Lifestyle

ঠান্ডা লেগে মাঝরাত্তিরে কানে ব্যথা হলে কী করবেন

১৮ বছর বয়সের মধ্যে প্রায় ৯৩% ছোট ছেলে মেয়ে  কোনও না কোনও সময় কানের ব্যথায় কষ্ট পায়। এটা আমেরিকার পরিসংখ্যান, আমাদের দেশে সংখ্যাটা আরও অনেক বেশি।

Advertisement

সুমা বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০২০ ১৭:৪৯
Share:

১৮ বছর বয়সের মধ্যে প্রায় ৯৩% ছোট ছেলে মেয়ে  কোনও না কোনও সময় কানের ব্যথায় কষ্ট পায়। এটা আমেরিকার পরিসংখ্যান, আমাদের দেশে সংখ্যাটা আরও অনেক বেশি। প্রতীকী চিত্র

কুয়াশামাখা সকালে ঠান্ডার আমেজ। ঋতু পরিবর্তনের এই সময়টায় জীবাণুদের পোয়া বারো। একেই তো কোভিড ভাইরাসের ভয়ে বিশ্বের মানুষ জবুথবু, অন্যদিকে জ্বর-সর্দির পাশাপাশি গলাব্যথা কানের ব্যথায় জেরবার হতে হচ্ছে। ১৮ বছর বয়সের মধ্যে প্রায় ৯৩% ছোট ছেলে মেয়ে কোনও না কোনও সময় কানের ব্যথায় কষ্ট পায়। এটা আমেরিকার পরিসংখ্যান, আমাদের দেশে সংখ্যাটা আরও অনেক বেশি। যখন তখন আচমকা ভয়ানক কানে ব্যথা, তার পর আপনা থেকেই ব্যথা কমে যাওয়া, এই রকম ঘটনার মুখোমুখি হতে হয় কমবেশি প্রায় সব পরিবারের শিশুদেরই।

Advertisement

মাঝরাত্তিরে আচমকা কানের ব্যথায় ঘুম ভেঙে কান্নাকাটি শুধু বাচ্চাদের একচেটিয়া নয়। বড়দেরও কানে মারাত্মক ব্যথা হতে পারে, বললেন নাক কান গলা বিশেষজ্ঞ শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মিডল ইয়ার বা মধ্যকর্ণে সংক্রমণের কারণে কানের পর্দা ফুলে গিয়ে রাতবিরেতে আচমকা ব্যথা শুরু হতে পারে। অনেক সময় নাগাড়ে কানে মোবাইল নিয়ে কথা বললে বা কানের সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন হেডফোন বা ইয়ারফোন ব্যবহার করলে কিংবা চশমার ডাঁটি কানে চেপে বসায় কানের ব্যথায় কষ্ট পেতে হয়। শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় জানালেন যে, কানের যন্ত্রণা ক্রমশ অসহ্য হয়ে উঠলে শিশু হোক বা বড় মানুষ, বয়স ও ওজন অনুযায়ী আইবুজেসিক জাতীয় ব্যথার ওষুধ খেয়ে সাময়িক ভাবে ব্যথা কমাতে হবে। তবে ব্যথা কমে যাওয়া মানেই কিন্তু অসুখ সেরে যাওয়া নয়। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নাক কান গলা বিশেষজ্ঞর পরামর্শ নিয়ে কানে ব্যথার কারণ জেনে সেই মতো চিকিৎসা করানো দরকার।

গ্রামে বা মফস্‌সলে কানে ব্যথার আপৎকালীন চিকিৎসা হিসেবে অনেক সময় কানে গরম তেল দেওয়ার প্রচলন আছে। এই ব্যাপারটা সম্পূর্ণ অবৈজ্ঞানিক। কানে গরম তেল দিলে কানের পর্দা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে শ্রবণক্ষমতা নষ্ট হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে বলে সাবধান করলেন শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়। ভাইরাল সর্দি কাশি জ্বর হলে একই সঙ্গে মধ্যকর্ণে সংক্রমণ হতে পারে। সেই সময় থেকেই কানের মধ্যে অস্বস্তি ও অল্পস্বল্প ব্যথা হতে পারে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এই অবস্থায় কেউই ব্যাপারটাকে সে ভাবে গুরুত্ব দেন না। পরে তা আপনা থেকে সেরে যেতে পারে। আবার আচমকা রাতবিরেতে ভয়ানক ব্যথার ঠেলায় প্রাণ ওষ্ঠাগত হতে পারে।

Advertisement

কানে ব্যথার একটা বড় কারণ ‘অটাইটিস মিডিয়া’ নামের অসুখ। মিডল ইয়ার বা মধ্যকর্ণের সংক্রমণকে ডাক্তারি পরিভাষায় বলে ‘অটাইটিস মিডিয়া’।

নাক কান গলা বিশেষজ্ঞ সুচির মৈত্র জানালেন যে, অনেক সময় পুকুরে বা সুইমিং পুলে সাঁতার কাটলে বা লাফালাফি করলেও কানে জল ঢুকে গিয়ে সংক্রমণ হলে কানে ব্যথার সম্ভাবনা খুব বেড়ে যায়। যাঁরা নিয়মিত পুকুরে বা পুলে সাঁতার কাটেন, তাঁদের কানে ইয়ার প্লাগ লাগিয়ে জলে নামা উচিত। আবার সর্দি জ্বর থেকেও কানের ইউস্টেশিয়ান টিউব ব্লক হয়ে গিয়ে মিডল ইয়ার অর্থাৎ মধ্যকর্ণে সমস্যা হতে পারে। সংক্রমণ হয় বলে পুঁজ জমে যায়। তা বেরতে পারে না। ফলে পর্দার উপর চাপ দেয়। আর এই জন্যেই কানে এত ব্যথা করে। আবার কষের দাঁতের সংক্রমণ বা দন্তক্ষয় থেকেও কানে ব্যথার ঝুঁকি থাকে, বললেন শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়। বার বার কানের সংক্রমণ হলে এবং ঠিক মতো চিকিৎসা না করালে শ্রবণক্ষমতা কমে যায়। মধ্যকর্ণে সংক্রমণ হলে পুঁজ জমে কানের পর্দায় চাপ দেয় বলে ব্যথা করে। এ ক্ষেত্রে কানের পর্দা ফেটে যাওয়ার ঝুঁকি খুব বেশি। তাই কানের পর্দায় একটা ছোট্ট ছিদ্র করে জমে থাকা পুঁজ বের করে দেওয়া হয়। আবার ওয়াক্স অর্থাৎ কানে খোল জমেও ব্যথা হতে পারে। কানে তেল দেওয়া বা বাডস কিংবা সেফটিপিন দিয়ে খোঁচানোর মতো বদ অভ্যেস দূর করা দরকার।

কানে ব্যথার একটা বড় কারণ ‘অটাইটিস মিডিয়া’ নামের অসুখ। মিডল ইয়ার বা মধ্যকর্ণের সংক্রমণকে ডাক্তারি পরিভাষায় বলে ‘অটাইটিস মিডিয়া’। এই রকম হলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ব্যাপারটাকে গুরুত্ব দেওয়া হয় না। অনেক ক্ষেত্রেই কিন্তু কানের পর্দা ফেটে গিয়ে পুঁজ বেরিয়ে যাওয়ায় সাময়িকভাবে ব্যথা কমে যায়। ডাক্তার না দেখালে শোনার ক্ষমতা কমতে শুরু করে। তাই কানে ব্যথাই হোক বা সর্দি কাশির জন্যে কানে তালা লেগে যাওয়া কিংবা কান থেকে পুঁজ বা জলীয় কিছু বেরনো, অবশ্যই নাক কান গলা বিশেষজ্ঞর পরামর্শ নেওয়া উচিত।

আরও পড়ুন: শীতকালে জলপান কমিয়ে দেবেন না

‘ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব পেডিয়াট্রিক্স’-এ প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে জানা গেছে যে, বিশ্বের প্রায় ৩০০ মিলিয়ন মানুষ মধ্যকর্ণের সংক্রমণের কারণে কানের ব্যথায় কষ্ট পান। এঁদের বেশির ভাগই ১৮ বছরের কম বয়সি। এঁদের মধ্যে প্রায় ৬০% মানুষের শ্রবণক্ষমতা কমে যায়। স্কুলে যাওয়া বাচ্চাদের মধ্যে (নার্সারি থেকে উচ্চমাধ্যমিক) ৬৪ %-এর মধ্যে ক্রনিক অটাইটিস মিডিয়া অর্থাৎ কানের সংক্রমণ আছে। তার সঙ্গে শব্দ দূষণ মিলেমিশে শোনার ক্ষমতা কমতে শুরু করে। বধিরতা আটকাতে কানের যে কোনও সমস্যায় চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

আরও পড়ুন: ঋতু পরিবর্তনের জ্বর সতর্ক থাকুন অভিভাবকেরা​

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন