অপারেশন থিয়েটারে চিকিৎসকেরা নীল বা সবুজই কেন পরেন? ছবি: এআই সহায়তায় প্রণীত।
অপারেশন কক্ষে ঢোকার আগে নীল বা সবুজ রঙের অ্যাপ্রনই পরতে দেখা যায় শল্যচিকিৎসকদের। অপারেশন থিয়েটারের জন্য বরাদ্দ পোশাকের রং এমনই। কখনও মনে হয়েছে কি এর কারণ কী? চিকিৎসকদের জন্য বরাদ্দ পোশাকের রঙের নেপথ্যেও রয়েছে কিছু বৈজ্ঞানিক কারণ।
চিকিৎসকদের পোশাক বা মাস্কের রং বলে নয়, খেয়াল করে দেখবেন, অপারেশন থিয়েটারের দেওয়ালের দেওয়াল, রোগীর শয্যায় ব্যবহৃত চাদর, সবই সবুজ রঙের। এমনকি রোগীকে যে পোশাক পরানো হয়, তার রংও হয় নীল।
এখন মনে হতেই পারে, এত রং থাকতে সবুজ বা নীল রংকই বেছে নেওয়া হল কেন। এর কারণ আছে।
নীল ও সবুজ রঙে চোখের আরাম হয়। এখানে আলোর প্রতিফলনের বিষয়টি খতিয়ে দেখে নেওয়া যাক। লাল রঙের তরঙ্গদৈর্ঘ্য খুব বেশি। এই রং রেটিনার উপর চাপ বাড়িয়ে দিতে পারে। চিকিৎসকেরা সর্ব ক্ষণই অপারেশন কক্ষে রোগীর রক্ত দেখেন। টানা ঘণ্টার পর ঘণ্টা অস্ত্রোপচারের পর দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হয়, দৃষ্টিবিভ্রমও হতে পারে। তাই এর থেকে বাঁচাতে পারে নীল বা সবুজ রং। অপারেশন কক্ষের রং বা রোগীর বিছানার রং সে কারণেই সবুজ রাখা হয়, যাতে দৃষ্টিবিভ্রম না হয়।
আলোক বর্ণালির কেন্দ্রে থাকে সবুজ রং। এর তরঙ্গদৈর্ঘ্য ৪৯৫ ন্যানোমিটার থেকে ৫৭০ ন্যানোমিটার। চোখের জন্য এই রং সবচেয়ে বেশি সহনশীল। অন্য দিকে, নীল রঙের তরঙ্গদৈর্ঘ্য ৪৫০ ন্যানোমিটার থেকে ৪৯৫ ন্যানোমিটার। এই রংও সইতে পারে চোখ। চিকিৎসা বিজ্ঞান বলে, সবুজ মানে প্রকৃতির রং। রেটিনাও এই রঙের প্রতি সংবেদনশীল। সবুজ রং মনের চাপ কমাতে পারে, ক্লান্তিও দূর করতে পারে।
সবুজ বা নীল রং হল লাল রঙের পরিপূরক। ক্রমাগত লাল দেখতে দেখতে চোখে যে ক্লান্তি আসে, তা শুষে নিতে পারে সবুজ ও নীল রঙের প্রতিফলন। পাশাপাশি, এই রং দু'টি মনোযোগ বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে। ৮-১০ ঘণ্টার বেশি যে অস্ত্রোপচার চলে, সেখানে দৃষ্টিশক্তি ও মনের উপর চাপ বাড়ে। এই চাপ কমাতে সহায়ক হয় নীল ও সবুজ রং। এখন মনে হতেই পারে, সাদা পোশাক কেন নয়। সাদা পোশাকের তুলনায় সবুজ বা নীল পোশাকে আলো কম প্রতিফলিত হয়। সাদা পোশাক অত্যন্ত উজ্জ্বল হয় এবং অপারেশন থিয়েটারের তীব্র আলোর কারণে চোখ ধাঁধিয়ে যেতে পারে। নীল বা সবুজ রঙে এমন হওয়ার সম্ভাবনা নেই।