covid-19

করোনাকে হয়তো পুরোপুরি ধ্বংস করা যাবে না, মত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার

‘হু’-এর এমন ঘোষণা আপাত ভাবে অতিমারি-যুদ্ধে যোগ করেছে আরও আশঙ্কা।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০২০ ১৬:০০
Share:

কোভিড-১৯ ত্রাসে ত্রস্ত পৃথিবী। ছবি: এপি।

মুক্তি নেই কোভিড-১৯ থেকে। জনজীবনে আর পাঁচটা ফ্লু ভাইরাসের মতোই এই ভাইরাসও থেকে যাবে অপ্রতিরোধ্য হয়ে। এমনই শঙ্কার কথা জানাল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)। তাদের মতে, কোভিড-১৯-এর সঙ্গে লড়াই করে বাঁচাই আমাদের ভবিতব্য। এই কৌশলই এখন শিখতে হবে তামাম বিশ্ববাসীকে।

Advertisement

১৩ মে-র পরিসংখ্যান অনুযায়ী গোটা বিশ্বে প্রায় সাড়ে ৪৩ লক্ষ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত। ইতিমধ্যেই মৃত্যু হয়েছে প্রায় তিন লক্ষ মানুষের। বিশ্ব জুড়েই করোনার প্রতিষেধক আবিষ্কারের জন্য চলছে নিরন্তর গবেষণা। ভাইরাসের শৃঙ্খল ভেঙে ফেলতে লকডাউন চালু করে করোনা রুখতে চেয়েছে বিশ্ব। পুরোপুরি সাফল্য আসেনি তাতে। লকডাউনে তেমন কাজ না হওয়ায় এ বার ধীরে ধীরে সব দেশই লকডাউনের নিষেধাজ্ঞা শিথিল করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাওয়ার পথে হাঁটতে চাইছে। একই পথে হাঁটছে ভারতও। ২৪ মার্চ রাত ১২ টা থেকে লকডাউন জারি হয়েছে এখানে। তৃতীয় পর্যায়ের লকডাউনও প্রায় শেষের মুখে। অথচ সংক্রমণ কমেনি একটুও। বরং যত দিন যাচ্ছে, সংক্রমণ বেড়ে চলেছে এ দেশেও। এই অবস্থায় ‘হু’-এর এমন ঘোষণা আপাত ভাবে অতিমারি-যুদ্ধে যোগ করেছে আরও আশঙ্কা।

জেনিভায় একটি ভার্চুয়াল সাংবাদিক বৈঠকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আপৎকালীন ব্যবস্থা বিষয়ক বিশেষ়জ্ঞ মাইকেল রায়ান বলেছেন, ‘‘এই প্রথম বার সম্পূর্ণ নতুন ও অজানা একটি ভাইরাস মানুষের শরীরে বাসা বেঁধেছে। তাই এর থেকে এখনই যে রেহাই পাব তা নয়, আবার কবে আমরা এই ভাইরাসকে পরাস্ত করতে পারব, তা অনুমান করাও খুব কঠিন।’’ শুধু তাই নয়, রায়ানের দাবি, এই ভাইরাস আমাদের সঙ্গে থাকতে থাকতে একটি স্থানীয় ভাইরাসে পরিণত হবে। তার শক্তিক্ষয় হবে ঠিকই, কিন্তু তাকে শেষ করে ফেলা যাবে না।

Advertisement

আরও পড়ুন: থ্যালাসেমিয়া ও রক্তের অসুখে করোনার ঝুঁকি কতটা? উপসর্গই বা কী?

করোনাকে সঙ্গে নিয়েই যুঝতে হবে, দাবি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার। ছবি: পিটিআই।

রায়ান এইচআইভি-র সঙ্গে এর তুলনা টেনে বলেছেন, এইচআইভি-কে শেষ করা যায়নি, তেমনই করোনাকেও শেষ করে ফেলা যাবে না বলেই মনে করছে ‘হু’। তবে এইচআইভি-র মতোই এই ভাইরাসকেও আটকানোর পদ্ধতি আমরা জানব। এর প্রতিষেধক এসে গেলে এই ভাইরাসের ক্ষমতাও অনেকটা হ্রাস হবে।

