঢুকে খুঁড়ে বার করে আনতে চাইছেন শৈল্পিক রূপ-রস। শিল্পনির্মাণের ক্ষেত্রেও সাধারণ বিষয়ও জীবনবোধের পরশপাথরের ছোঁয়ায় হয়ে উঠছে অ-সাধারণ।

Advertisement

কমলেন্দু পলের 'ট্র্যাজিক সার্কাস'। নিজস্ব চিত্র।

গত কয়েক বছর ধরে নতুন শিল্পীদের কাজ উদ্‌যাপন করতে শুরু হয়েছে ‘সিমা পুরস্কার’ও। গোটা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছেন নবীন শিল্পীরা। এ বছর দেশের ৩১টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল থেকে শিল্পীরা আবেদনপত্র পাঠিয়েছিলেন। এর মধ্যে ২২টি রাজ্য থেকে দুশোর বেশি শিল্পীর শিল্পকর্মকে বাছাই করা হয়। তাঁদের মধ্যে থেকে ১২ জনকে বেছে নেওয়া হবে ‘সিমা’-র পক্ষ থেকে। ১ ফেব্রুয়ারি ঘোষণা হবে ১২ জন বিজয়ীর নাম। তার আগে ৩১ জানুয়ারি থেকে সিমা আর্ট গ্যালারি ও অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টসে শুরু হয়েছে এই নবীন শিল্পীদের শিল্পকর্মের প্রদর্শনী। তা চলবে ২৮ ফেব্রুয়ারি অবধি।

অভিজিৎ দেবনাথের আর্ট ইনস্টলেশন ‘টেম্পোরারি হাউজ়’। নিজস্ব চিত্র।

রোজের জীবনের অতি সাধারণ কিছু মুহূর্ত, নিজের বাড়ি, ব্যক্তিগত পরিসর ও চিন্তাভাবনাই ফুটে উঠেছে শিল্পীর রং-তুলি, শিল্প নির্মাণে। কল্যাণী থেকে এসেছেন সৌম্য। বললেন, “আমার পছন্দ, আমার চিন্তাভাবনা, রোজের টুকরো টুকরো ঘটনাই ফুটিয়ে তুলেছি ক্যানভাসে। চারপাশে যা দেখি, যতটুকু ভাবি, তারই প্রতিফলন থাকে আমার ছবিতে। ক্যানভাসে চারকোল ও অ্যাক্রেলিকের কাজ করি আমি।” ইনস্টেলেশনের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের আতিশয্যহীন অন্দরমহলের গল্প বলেছেন অভিজিৎ দেবনাথ। ছবি এঁকে, ছোট ছোট ভাস্কর্যে ফুটিয়ে তুলেছেন ছাপোষা মধ্যবিত্তের ঘরের ছবি। ত্রিপল টাঙানো বারান্দার তারে ঝুলছে গামছা, লুঙ্গি, জামাকাপড়। কিঞ্চিৎ অগোছালো, কিন্তু খুবই প্রাসঙ্গিক। শিল্পনির্মাণে আলো ও শব্দের প্রয়োগও যথাযথ।

Advertisement

নবীন শিল্পীদের শিল্পকর্মের প্রদর্শনী সিমা আর্ট গ্যালারিতে। নিজস্ব চিত্র।

ইটের গাঁথনিতে অর্ধনির্মিত দেওয়াল মানুষে মানুষে বিভাজনের গল্প বলছে কি? আর্ট ইনস্টলেশনে অন্য রকম ভাবনা এনেছেন হায়দরাবাদের ধনঞ্জয় আনন্দ পাটিল। বললেন, “সমাজের নানা স্তরে বিভাজন ও বৈচিত্রের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে ওই দেওয়াল। তাতে মানুষের দৈনন্দিনের ছোট ছোট গল্পগুলো আঁকা হচ্ছে। দেওয়ালের গায়ে সেঁটে থাকা ঘুঁটে, ইটের ফাঁক গলে বেরিয়ে থাকা মাটিতে জন্মানো আগাছা, শ্যাওলা ধরা ইটের সারি আমাদেরই তো গল্প বলছে! সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, দূরে সরে যাওয়া কোনও সম্পর্ক, মুছে যাওয়া কত স্মৃতির গন্ধ লেগে রয়েছে ওই ইটের পাঁজরে।”

আর্ট ইনস্টলেশনে অন্য রকম ভাবনা এনেছেন হায়দরাবাদের ধনঞ্জয় আনন্দ পাটিল। নিজস্ব চিত্র।

দেবশ্রুতি আইচের গ্রাফিক আর্ট মনে রাখার মতো। জলরঙের ছবির উপর এমব্রয়ডারির কাজে বেশ নতুনত্ব রয়েছে। অভিজিৎ দাসের শিল্পকর্ম বড় বড় পিলারে টেরাকোটা ও স্টিলের কাজ অনবদ্য। মাঝারি ঘনত্বের ফাইবার ফ্রেমে জুটের ক্যানভাসে মাটি ও ছোট ছোট কাঠের টুকরো কুঁদে অসাধারণ এক শিল্পকর্ম ফুটিয়ে তুলেছেন এসকে অভীক। অনীল কুমার বোড়ওয়ালের ক্যানভাসে মিশ্রমাধ্যমে ‘জার্নি অফ কাউজ’, সঞ্জীবকুমার দাসের ‘কোভিড ১৯’ আলাদা করে ছাপ রেখেছে। শোভিন ভট্টাচার্যের শিল্পকর্মে স্টেনলেস স্টিল, কাঠ ও অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি ‘কর্ম যোগী’ নজর কাড়ার মতোই।

ভাস্কর্য, আর্ট ইনস্টলেশনের অন্য রকম ভাবনার নজির। নিজস্ব চিত্র।

হায়দরাবাদের কেথাবাথ বিজয়ের জলরং ও গ্রাফাইটে করা চাষের জমির কাজ অত্যন্ত মনোগ্রাহী। বিজয় বললেন, “গাঁ-গঞ্জের চাষের জমি, তার নানা রং আমাদের মতো ছাপোষা মানুষজনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। আমার পরিবার চাষাবাদ করে। গাঁয়ের মেঠো পথ ও চাষের জমি যে রূপ সব সময়ে দেখি, তাই ফুটিয়ে তুলেছি চিত্রকলায়।”

এ ছাড়া যে কাজগুলি এই প্রদর্শনীর সামগ্রিক মান ও অভাবনীয় দৃষ্টান্তের বিশেষ সঙ্কেত বহন করছে, তার মধ্যে অন্যতম হল শুভজিং রায়ের ‘রেনিং বাই কোল্যাপ্সিং হাউস’। তুমুল বৃষ্টিতে অ্যাসবেস্টসের ছাদ থেকে অঝোরে ঝরে পড়া জল আটকাতে বালতি, গামলা পেতে রেখেছেন বাসিন্দা। ফাটা পাইপ দিয়ে জলের ধারা বালতি ছাপিয়ে বাড়ির উঠোন ভাসিয়ে দিচ্ছে। আলো ও শব্দের প্রয়োগে বড় বাস্তব হয়ে ফুটে উঠেছে সবটুকু। তা ছাড়া, আর্ট ইনস্টলেশনে সেরামিকের নানা কাজও মনে রাখার মতো।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement