Coronavirus

ভেন্টিলেশন নির্ভরতা কমছে করোনা চিকিৎসায়

পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে, সঙ্গে সঙ্গে অনেকগুলি পদ্ধতি একসঙ্গে শুরু করে দেওয়া হচ্ছে, ফলে বহু রোগীর ক্ষেত্রে ভেন্টিলেটরের প্রয়োজন পড়ছে না।

Advertisement

দেবাশিস ঘড়াই

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০২০ ০৬:১৮
Share:

প্রতীকী ছবি।

করোনা সংক্রমণের চিকিৎসার অভিমুখ কি ক্রমশ বদলাচ্ছে? গবেষক এবং চিকিৎসক মহলের একাংশে এখন সেই প্রশ্নই উঠতে শুরু করেছে। কারণ, সংক্রমণের প্রাথমিক পর্যায়ে যে ভাবে চিকিৎসা হত, সেই প্রক্রিয়ায় কিছু বদল এসেছে বলে জানাচ্ছে সংশ্লিষ্ট মহল।

Advertisement

তাদের বক্তব্য, সংক্রমণের শুরুর দিকে ভেন্টিলেটরের উপরে যতটা নির্ভরশীলতা ছিল, এখন আর ততটা নেই। রোগীর তীব্র শ্বাসকষ্ট হলে ভেন্টিলেটর ব্যবহার করা হত, এখনও সেটা হয় ঠিকই। কিন্তু এখন রোগীকে প্রথম থেকেই পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। শারীরিক অবস্থা বা রক্ত পরীক্ষার ভিত্তিতে যে মুহূর্তে মনে হয় পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে, সঙ্গে সঙ্গে অনেকগুলি পদ্ধতি একসঙ্গে শুরু করে দেওয়া হচ্ছে, ফলে বহু রোগীর ক্ষেত্রে ভেন্টিলেটরের প্রয়োজন পড়ছে না। অর্থাৎ সার্স-কোভ-২ ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করে কী কী ক্ষতি করছে, বর্তমানে সেগুলি চিহ্নিত করে প্রাথমিক পর্যায়েই আটকে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে।

মাইক্রোবায়োলজিস্ট বিশ্বরূপ চট্টোপাধ্যায়ের মতে, গত সাত-আট মাসের সম্মিলিত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতেই চিকিৎসার পদ্ধতি ক্রমশ পাল্টাচ্ছে। পরিবর্তনগুলির মধ্যে অগ্রগণ্য হল পুরনো ওষুধের নতুন ব্যবহার। যেমন, পরিস্থিতি অনুযায়ী গ্লুকোকর্টিকয়েড (স্টেরয়েড) এবং রক্ত জমাট না-বাঁধার জন্য হেপারিন জাতীয় ওষুধ কাজে লাগানো, মাঝেমধ্যে রোগীকে উপুড় করে শোয়ানো, শ্বাসকষ্ট শুরু হওয়া মাত্র ‘হাই ফ্লো ন্যাজ়াল অক্সিজেন’ (নাক দিয়ে বাড়তি অক্সিজেন) দিয়ে ভেন্টিলেটরের প্রয়োজন অনেকটাই ঠেকিয়ে রাখা এবং রোগের জটিলতা শুরুর আগেই তা প্রতিরোধের চেষ্টা করা। বিশ্বরূপবাবুর কথায়, ‘‘এই বহুমুখী পরিবর্তনের ফলে কোভিডজনিত মৃত্যুর শতকরা হার আগের তুলনায় কিছুটা হলেও কম করা গিয়েছে।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: উপসর্গ বুঝলে আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক থাকুন

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রাক্তন প্রধান, অধ্যাপিকা অপর্ণা লাহিড়ী এ বিষয়ে জানাচ্ছেন, শুরুর দিকে যে নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে চিকিৎসা হচ্ছিল, তাতে তেমন ফল না মেলায় প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করা হয়েছে। সংক্রমণ রোখার জন্য মাস্ক পরা, দূরত্ব-বিধি বজায় রাখা-সহ যে একাধিক পদ্ধতি রয়েছে, সেগুলি জনসাধারণের একটি অংশ ঠিক ভাবে পালন না করায় সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়েছে। সেই সঙ্গে অনুঘটকের কাজ করেছে অপরিচ্ছন্নতার প্রবণতা। এর ফলে চিকিৎসা পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনা জরুরি হয়ে

পড়েছিল। তাই এখন চেষ্টা হচ্ছে সংক্রমিতকে দ্রুত সারিয়ে তোলার। অপর্ণাদেবীর কথায়, ‘‘চিকিৎসা পদ্ধতি ক্রমশ পাল্টে একটা জায়গায় পৌঁছনোর চেষ্টা করা হচ্ছে, যেখানে সুস্থতার হার তুলনামূলক বেশি হবে। সেই প্রক্রিয়ার ফলও মিলছে। প্রায় ৭৫ শতাংশ মানুষ সুস্থ হয়ে উঠেছেন।’’

পরিসংখ্যান বলছে, সারা বিশ্বে এখনও পর্যন্ত ‘ক্লোজ়ড’ (আক্রান্ত হয় সুস্থ হয়ে গিয়েছেন বা তাঁর মৃত্যু হয়েছে এমন ক্ষেত্রে) কেসের সুস্থতার হার প্রায় ৯৫ শতাংশ। ‘ক্লোজ়ড’ কেসের মধ্যে সংক্রমিত প্রায় ১ কোটি ৬৫ লক্ষ জনের মধ্যে ১ কোটি ৫৭ লক্ষই সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এক জনস্বাস্থ্য চিকিৎসকের কথায়, ‘‘গোষ্ঠী সংক্রমণ শুরু হওয়ার পরে লক্ষ্য থাকে, পরীক্ষা করা, সংক্রমিতকে চিহ্নিত করা এবং তাঁর চিকিৎসা করা।’’ জনগোষ্ঠীর যে অংশ সংক্রমিত হতে পারে, অর্থাৎ বয়স্ক ও কোমর্বিডিটি আছে এমন জনসাধারণের স্বাস্থ্য সুরক্ষার উপরে জোর দেওয়ার জন্য শুরু থেকেই একাধিক বার কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আবেদন করা হয়েছে বলে জানাচ্ছেন মাইক্রোবায়োলজিস্টস সোসাইটি অব ইন্ডিয়া’-র প্রেসিডেন্ট এ.এম দেশমুখ। তাঁর কথায়, ‘‘এই সংক্রমণ যে সহজে থামার নয়, তা এর গতি দেখেই বোঝা গিয়েছিল। তাই প্রতিষেধক বা নির্দিষ্ট ওষুধ না আসা পর্যন্ত বেশি সংখ্যক রোগী যাতে সঙ্কটজনক (ক্রিটিক্যাল) পর্যায়ে না পৌঁছন, সে দিকেই গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন