বৃহস্পতিবার তোলা নিজস্ব চিত্র।
রাজ্য জুড়ে জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের দাপাদাপি। কিন্তু শাসক দল পরিচালিত বীরভূমের সদর শহর সিউড়ি পুরসভার এ ব্যাপারে তেমন কোনও ভাবনা আছে বলে মনে হয় না। এমনই দাবি শহর বাসির একাংশের। তাঁদের অভিযোগ, কলকাতা-সহ রাজ্যের সর্বত্র যখন শুয়োর ধরা চলছে, তখন সিউড়ি শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ডের লোকালয়ে শুয়োরের অবাধ বিচরণ। অভিযোগ স্বীকার করে নিয়েছেন উপ-পুরপ্রধান উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়। তাঁর দাবি, ইতিমধ্যেই পুর কর্তৃপক্ষ শুয়োর পালকদের মাইকিং করে সতর্ক করে দিয়েছে।
জেলার সব থেকে পুরনো পুরসভা সিউড়ি। অথচ শহরের বিভিন্ন এলাকায় এখনও নোংরা আবর্জনা আর ঝোপে-ঝাড়ে ভর্তি। এখনও নিম্ন বিত্ত লোকজনের শৌচাগার নেই। তাঁদের অধিকাংশই ওই সব ঝোপে-ঝাড়ে প্রাতঃকর্ম সারেন। এই সব নোংরা আবর্জনা ও মল বিষ্ঠার কারণে শহরে দিন দিন শুয়োরের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে ১৪, ৬, ১০, ১২, ১৩, ৩, ১৭ এই ওয়ার্ডগুলিতে।
এই সব এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, এলাকায় অবাধে শুয়োর ঘুরছে। চারিদিকে এত রোগব্যাধি, জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের আতঙ্ক, তবু কোনও কিছুতেই হেলদোল নেই শুয়োর পালকদের। এনসেফ্যালাইটিস নিয়ে আতঙ্কে আছি। কিন্তু কাউকে কিছু বলার উপায় নাই। প্রতিবাদ করলে দল বেঁধে বাড়ি চলে আসবে।
সিউড়ি-সাঁইথিয়া রাস্তার ধারে ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের দত্ত পুকুরের পাড়ে বিশাল এলাকা জুড়ে ঝোপ ঝাড়ে ভর্তি রয়েছে। রাস্তার দু’ধারে পাশাপাশি আরও বেশ কয়েকটি পুকুর আছে। ওই সব পুকুর পাড় লাগোয়া ঝোপ ঝাড়ের পচা আবর্জনাতেও শুয়োরের উৎপাত সারাদিন নজরে পড়ার মতোই। দত্তপুকুর পাড়ের রাস্তার উলটো দিকের ওষুধ ব্যাবসায়ী মনোরঞ্জন দত্ত বলেন, “প্রায় সারাদিন দোকানের সামনে ও পিছন দিকে শুয়োর ঘুরে বেড়ায়। একদিন সকালে পিছনের দরজা খুলে জল দেওয়ার পর দরজা লাগাতে ভুলে যাই। কিছুক্ষনের মধ্যেই শুয়োর ঢুকে বহু মাল পত্র নষ্ট করে দিয়েছিল। এসব চুপচাপ মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় নেই।”
এলাকার বাসিন্দা নিশীত দে বলেন, “মাঝে মধ্যেই বাড়ির সামনে শুয়োর ঘুরে বেড়ায়। সে জানালা খুলতে পারি না। রোগের ভয় তো আছেই। তাছাড়া ভীষণ দুর্গন্ধ। ৫ নম্বর ওয়ার্ডের পাইক পাড়ার বাসিন্দা উজ্জ্বল গুপ্ত, মনীন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়রা বলেন, “এই পাড়ায় পুরসভার ময়লা ফেলার ভ্যাট আছে। ওই ভ্যাটে খাবারের দোকানের আবর্জনা ফেলা হয়। সেই খাবার খেতে সারাদিনে প্রচুর শুয়োর আসে। দুর্গন্ধে থাকা যায় না। কিন্তু কিছু করার নাই।”
সিউড়ি ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কংগ্রেসের ইয়াসমিন আখতার ও ১৬ নম্বরের কাউন্সিলার দীপক দাসরা (বিজেপি) বলেন, “রাজ্যে এনসেফ্যালাইটিসের শুরুতেই শহরের শুয়োর প্রসঙ্গে পুর-প্রধানকে মৌখিক ভাবে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলা হয়েছিল। কিন্তু উনি কোনও কথা কানে নেননি।”
পুরপ্রধান উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায় বাইরে থাকায় এ ব্যাপারে উপ-পুরপ্রধান উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় বলেন, “এই শহর বহু প্রাচীন। বহু আদিবাসী, নিম্ন শ্রেণি ও নিম্ন বিত্তের মানুষ জনেরা বাস করেন। এক সময় তাঁদের অনেকেই শুয়োর প্রতি পালন করতেন জীবন জীবিকার জন্য। এখন সেই সংখ্যাটা অনেক কমে গেছে। ইতিমধ্যেই মাইকিং করে তাঁদেরকে সতর্ক করা হয়েছে।”