অন্তর্বিভাগে পাখা না থাকায় হাতপাখাই ভরসা রোগীদের। —নিজস্ব চিত্র।
সঠিক পরিকাঠামো না তৈরি করে হাসপাতাল চালু করায় বিপাকে পড়ে গিয়েছেন রোগীরা। গত ২৬ নভেম্বর মালদহ থেকে ‘রিমোট’ টিপে সামসি গ্রামীণ হাসপাতালের অসমাপ্ত নতুন ভবন উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পরে পাঁচ মাস কেটে গেলেও হাসপাতালের ভবনের কাজ পুরোপুরি শেষ হয়নি। এ কাজের দ্বায়িত্বে থাকা পূর্ত দফতরের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, অর্থাভাবে পরিকাঠামোর কাজ বাকি রয়েছে।
সামসি গ্রামীণ হাসপাতালে নেই অনেক কিছুই। যেমন সীমানা প্রাচীর না থাকায় রাতে হাসপাতালে অবাধে ঘুরে রেড়ায় শেয়াল-কুকর। আতঙ্কে থাকেন রোগীরা। নিকাশি নালা তৈরি না হওয়ায় বর্ষায় ভাসে গোটা চত্বর। হাসপাতালে পাখার ব্যবস্থা না থাকায় গরমে রোগীর ভরসা হাতপাখা। নেই পানীয় জলের ব্যবস্থাও। তাই বাধ্য হয়েই রোগীর আত্মীয়দের বাড়ি থেকে জল নিয়ে আসতে হয়। অন্যথায় জল কিনতে হয়। নেই যথেষ্ট চিকিৎসকও। তাও উদ্বোধন করে অন্তর্বিভাগ ও বহির্বিভাগ চালু করে দেওয়ায় সমস্যা বেড়েছে। হাসপাতালের নতুন ভবন তৈরি করে পূর্ত দফতর। অর্থাভাবে পরিকাঠামোগত কিছু কাজ করা যায়নি বলে পূর্ত দফতর জানিয়েছে।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা যায়, ২০০৬ সালে বাম আমলে সামসি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রকে উন্নীত করা হয় গ্রামীণ হাসপাতালে। সেখানে সাত জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও রয়েছেন দু’জন। চিকিৎসক ফাল্গুুনী বালা বলেন, “চিকিৎসকের সংখ্যা বেশি হলে এর চেয়ে ভাল পরিষেবা দেওয়া যেত।” এ ছাড়াও, প্যাথোলজি বিভাগ চালু হয়নি। এক্স রে মেশিন না থাকায় রোগীদের বাইরে পাঠানো হয়। ৩০টি শয্যা চালুর কথা থাকলেও রয়েছে ১২টি শয্যা। রোগী বেশি হলে মেঝেয় থাকতে হয় তাঁদের। এ ছাড়া প্রতিদিন বহির্বিভাগে গড়ে ৪০০ রোগী আসেন। অন্তর্বিভাগে রোগীদের অর্ধেকই প্রসূতি হলেও নেই স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ। দোতালার ভবন সম্পূর্ণ না হওয়ায় অপারেশন থিয়েটারও চালু হয়নি। সামসি নাগরিক উন্নয়ন মঞ্চের তরফে মহম্মদ আফাজুদ্দিন, মোশারফ হোসেন বলেছেন, “দীর্ঘ আন্দোলনে সামসি গ্রামীন হাসপাতাল হয়েছে। কিন্তু পরিষেবা পেতে আরও কত দিন অপেক্ষা করতে হবে কে জানে।”
মালদহের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক দিলীপ মণ্ডল অবশ্য বলেন, “সামসি গ্রামীণ হাসপাতালের ভবন তৈরির কাজ প্রায় শেষ। বিদ্যুতের ব্যবস্থা-সহ পরিকাঠামোগত অল্প কিছু কাজ বাকি থাকতেই পূর্ত দফতর আমাদের তা হস্তান্তর করে। ভবন তৈরি হয়ে যাওয়ায় উদ্বোধনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। দ্রুত যাতে হাসপাতালের পূর্ণ পরিকাঠামো গড়ে ওঠে সে চেষ্টা করা হচ্ছে।” তিনি জানান, গরমে রোগীর সমস্যার কথা ভেবে অবিলম্বে রোগী কল্যাণ সমিতির তহবিল থেকে ওই হাসপাতালে পাখার ব্যবস্থা করা হবে। জলের সমস্যার সুরাহা করা হবে বলে তিনি রোগীদের আশ্বাস দেন। পূর্ত দফতরের (ভবন) মালদহের সহকারী বাস্তুকার সুভাষ মণ্ডল বলেন, “ওখানে বরাদ্দ অর্থের বাইরেও কাজ করা হয়েছে। বকেয়া না মেলায় বাকি কাজ করা যায়নি। সেই জন্য রাজ্যের কাছে টাকা চেয়ে পাঠানো হয়েছে।”