রায়ানের কথায় সহমত পোষণ করছেন ভারতীয় ভাইরোলজিস্ট ও চিকিৎসক -গবেষকরাও। ইনস্টিটিউট অব জেনোমিক্স অ্যান্ড ইন্টিগ্রেটিভ বায়োলজি-র প্রাক্তন প্রতিষ্ঠাতা-ডিরেক্টর সমীর কে ব্রহ্মচারীর মতে, করোনা এতই শক্তিশালী ভাইরাস যে এক জন সংক্রমিত এক মাসে চারহাজার লোককে সংক্রমিত করতে পারেন। তাই ওই ভাইরাসের বিরুদ্ধে জনগোষ্ঠীতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা (হার্ড ইমিউনিটি) গড়ে তোলা প্রয়োজন। দেশে একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক মানুষ যখন এই একই ভাইরাসে আক্রান্ত হবেন ও ভাইরাসটিকে প্রতিরোধের ক্ষমতা অর্জন করবেন, তখনই সেটি দুর্বল হয়ে পড়বে। কিন্তু কোনও ভাবেই একে নিশ্চিহ্ন করা যাবে না।

তা হলে কি আর পাঁচটা ফ্লু-জনিত জ্বর-সর্দি-কাশির মতোই এই ভাইরাসেও যখন তখন আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা এ বার থেকে চলতেই থাকবে?

‘‘অনেকটা তাই’’, জানালেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সুবর্ণ গোস্বামী। তাঁর অভিমত, ‘‘এমন দিন ভবিষ্যতে আসবে, যখন আমার একটু করোনা হয়েছিল বলে স্কুল-কলেজ বা অফিসে ছুটি নিতে হবে। তবে তত দিনে প্রতিষেধক বেরিয়ে গেলে ও তা নেওয়া থাকলে এই অসুখ হয়তো পাঁচ-ছ’দিন ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো জ্বরে ফেলে রেখে, কাশিতে ভুগিয়ে ছেড়ে দেবে। বাড়াবাড়ি তাঁদেরই হবে যাঁদের অন্য অসুখ রয়েছে বা যাঁদের বয়স বেশি। হয়তো জ্বর-কাশি কমাতে তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি হতেও হবে, কিন্তু প্রাণসংশয়ের ঝুঁকি কমবে অনেক গুণ। প্রতিষেধক নেওয়া থাকলে তো আরওই সহজ হবে চিকিৎসা। আর পাঁচটা সাধারণ ফ্লুয়ের মতোই এর আচরণ হবে। তখন এর সংক্রমণ ক্ষমতাও কমে যাবে অনেকখানি।’’

আরও পড়ুন: ফুসফুস, কিডনি, হার্ট... কোভিডে আক্রান্ত হলে সব ক্ষেত্রেই হতে পারে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি

ভাইরাস দুর্বল না হওয়া পর্যন্ত কঠোর নিয়ম মেনে চলতে হবে। ছবি: পিটিআই।

ভাইরাস বিশেষজ্ঞ ও জীববিজ্ঞানী সৌম্যপ্রসাদ রায়ের মতে, এই ভাইরাসের বিবর্তনের (মিউটেশনের) উপর নির্ভর করেই একে হারাতে হবে। সাধারণত, যে সব ভাইরাসের মারণক্ষমতা বেশি হয়, তাদের সংক্রমণ ক্ষমতা কম থাকে। বিবর্তনের নিয়ম মেনে কম মারণক্ষমতার ভাইরাসই একমাত্র রয়ে যায়। যেমন ইনফ্লুয়েঞ্জা। এই কোভিডও কম মারণক্ষম। তাই এটিও ভাইরাসের চরিত্রগত নিয়ম মেনে এক সময় থেকে যাবে। তবে প্রতিষেধক বেরলে অথবা হার্ড ইমিউনিটি তৈরি হলে এই ভাইরাসের প্রকৃতিগত শক্তিও কমবে। তখন এটি অনেকটা সাধারণ ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের মতো আচরণ করবে।’’

সংক্রামক ব্যাধি বিশেষজ্ঞ অমিতাভ নন্দীও রায়ানের মতকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছেন। তাঁর মতে, পোলিয়ো বা চিকেন পক্সের ক্ষেত্রে ভ্যাকসিন দিয়ে এই ‘হার্ড ইমিউনিটি’ কৃত্রিম ভাবে তৈরি করা হয়েছিল। স্বাভাবিক ভাবে এই ইমিউনিটি তৈরি করতে হলে মানুষকে ভাইরাসের সংস্পর্শে আসতে হবে। তবে ধীরে ধীরে এই ভাইরাসের প্রকোপ কমবে। কিন্তু তা একেবারে নিশ্চিহ্ন করা যাবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন