হাসপাতালের ওয়ার্ড থেকে ইনজেক্শন চুরি করে বাইরে বিক্রির এক চক্রের সন্ধান পেল পুলিশ। ঘটনাটি ঘটেছে, রাজ্যের একমাত্র সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল এসএসকেএম-এর গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি বিভাগে। ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে দু’জনকে। ধৃতদের নাম রাকেশ দাস ও চঞ্চল পালিত। সঞ্জয় দাস নামে আরও এক অভিযুক্ত পলাতক।
পুলিশ জেনেছে, ওই তিন জন এক বেসরকারি নিরাপত্তারক্ষী সংস্থার হয়ে এসএসকেএমে কমর্রত ছিলেন। গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি বিভাগের চিকিৎসক অভিজিৎ চৌধুরীর অভিযোগের ভিত্তিতে ভবানীপুর থানার পুলিশ ওই তিন জনকে গ্রেফতার করে।
পুলিশ জানায়, ওই বিভাগে চিকিৎসক অভিজিৎ চৌধুরীর অধীনে ভর্তি ছিলেন পূর্ব মেদিনীপুরের বাসিন্দা বিশ্বনাথ মণ্ডল। বৃহস্পতিবার সকালে চিকিৎসক বিশ্বনাথবাবুর দুই আত্মীয়কে একটি ইনজেক্শন আনতে বলেন। তাঁরা ইনজেক্শনটি কিনতে বিভাগ থেকে নেমে আসেন। অভিযোগ, তখন তাঁদের সঙ্গে ভাব জমান সঞ্জয় দাস নামে এক ব্যক্তি। তাঁর সঙ্গে ছিলেন রাকেশ এবং চঞ্চল। তাঁরা নিজেদের হাসপাতালের গ্রুপ ডি কর্মী হিসেবে পরিচয় দেন।
রোগীর আত্মীয়েরা পুলিশকে জানিয়েছেন, ওইতিন জন জানতে চান তাঁদের কী ওষুধ প্রয়োজন। ইনজেক্শনের নাম জানতে পেরে অভিযুক্তেরা রোগীর আত্মীয়দের বলেন অনেক কম দামেই তাঁরা ওই ইনজেক্শন এনে দিতে পারবেন। এতেই রাজি হয়ে যান বিশ্বনাথবাবুর আত্মীয়েরা। হাসপাতাল সূত্রে খবর, ওই ইনজেক্শনের বাজার মূল্য প্রায় চার হাজার টাকা। নিরাপত্তারক্ষীরা রোগীর পরিজনেদের কাছে দাম বাবদ নেন আড়াই হাজার টাকা।
প্রাথমিক তদন্তের পুলিশ জানিয়েছে, টাকা পেয়েই অভিযুক্তেরা রোগীর আত্মীয়দের হাতে তুলে দেন ইনজেক্শন। আত্মীয়রা তা নিয়ে চিকিৎসক অভিজিৎ চৌধুরীর কাছে যান। পুলিশের দাবি, ইনজেক্শনটি দেখে সন্দেহ হয় চিকিৎসকের। তিনি দেখেন ইনজেকশন-এর মোড়কে লেখা ‘নট ফর সেল’ অর্থাৎ বিক্রির জন্য নয়। তখন তিনি রোগীর আত্মীয়দের কাছে জানতে চান কোথা থেকে তাঁরা ওষুধ কিনেছেন। রোগীর আত্মীয়েরা পুরো ঘটনাই জানান তাঁকে।
পুলিশ জানিয়েছে, চিকিৎসকের কাছে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছন হাসপাতালের ফাঁড়ির পুলিশ অফিসারেরা। তাঁরাই রাকেশ ও চঞ্চলকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যান। ধৃতেরা জেরায় জানান, গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি বিভাগের ফ্রিজ থেকে ওই ইনজেকশন চুরি করেছিলেন তাঁরা। আগেও ফ্রিজ থেকে ‘নট ফর সেল’ লেখা ওষুধ সরিয়ে ধৃতেরা বিক্রি করেছিল বলে পুলিশ জেনেছে। ওই চক্রের সঙ্গে হাসপাতালের কোনও কর্মী জড়িত কী না খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
তবে হাসপাতালের একটি ওয়ার্ডের ফ্রিজ থেকে কী ভাবে কোনও বহিরাগত ওষুধ বা ইঞ্জেকশন সরিয়ে নিতে পারল, প্রশ্ন উঠেছে সে নিয়েও। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, তাঁরা বিষয়টির তদন্ত করবেন।