তীব্র গরমে ঘেমেনেয়ে একাকার।ট্রেনে-বাসে ঘামে ভেজা জামাকাপড় পরেই যাতায়াত। অস্বস্তি এড়াতে অনেকেই ব্যাগে রাখেন ওয়েট ওয়াইপস। সোজা কথায় ওয়েট টিস্যু। পাশের যাত্রীর উৎকট ঘামের গন্ধ থেকে বাঁচতে হোক, বা ধুলো-ধোঁয়ায় জেরবার নিজের মুখ পরিচ্ছন্ন রাখতে, একটু ঠান্ডার পরশ পেতে এমন সুগন্ধি টিস্যুতেই ভরসা রাখি আমরা।
শুধু ঘাম থেকে বাঁচতেই নয়, অনেকে মেকআপ তুলতেও ওয়েট টিস্যু ব্যবহার করেন। এতে মুখ তার প্রয়োজনীয় আর্দ্রতা হারায় না। শুধু তা-ই নয়, মেক আপের রাসায়নিকের ফলে ত্বকের যেটুকু ক্ষতি হয়, ওয়েট টিস্যু সেই ক্ষতিতেও কিছুটা প্রলেপ দিতে পারে বলে অনেকেই ভেবে থাকি। ভিজে টিস্যুর ঠান্ডা পরশে মুখের ত্বকও আরাম পায়।
কিন্তু যদি হঠাৎই জানতে পারেন, এই ওয়েট টিস্যু তলে তলে ক্ষতি করছে আপনার!আজ্ঞে হ্যাঁ, দুনিয়া জুড়ে চিকিৎসকরা কিন্তুএই ওয়েট টিস্যুর নাম শুনলেই আঁতকে উঠছেন। ওয়েট টিস্যুকে রীতিমতো ঘাতক বলে চিহ্নিত করছেন গবেষকরা। কিন্তু কেন?
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ‘নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি’-র গবেষক জন কুক মিলসের গবেষণায় উঠে এসেছে এমনই কিছু তথ্য। তাঁর মতে,ওয়েট ওয়াইপ্স ব্যবহার করলে শিশুদের অ্যালার্জির সমস্যা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। এর মূল কারণ হচ্ছে এই বস্তুটির মধ্যে থাকা সোডিয়াম লরিল সালফেট। এটি শিশুর ও বয়স্কদের স্পর্শকাতর ত্বকের জন্যে খুবই ক্ষতিকর।
শুধু শিশু বা বয়স্কতেই নিস্তার নেই। ওয়েট ওয়াইপের মধ্যে থাকা আর এক রাসায়নিক মিথাইল ক্লোরিসেথিয়া জোলাইন বড়দের ত্বকের জন্যও ক্ষতিকর।
এখানেই শেষ নয়, আরও একটি ভয়াবহ বিষয়ে সতর্ক করছেন পরিবেশবিদরা। আমরা অনেকেই জানিনা ওয়েট ওয়াইপসের প্রধান উপাদান হলো প্লাস্টিক। অর্থাৎ ওয়েট টিস্যু কখনও নষ্ট হবে না বরং তার উপস্থিতি জলে মিশে জলজ প্রাণীদের প্রভূত ক্ষতি করবে।ত্বকে প্লাস্টিকের প্রভাব যে কত ক্ষতিকর, তা নিয়েও সাবধান করছেন তাবড় বিজ্ঞানীরা।
গবেষকরা সাবধান করছেন, ঘন ঘন ওয়েট ওয়াইপ্স ব্যবহার করলে এর প্লাস্টিক ও রাসায়নিক ধীরে ধীরে শরীরের নানা কোষে জমতে থাকে। ফলবশত ক্যানসার, বন্ধ্যাত্বর মতো মারণ রোগও ডেকে আনতে পারে এই বস্তুটি। কাজেই অভ্যাসে বদল না আনলে অনেক বড় ক্ষতির খতিয়ান দিতে হবে আপনাকেই।
ত্বকবিশেষজ্ঞ সঞ্জয় ঘোষের মতে, প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয়, এমন সব প্রসাধনী থেকেই দূরে থাকতে হবে। ওয়েট ওয়াইপ্সের ভিজে ভাব ধরে রাখতে তাতে যে সব রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়, তাও অত্যন্ত ক্ষতিকর ত্বকের পক্ষে। এ ছাড়াও আরও একটি সমস্যার কথাও তিনি বলেন। কী তা?
ওয়েট ওয়াইপ্স ব্যবহারের পর অনেকে প্রায়শই কোমডে ফেলে ফ্লাশ করেন। নিকাশি ব্যবস্থা ঠিক রাখতে হলে অবিলম্বে এই অভ্যাস ত্যাগ করা উচিত। ওয়েট টিস্যুর প্লাস্টিক ও কাগজের মণ্ড নিকাশি ব্যবস্থাকে বিপদে ফেলে।
তা হলে উপায়? গরমে ঘামে ভিজে থাকাই সমাধান? চিকিৎসকদের মতে, সাধারণ রুমাল জলে ভিজিয়ে বার বার মুখ মুছুন। এতে গরমের কষ্ট থেকে মুক্ত থাকবেন। আর মেক আপ তোলার ক্ষেত্রেও পেট্রোলিয়াম জেলি ও ভিজে রুমাল ব্যবহার করুন।
আর মুখ পরিষ্কারের ক্ষেত্রে? গবেষকরা বরং বলছেন মুখ ধোয়ার পুরনো পদ্ধতিই সেরা। স্রেফ সাবান-জল ব্যবহার করা বা ত্বকবিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে কোনও ফেস ওয়াশ ব্যবহার করা অনেক বেশি নির্ভরযোগ্য ও নিরাপদ।