আস্থা নেই রাজ্যে, ট্রমা সেন্টার বানাবে কেন্দ্রই

চুক্তি হলেও শুরু হয়নি কাজ। তাই রাজ্যের উপরে আর ভরসা নেই। কেন্দ্রীয় সরকার এ রাজ্যে ট্রমা সেন্টার তৈরির যাবতীয় দায়িত্ব নিজেদের হাতেই রাখল। মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ওই ট্রমা সেন্টারটি নির্মাণ করবে কেন্দ্রীয় পূর্ত দফতর। চিকিৎসক ও অন্য চিকিৎসাকর্মী নিয়োগের একটা বড় অংশও থাকবে কেন্দ্রের হাতে। তবে সব কিছু শেষ হওয়ার পরে ট্রমা সেন্টার চালানোর দায়িত্ব রাজ্যের হাতেই তুলে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের কর্তারা।

Advertisement

সোমা মুখোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:৩৩
Share:

চুক্তি হলেও শুরু হয়নি কাজ। তাই রাজ্যের উপরে আর ভরসা নেই। কেন্দ্রীয় সরকার এ রাজ্যে ট্রমা সেন্টার তৈরির যাবতীয় দায়িত্ব নিজেদের হাতেই রাখল।

Advertisement

মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ওই ট্রমা সেন্টারটি নির্মাণ করবে কেন্দ্রীয় পূর্ত দফতর। চিকিৎসক ও অন্য চিকিৎসাকর্মী নিয়োগের একটা বড় অংশও থাকবে কেন্দ্রের হাতে। তবে সব কিছু শেষ হওয়ার পরে ট্রমা সেন্টার চালানোর দায়িত্ব রাজ্যের হাতেই তুলে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের কর্তারা।

স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয় কেন্দ্র-রাজ্যের যৌথ তালিকায় রয়েছে। রাজ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পে যা টাকা আসে, তা ব্যয় করে রাজ্য সরকারই। কিন্তু এ ক্ষেত্রে কেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক ট্রমা সেন্টার তৈরির যাবতীয় দায়িত্ব নিজেরা নিচ্ছে?

Advertisement

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের এক কর্তা জানাচ্ছেন, “এর আগে রাজ্যে পাঁচটি ট্রমা সেন্টার তৈরির ব্যাপারে কেন্দ্রের সঙ্গে চুক্তি হয়েছিল। কিন্তু ওই প্রস্তাবিত পাঁচটি ট্রমা সেন্টারের একটিও এখনও কাজ শুরু করেনি। তাই এ বার রাজ্যের হাতে ষষ্ঠ ট্রমা সেন্টারটি তৈরির দায়িত্ব দিতে রাজি নই আমরা।”

স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে খবর, এই মুহূর্তে কেন্দ্র-রাজ্য যৌথ উদ্যোগে শুরু হওয়া পাঁচটি ট্রমা সেন্টারের একটিও কাজ শুরু করেনি। ওই পাঁচটি ট্রমা সেন্টার হওয়ার কথা খড়্গপুর, আসানসোল, ইসলামপুর, শিলিগুড়ি ও বর্ধমানে। চার বছর আগে সেগুলি নিয়ে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। ওই পাঁচটির একটিও কাজ শুরু করেনি কেন? খোঁজ নিয়ে জানা গেল, খড়্গপুরে পরিকাঠামো প্রস্তুত। কিন্তু লোকাভাবে কাজ শুরু হয়নি। আসানসোলে ভবন তৈরি হয়ে পড়ে রয়েছে। নিয়োগের কাজ বাকি। ইসলামপুরে ভবনের কাজ অনেকটাই শেষ। কিন্তু পরিকাঠামো তৈরি হয়নি। বর্ধমান এবং শিলিগুড়িতে কাজ বিশবাঁও জলে।

পথ-দুর্ঘটনা বা কোনও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে গুরুতর আহতদের দ্রুত এবং যথাযথ চিকিৎসার ক্ষেত্রে ট্রমা সেন্টার একটি প্রয়োজনীয় পরিষেবা। বামফ্রন্ট আমলেই কলকাতার আরজিকর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ট্রমা সেন্টার তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু আট বছরেও সেটি চালু হয়নি। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকারের টাকায় প্রস্তাবিত একটি ট্রমা সেন্টারও কাজ শুরু করতে পারেনি। এই পরিস্থিতিতে মালদহের ট্রমা সেন্টারটি শুধু যে তারা নিজেরা করবে তাই নয়, ওই প্রকল্পের কাজ কেমন চলছে তা দেখার জন্য ভিন্ রাজ্য থেকে এক জন পরিদর্শকও নিয়োগ করেছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। ওই পরিদর্শকের নজরদারিতেই কাজ হবে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক চায়, দু’বছরের মধ্যে মালদহের ট্রমা সেন্টারটি চালু হয়ে যাক। দু’বছরের মধ্যে যে এই ধরনের প্রকল্পের কাজ শেষ করা যায়, তা রাজ্যকে দেখিয়ে দিতে চায় কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক।

এই সিদ্ধান্তকে অপমানজনক বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য-কর্তাদের একটা বড় অংশ। স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য, “ওরা ভাবছে যত কাজ ওরাই করছে। আমরা কি বসে আছি? এই কাজটা কি করতে পারি না? আমরা সব পারি। কিন্তু ওরা করতে দেবে না।” কিন্তু রাজ্যে এখন কেন্দ্রের টাকায় যে পাঁচটি ট্রমা সেন্টার নির্মীয়মাণ অবস্থায় রয়েছে, সেগুলির কী হবে? কেন্দ্র স্পষ্ট কিছু জানায়নি। সুশান্তবাবু বলেন, “ওরা কি আগের সরকারের কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইবে? মনে তো হয়, চাইবে না। আমরা অসহায়। যত ক্ষণ না বকেয়া টাকা আসছে, তত ক্ষণ বুঝতে পারছি না ওরা কী চাইছে।” শুধু কেন্দ্রীয় সরকারের অনুদানে তৈরি হওয়া ট্রমা সেন্টারগুলি নয়, কলকাতার সরকারি হাসপাতালগুলিতে রাজ্য সরকারের টাকায় যে ট্রমা সেন্টার তৈরির পরিকল্পনা হয়েছিল, সেগুলির একটিও কেন তৈরি হয়নি তার কোনও ব্যাখ্যা নেই রাজ্যের স্বাস্থ্য-কর্তাদের কাছে। ২০০৮-এ সালে ফ্রন্ট সরকার আরজিকরে ট্রমা সেন্টার গড়ার কথা ঘোষণা করেছিল। বলা হয়েছিল, ২০১১-র মধ্যে ২০০ শয্যার ওই কেন্দ্রটি চালু হবে। এ জন্য ১৬ কোটি টাকা অনুমোদন করা হয়। কিন্তু কাজ কিছুই এগোয়নি। ২০১১-য় ক্ষমতায় এসে তৃণমূলও জানায়, ২০১৪-র মধ্যেই আরজিকরে ট্রমা সেন্টার হবে। কিন্তু কবে তা হবে, বলতে পারছেন না স্বাস্থ্য-কর্তারা। স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা বলেন, নিউরোলজিস্ট, নিউরো সার্জন, অর্থোপেডিক, ইউরোলজিস্ট, প্লাস্টিক সার্জন, অ্যানাস্থেটিস্ট, আলাদা অপারেশন থিয়েটার, আলাদা আইসিসিইউ সবই দরকার ট্রমা সেন্টারের জন্য। ওই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা শুধু ট্রমা সেন্টারেই ডিউটি করবেন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের যা আকাল চলছে রাজ্যে তাতে এটা সম্ভব হবে কী ভাবে? সেটাই বড় প্রশ্ন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন