ক্ষীরপাই হাসপাতালে চিকিৎসকের পদ রয়েছে ৬টি। রয়েছেন তিন জন।
সবং গ্রামীণ হাসপাতালেরও প্রায় একই অবস্থা। ৬ জনের বদলে রয়েছেন ৪ জন।
৬০ শয্যার গড়বেতা গ্রামীণ হাসপাতালের হাল আরও খারাপ। আট জন চিকিৎসকের বদলে রয়েছেন মাত্র তিন জন।
কোনও বিচ্ছিন্ন উদাহরণ নয়। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসকের অভাবে পশ্চিম মেদিনীপুরের প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলি বন্ধ হওয়ার উপক্রম। একই কারণে এ বার ব্লক ও গ্রামীণ হাসপাতালগুলিও ধুঁকতে শুরু করেছে।
স্বাস্থ্য পরিষেবার ক্ষেত্রে সরকারি স্তরে বারবার পরিকাঠামো উন্নয়নের কথা বলা হয়। কিন্তু স্বাস্থ্য পরিষেবা পরিচালনা যাঁদের উপর নির্ভর করে, সেই চিকিৎসকই তো পর্যাপ্ত নেই এই জেলায়! অথচ, এই সব ব্লক এবং গ্রামীণ হাসপাতালগুলির উপরে নির্ভর করেন হাজার হাজার মানুষ।
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, ঝাড়গ্রাম বাদে জেলার তিনটি মহকুমার ২১টি ব্লকের মধ্যে ২টি ব্লক ও ১৯টি গ্রামীণ হাসপাতাল রয়েছে। প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে ৫৭টি। জেলায় সমস্ত স্তরের হাসপাতাল নিয়ে মোট অনুমোদিত চিকিৎসকের পদ ২০৬টি। ২০০০ সালের গোড়ায় রোগীর পরিসংখ্যান অনুযায়ী ওই পদ অনুমোদিত হয়েছিল। তার পরে হাসপাতালগুলিতে রোগীর সঙ্গে শয্যাসংখ্যাও বেড়েছে। কিন্তু সব মিলিয়ে বর্তমানে রয়েছেন ১৩৬ জন চিকিৎসক। স্বাভাবিক ভাবেই চিকিৎসকের অভাবে পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
সমস্যার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা। তিনি বলেন, “চিকিৎসকের অভাবে পরিষেবা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, এমন নয়। তবে রেফারের সংখ্যা বাড়ছে। আমি জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক নিয়োগের জন্য লিখিত ভাবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।” তবে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দফতরের এক পদস্থ কর্তা মেনে নিয়েছেন, ‘‘বেশির ভাগ প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলি এখন শুধু খোলা আর বন্ধ করা হয়। এ বার একই পরিস্থিতি হচ্ছে গ্রামীণ ও ব্লক হাসপাতালগুলিতেও।”
সূত্রের খবর, কয়েক বছর আগে বিশ্বব্যাঙ্ক এবং কেন্দ্রীয় ও রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের নানা প্রকল্পের টাকায় জেলার গ্রামীণ হাসপাতালগুলিতে কোটি কোটি টাকা খরচ করে আধুনিক ঘর-সহ অস্ত্রোপচারের সব রকম ব্যবস্থাই হয়। কিন্তু চন্দ্রকোনা গ্রামীণ-সহ দু’টি হাসপাতালে ছোটখাটো অস্ত্রোপচার হয়। বাদবাকি হাসপাতালগুলিতে আধুনিক সব যন্ত্রপাতি পড়ে থেকে ব্যবহারের অভাবে নষ্ট হতে বসেছে। রোগী এবং তাঁদের আত্মীয়-স্বজনদের অভিযোগ, যেখানে এখন উন্নত মানের পরিষেবার জন্য মহকুমা ও জেলা স্তরের হাসপাতালগুলিতে এইচডিইউ, সিসিইউ, এসএনসিইউ প্রভৃতি ইউনিট খুলছে, সেখানে হাজার হাজার মানুষ যে সব হাসপাতালের উপর নির্ভর করেন, সেই সব গ্রামীণ হাসপাতালগুলিতে সরকারের কোনও নজরই নেই। পরিস্থিতি যা, দ্রুত চিকিৎসক নিয়োগ না হলে এর পরে হয়তো রোগী ভর্তি নেওয়াও বন্ধ হয়ে যাবে বলে তাঁদের আশঙ্কা।
চন্দ্রকোনা-১ ব্লকের মাঙরুল-সহ অন্য প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে কোনও চিকিৎসক না থাকায় গ্রামবাসীর নির্ভর করেন ৩০ শয্যার ক্ষীরপাই গ্রামীণ হাসপাতালের উপরে। সেখানে বেশির ভাগ সময় রোগীর চাপ এতো বেশি থাকে যে মেঝেতেও রোগী ভর্তি থাকে। কিন্তু চিকিৎসক নিয়োগ না হওয়ায় বাড়ছে ‘রেফারে’র সংখ্যা। দ্রুত চিকিৎসক নিয়োগের জন্য সম্প্রতি বিডিও-র কাছে স্মারকলিপিও দেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
গড়বেতা গ্রামীণ হাসপাতালে আবার বিএমওইচও নেই। একজন মেডিক্যাল অফিসারই বর্তমানে ওই দায়িত্বে রয়েছেন। তাঁকে প্রশাসনিক কাজ সামলে রোগীও দেখতে হচ্ছে। অথচ, হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রতিদিন শতাধিক রোগী আসেন। শয্যাও খালি থাকে না। একই রকম ভাবে শয্যার সবং গ্রামীণ হাসপাতালে রোগী সামলাতে হিমসিম খাচ্ছেন মাত্র চার জন চিকিৎসক। কেশপুর, সোনাখালি, ডেবরা, দাসপুর গ্রামীণ হাসপাতাল থেকে বীরসিংহ ও মেদিনীপুর সদর ব্লক-সহ সব হাসপাতালগুলিতেই একই চিত্র।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক চিকিৎসক এবং বিএমওএইচও মেনে নিচ্ছেন হাসপাতালগুলিতে দ্রুত চিকিৎসক নিয়োগগ না হলে সেগুলি নামেই হাসপাতাল থাকবে। পরিষেবা মিলবে না।