Child Stress

ছোটদের আত্মবিশ্বাস গড়তে সাহায্য করুন

সাত-আট বছর বয়সি থেকে টিনএজারদের মধ্যে এই সংশয় বা দ্বিধা বেশি দেখা যায়। কারও ক্ষেত্রে হয়তো একটু প্রশংসা বা উৎসাহ তার আত্মবিশ্বাস বাড়াতে কাজ দেবে।

Advertisement

দীপান্বিতা মুখোপাধ্যায় ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২৩ ০৯:৩৭
Share:

সকলের সামনে নিজেকে মেলে ধরা সহজ নয়। সন্তানের পাশে থেকে তার ভয়-দ্বিধা কাটাতে সাহায্য করতে হবে মা-বাবাকে। প্রতীকী ছবি।

বছর সাতেকের মেয়েটি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আনমনে অনর্গল কবিতা বলে যায়, গান করে। কিন্তু কোনও অনুষ্ঠানে তাকে গাইতে বলা হলে, কোথা থেকে একরাশ জড়তা এসে গ্রাস করে। স্কুলের পরীক্ষায় কবিতা বলার জন্য ঠোঁট দুটো যেন নড়তেই চায় না। কেউ আবার নাচের স্কুলে বন্ধুদের সঙ্গে দিব্যি পা মেলাচ্ছে কিন্তু মঞ্চে একা উঠতে হলে, সে ঘেমেনেয়ে একশা। এ সব ক্ষেত্রে ছোটদের মধ্যে এক ধরনের অনিশ্চয়তা কাজ করে। অন্যেরা আমাকে দেখল, কে কী ভাবল— এগুলো তার মাথার মধ্যে ঘুরতে থাকে। সাত-আট বছর বয়সি থেকে টিনএজারদের মধ্যে এই সংশয় বা দ্বিধা বেশি দেখা যায়। কারও ক্ষেত্রে হয়তো একটু প্রশংসা বা উৎসাহ তার আত্মবিশ্বাস বাড়াতে কাজ দেবে। কারও ক্ষেত্রে হয়তো কাউন্সেলিং প্রয়োজন। তবে যেটা একেবারেই করা যাবে না, সেটা হল নেতিবাচক মানসিকতাকে প্রশ্রয় দেওয়া কিংবা বকুনি দিয়ে আত্মবিশ্বাসটাকেই একেবারে ভেঙে দেওয়া।

Advertisement

মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. জয়রঞ্জন রাম বলছেন, ‘‘পারফরম্যান্স অ্যাংজ়াইটি সকলের মধ্যে থাকে। বড়দের মধ্যেও। তবে টিনএজারদের মধ্যে এর প্রভাব বেশি পড়ে। অন্যরা আমাকে কতটা দেখল, আমার সম্পর্কে কী ভাবল, এটা ওদের উপরে ভীষণ প্রভাব ফেলে। এটা আর একটু ছোটদের মধ্যেও দেখা যায়। এটা আসলে বড় কোনও সমস্যা নয়। এক ধরনের ভীতি, যা ধীরে ধীরে কাটাতে হবে। অনেক বেশি অভ্যেস, মনস‌ংযোগ দরকার। এবং বাবা-মায়ের তরফ থেকে পূর্ণ সহযোগিতা।’’

আত্মবিশ্বাস গড়তেপাশে থাকুন

Advertisement

নিজেকে অন্যের সামনে তুলে ধরার ক্ষেত্রে ছোটদের মধ্যে দ্বিধা কাজ করে। অন্যের চোখে সে কেমন তা যেমন বিচার করতে চায়, তেমনই সেই বিচারের ফলাফল যদি ভাল না হয়, সেটা আগাম ভেবে ভয় পেয়ে যায় বা নিজেকে গুটিয়ে নেয়। মনে করে, ‘যদি খারাপ হয়, তার চেয়ে কিছু করবই না।’

আমরা অনেক সময়েই, বাচ্চাদের সঙ্গে তার বন্ধুদের তুলনা করে ফেলি। বা ছোটদের বলি ‘এই রকম করলে লোকে কী বলবে!’ এতে ওরা নিজেদের অজান্তেই মনের মধ্যে একটা নেতিবাচক ধারণা তৈরি করে নেয়। অনেক সময়ে দেখা যায় বাড়িতে বাচ্চাটি সব পড়াশোনা পারছে, কিন্তু স্কুলে গিয়ে গোলমাল হয়ে যাচ্ছে। পরীক্ষার খাতায় হয়তো লিখে আসছে কিন্তু মৌখিক পরীক্ষার সময়ে সব যেন তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। এ সব ক্ষেত্রে স্কুলের শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলুন। অন্য সময়ে ক্লাসে সন্তানের আচরণ কেমন থাকে, সেটা জানার চেষ্টা করুন। বাড়িতে বেশি করে অভ্যেস করান, নিজেই মৌখিক পরীক্ষা নিন। তবে বকাঝকা করা, মারধর একেবারেই চলবে না। এতে ওরা আরও গুটিয়ে যাবে। ওদের বোঝাতে হবে, ভুলে যাওয়া, না-পারা কোনও দোষ নয়। এগুলো সাময়িক ব্যাপার, যা অধ্যবসায় এবং ধৈর্য্যের মাধ্যমে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। বাড়িতে যখন আপনার সামনে সে গাইবে-নাচবে রেকর্ড করে রাখুন। ওকে দেখান সে আসলে কতটা ভাল করেছে বা কোন জায়গাগুলো আরও ভাল করা যায়। আসল হল সন্তানকে আরও উৎসাহ দিতে হবে।

মঞ্চ-ভীতি খুব স্বাভাবিক

অনেক বাবা-মা ছেলেমেয়েদের স্টেজ অ্যাংজ়াইটি নিয়ে চিন্তিত। কিন্তু মনোরোগ বিশেষজ্ঞ জয়রঞ্জন রামের কথায়, ‘‘বড়দের কাছেও মঞ্চে পারফর্ম করা বেশ ভয়ের ব্যাপার হয়। উল্টো দিকে কত অজানা মানুষ রয়েছে, তাদের সামনে আমি কী বলব, কী করব— এই ভীতি তৈরি হওয়াটা স্বাভাবিক। আর ছোটরা তো আরও বেশি স্পর্শকাতর। তাই মঞ্চভীতি কোনও সমস্যা হিসেবে দেখা উচিত নয়।’’ তাঁর পরামর্শ, এই বাধাটা ধীরে ধীরে কাটাতে হবে। প্রথমে অল্প কিছু লোকের সামনে পারফর্ম করল।ক্রমশ বেশি দর্শকের সামনে নিজেকে তুলে ধরল।

ভয় কাটাতে পরিবেশহালকা রাখুন

ধরুন আপনার সন্তান মুখস্থ পড়া স্কুলে গিয়ে ভুল বলছে কিংবা কিছুতেই সকলের সামনে ঠিক ভাবে গাইতে পারছে না। এ ক্ষেত্রে বাড়ির সকলে মিলে একটা খেলা খেলতে পারেন। ছোট ছোট চিরকুটে কোনও গান, নাচ, কবিতা বা অভিনয়ের কথা লেখা রইল। যার হাতে যেমন চিরকুট উঠবে, সেই মতো পারফর্ম করতে হবে। মজার ছলে এই খেলা তার ভয় কাটাতে সাহায্য করবে। এটা ওর বন্ধুদের সঙ্গেও খেলতে বলবেন। বন্ধুদের মধ্যে বা বাড়িতে কোনও বিষয়ে একসঙ্গে আলোচনা করতে পারেন।

তবে সন্তানের কিছু আচরণে লক্ষ রাখতে বলছেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা। সামাজিক ভাবে মেলামেশা করতে তার সমস্যা হচ্ছে কি না, স্কুলে পড়া বুঝতে পারছে কি না, বন্ধুদের সঙ্গে কেমন ভাবে মিশছে? যদি প্রতিটি ক্ষেত্রে ইতিবাচক উত্তর পান, তা হলে অতিরিক্ত চিন্তার কিছু নেই। সেটা না হলে কাউন্সেলিংয়ের পরামর্শ দিচ্ছেন তাঁরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন