COVID-19 CRISIS

স্রেফ নুন-জল গার্গলেই জব্দ করোনা, বলছে গবেষণা

এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক সম্প্রতি প্রমাণ করেছেন যে গরম নুন জলে গার্গল করে কোভিড ১৯ সংক্রমণের বাড়বাড়ন্ত ঠেকিয়ে দেওয়া যায়।

Advertisement

সুমা বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০২০ ১৩:০৫
Share:

নভেল করোনা ভাইরাসের বাড়বাড়ন্ত আটকে দেওয়া গিয়েছে, বলছে গবেষণা। ছবি: শাটারস্টক থেকে নেওয়া হয়েছে।

ক্রিকেটের স্কোর বোর্ডের মত প্রতিদিনই কো-ভিড আক্রান্ত আর মৃতের সংখ্যা বদলে যাচ্ছে। কোভিড ১৯ এর দাপট কমার কোনও লক্ষণই নেই। ভাইরাসের গতি প্রকৃতির নিখুঁত ভাবে জেনে ওষুধ ও প্রতিরোধী টিকা আবিষ্কার নিয়ে এককাট্টা হয়ে লড়ছেন দেশ বিদেশের বিজ্ঞানীরা। এরই মধ্যে একটি গবেষণা বলছে, স্রেফ নুন জলে গার্গল করে নভেল করোনার মারাত্মক সংক্রমণ রুখে দেওয়া যেতে পারে।

Advertisement

এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক সম্প্রতি প্রমাণ করেছেন যে গরম নুন জলে গার্গল করে কোভিড ১৯ সংক্রমণের বাড়বাড়ন্ত ঠেকিয়ে দেওয়া যায়। এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দলের প্রধান প্রোফেসর আজিজ শেখ ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন যে অন্য আর একটি করোনা গ্রুপের ভাইরাস নিয়ে গবেষণা করার সময় তিনি ও তাঁর সহযোগীরা নিশ্চিত হয়েছেন যে গরম স্যালাইন ওয়াটারে গার্গল করলে নভেল করোনা ভাইরাসের বাড়বাড়ন্ত আটকে দেওয়া গিয়েছে, বলছে গবেষণা।

ELVIS অর্থাৎ (Edinburgh and Lothians Viral Intervention Study) নামে এক স্টাডি করে দেখা গেছে যে গরম নুন জল শরীরের ইনেট ইমিউনিটি বাড়িয়ে ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। নাক কান গলা বিশেষজ্ঞ শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় জানালেন, '' আমাদের দেশে অনেক দিন ধরেই সর্দি কাশি সহ ভাইরাস ঘটিত জ্বর ও গলা ব্যথার কষ্ট কমানোর জন্য নুন জলে গার্গল করার চল আছে।''

Advertisement

আরও পড়ুন: করোনা আবহে 'ইমিউনিটি' বাড়াতে দূরে থাকুক চিনি

কোভিড ১৯ এর অতিমারি শুরুর আগে থেকেই শান্তনু বাবু তাঁর রোগীদের এই পরামর্শ দিয়ে আসছেন। কোভিড ১৯ আরএনএ ভাইরাসের ওপরে এক প্রোটিনের চাদর থাকে। সাবান, স্যানিটাইজার সেই প্রোটিন নষ্ট করে দিয়ে ভাইরাসকে অকেজো করে দেয়। কিন্তু মুখে, চোখে বা গলার মধ্যে তো সাবান বা স্যানিটাইজার দিয়ে পরিষ্কার করা যাবে না! সাবান স্যানিটাইজারের মতই ভূমিকা নেয় নুন জল। গার্গল করলে করোনা ভাইরাসের প্রোটিনের আচ্ছাদন সরে গিয়ে ভাইরাস নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে, বললেন শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়। নভেল করোনা ভাইরাস ছাড়াও সর্দিকাশি ও ইনফ্লুয়েঞ্জার জন্য দায়ী ভাইরাসেরাও গরম নুন জলে জব্দ হয়। নভেল করোনা ভাইরাস চোখ আর নাক দিয়েও শরীরে প্রবেশ করতে পারে। কিন্তু লাইপোজাইম নামে এক বিশেষ প্রোটিওলাইটিক এনজাইম চোখের জলে ও নাকের মধ্যে থাকায় সেখানে ভাইরাস সেখানে খুব একটা সুবিধে করতে পারে না। তাই ভাইরাসের বাড়বাড়ন্ত আটকাতে গরম জলের গার্গল করার কোনও বিকল্প নেই।

আরও পড়ুন: হাই ব্লাড প্রেসারে ভয়াবহ হতে পারে কোভিড সংক্রমণ

এডিনবার্গ ইউনিভার্সিটির প্রোফেসর আজিজ শেখ ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, যাঁরা ইতিমধ্যে কোভিড ১৯ এর সংক্রমণে ভুগছেন তাঁদের রোগের বাড়বাড়ন্ত ঠেকাতে দিনের মধ্যে বেশ কয়েক বার গরম স্যালাইন ওয়াটারে গার্গল করা দরকার। এর ফলে ভাইরাস লোড অনেকটা কমে যায়। ফলে শ্বাসনালী বেশি মাত্রায় ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে না। গবেষণায় প্রমাণিত শ্বাস নালীর উপরের স্তরের কিছু কোষ স্যালাইন ওয়াটারের নুন থেকে হাইপোক্লোরাস অ্যাসিড তৈরি করে। এটিই কোভিড ১৯ ভাইরাসের প্রোটিনের আবরণ ধ্বংস করে ভাইরাসের বিস্তার রোধ করতে সাহায্য করে। লক ডাউন উঠে আনলক শুরু হলেও করোনার বিস্তার ঠেকানো যাচ্ছে না। এক্ষেত্রে নিজেদেরই সাবধান হওয়া উচিৎ।

যাঁদের নিয়ম করে বাসে বা অটোয় চড়ে অফিস যেতে হচ্ছে তাঁদের অফিস থেকে ফিরে গরম নুন জলে গার্গল করার পরামর্শ দিলেন শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়।

•সম্ভব হলে অফিসে পৌঁছে একবার গার্গল করতে পারলে ভাল হয়।

•গরম জলের পরিবর্তে খাবার জলে নুন মিশিয়ে গার্গল করা যেতে পারে।

•শুধু গার্গল করলে চলবে না। মুখে সঠিক পদ্ধতিতে মাস্ক পরে (নাকের নিচে নয়), চশমা বা জিরো পাওয়ারের গ্লাসে চোখ ঢেকে বাড়ির বাইরে যাওয়া উচিৎ।

•টি-জোন অর্থাৎ চোখ, নাক, মুখে অকারণে হাত দেবেন না। খাবার আগে তো বটেই বাইরে বেরোলে অফিস বা বাড়িতে পৌঁছে সাবান দিয়ে ভাল করে হাত ধুয়ে নিতে হবে।

এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের পরামর্শ, কোভিড আক্রান্তদের স্যালাইন ওয়াটারে একাধিকবার গার্গল করালে রোগের বাড়বাড়ন্ত কমার সঙ্গে সঙ্গে রোগ ছড়িয়ে পড়াও অনেক কমে যায়। বাড়ির বা পাড়ার কেউ নভেল করোনায় আক্রান্ত হলে রোগ প্রতিরোধ করতে নুন জলে গার্গল করা শুরু করুন এখন থেকেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন