শৈশবেই যেমন অনেকের চোখে নানা সমস্যা দেখা দেয়, তেমনই চোখের বেশ কিছু সমস্যা শুরু হয় কিশোর বয়সে পৌছে। সেই সব সমস্যা ও সেগুলির প্রতিকার নিয়েই আমরা কথা বলেছিলাম আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালের চোখের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মানস পালের সঙ্গে। তাঁর কথায় উঠে এল কৈশোরে চোখের নানা সমস্যা এবং সেগুলি প্রতিকারের উপায়।
রিফ্র্যাক্টিভ এরর
এটা মূলত চোখের পাওয়ার জনিত সমস্যা। চোখে খুব বেশি পাওয়ারের সমস্যা থাকলে সেটা শৈশবেই ধরা পড়ে যায়। কিন্তু সেই সমস্যা মাঝারি কিংবা কম থাকলে সেটা কিশোর বয়সেই ধরা পড়ে। বন্ধুদের সঙ্গে থাকার সময় কেউ হয়তো লক্ষ করল যে, সে একটি পোস্টারের লেখা পড়তে পারছে না। অথচ, তার বন্ধু সেটা পড়ে ফেলছে। কিংবা স্কুলে ব্ল্যাক বোর্ডে শিক্ষকের লেখা পড়তে সমস্যা হচ্ছে। তখন বুঝতে হবে, চোখে পাওয়ারের সমস্যা রয়েছে।
পরামর্শ: এ ক্ষেত্রে একটা বড় ভূমিকা রয়েছে শিক্ষকদের। ব্ল্যাক বোর্ডে তাঁদের কোনও লেখা যদি কোন ছাত্র বা ছাত্রী পড়তে না পারে, সে ক্ষেত্রে বকাবকি না সেই ছাত্র বা ছাত্রী কিংবা তাদের অভিভাবকদের অবিলম্বে চোখের চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে বলা উচিত।
আঘাতজনিত সমস্যা
কিশোর বয়সে ছটফটে ভাব অনেকটাই বেড়ে যায়। খেলাধুলা থেকে শুরু করে স্কুলে বন্ধুদের মধ্যে খুনসুটি কিউংবা পেন-পেনসিল ছোড়াছুড়ির ঘটনাও ঘটে। তা থেকে অনেকের চোখে আঘাত লেগে যায়। মাঝেমধ্যে সেই আঘাত অনেকটা গুরুতরও হয়ে যেতে পারে। যা চোখের মণির ক্ষতি করতে পারে। এমনকি, যার ফলে দৃষ্টিশক্তিও কমে যেতে পারে। খেলাধুলা করতে গিয়ে অনেক সময়েই দেখা যায়, চোখের মধ্যে ব্যাডমিন্টনের কক কিংবা ক্রিকেটের বল লেগে যাচ্ছে। এ ছাড়া যে কোনও পথ দুর্ঘটনায় তো চোখে আঘাত লাগতেই পারে।
পরামর্শ: সব সময় সতর্ক থাকতে হবে, চোখে বেশি আঘাত লাগলেই সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াটা জরুরি।
কনজাংটিভাইটিস
এই রোগটি ভাইরাসজনিত হতে পারে, আবার ব্যাকটেরিয়ার কারণেও হতে পারে। এর ফলে চোখ লাল হয়ে যায়। চোখ দিয়ে জল পড়তে থাকে। রোদে তাকাতে সমস্যা হতে পারে। কনজাংটিভাইটিসের ফলে মণিতে ইনফেকশন হতে পারে। যার প্রভাব পড়তে পারে দৃষ্টিশক্তিতে। অবহেলা করলে এর প্রভাব করনিয়াতেও পড়তে পারে। সে ক্ষেত্রে সম্পুর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠার পরও করনিয়ায় দাগ থেকে যেতে পারে। শুরুতেই এই রোগের চিকিৎসা হলে অ্যান্টিবায়োটিকের কোর্সেই তা সেরে যেতে পারে। কিন্তু চিকিৎসা করতে দেরি করলে সমস্যা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
পরামর্শ: এই রোগে আক্রান্ত কেউ হয়তো আঙুল দিয়ে চোখ চুলকে কোনও জিনিস ধরল। তারপর সেই জিনিসটা সুস্থ কেউ একজন ধরল। এবং সেই আঙুল সে তার নিজের চোখে স্পর্শ করলে এই রোগের সংক্রমণ ছড়াতে পারে। তাই কখনওই যখন-তখন চোখে হাত দেওয়া উচিত নয়। পরিষ্কার রুমাল বা তোয়ালে দিয়ে চোখ পরিষ্কার করা যাতে পারে।
ইউভিয়াইটিস
চোখের এই রোগটা তুলনামূলক ভাবে বিরল। তবে, সংক্রমণ-সহ নানা কারণে এই রোগ হতে পারে। আবার কোনও কোনও ক্ষেত্রে এই রোগের কারণ জানাও যায় না। এই ক্ষেত্রেও রোগীর চোখ লাল হয়ে যায়। সেই সঙ্গে আচমকা দৃষ্টিশক্তি কমে যায়। একবার এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর বারবার আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও থাকে।
পরামর্শ: কারও ইউভিয়াইটিসের সমস্যা থাকলে একটা সময় অন্তর আবারও এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই দ্বিতীয়বার এই সমস্যা হলে দেরি না করে চিকিৎসা করানো উচিত এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা উচিত।
অ্যালার্জি কনজাংটিভাইটিস
অ্যালার্জিজনিত কারণে চোখে এই অসুখ হতে পারে। সাম্প্রতিককালে দক্ষিণবঙ্গের তুলনায় উত্তরবঙ্গে এই রোগ বেশি দেখা যাচ্ছে।
পরামর্শ: সমস্যা দেখা দিলেই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।
টিউবারকিউলোসিস
টিউবারকিউলোসিসের জীবাণু থেকে অনেক সময় চোখে সংক্রমণ হতে দেখা যায়। আবার অনেক সময় টিউবারকিউলোসিসের ওষুধ থেকে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়েও চোখের অপটিক নার্ভে প্রভাব পড়তে পারে। এর ফলে কালার পারসেপশনের সমস্যা হতে পারে। ভিশুয়াল ফিল্ডের সমস্যা হতে পারে। যার জন্য কোনও দিকে তাকালে আচমকা কেউ ছোপ দাগ দেখতে পারেন।
পরামর্শ: টিউবারকিউলোসিস হলে নিয়মিত চিকিৎসকের কাছে চোখের পরীক্ষা করানো উচিত।
চোখের মধ্যে কৃমি
এই ঘটনাও বিরল নয়। এর ফলে দৃষ্টিশক্তিতে সমস্যা হতে পারে, আবার কারও ক্ষেত্রে কোনও দিকে তাকালে কিছু ভেসে রয়েছে বলে মনে হতে পারে। আলিপুরদুয়ারে
গত এক বছরে বেশ কয়েকজনের মধ্যে এই সমস্যা দেখা গিয়েছে। এর ফলে রেটিনার ক্ষতি হতে পারে।
পরামর্শ: এর জন্য নিয়মিত কৃমির ওষুধ খাওয়া দরকার। এবং কখনওই খোলা জায়গায় খালি পায়ে না হাঁটা উচিত। জুতো পুরে হাঁটা উচিত।
রাতকানা
যে বয়সে দেহের বৃদ্ধির হার বেশি থাকে, সেই বয়সে ভিটামিন এবং অন্যান্য পুষ্টিগুণের প্রয়োজনীয়তাও বেশি থাকে। দেহ প্রয়োজনীয় পুশ্টিগুণ এবং ভিটামিন না পেলে ভিটামিন ‘এ’-র অভাবে রাতকানা রোগ দেখা দিতে পারে।
পরামর্শ: সবুজ শাক-আনাজ বেশি পরিমাণে খেতে হবে। সেই সঙ্গে কুমড়ো ও গাজরের মতো হলুদ আনাজও খেতে হবে, যাতে দেহ প্রয়োজনীয় পুষ্টি পেতে পারে।