পুরুলিয়া দেবেন মাহাতো সদর হাসপাতালের ‘ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট’ বা সিসিইউ-এর নির্মাণ কাজের অগ্রগতি সন্তোষজনক নয়। বৃহস্পতিবার এই ইউনিটের কাজকর্ম সরজমিনে খতিয়ে দেখতে এসে এমনই মত পোষণ করেছেন রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা। কাজের গতি দেখে তাঁরা শুধু নিজেদের অসন্তোষই ব্যক্ত করেননি, নির্দেশ দিয়েছেন, আগামী দু’সপ্তাহের মধ্যে পুরো ইউনিটের কাজ শেষ করতে হবে।
এ ব্যাপারে সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও নির্মাণ কাজের দায়িত্বে থাকা পূর্ত দফতরের কর্তাদের কোনও অজুহাতই শুনতে চাননি রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্তারা। বরং স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়ে গিয়েছেন, সময়সীমার মধ্যেই শেষ করতে হবে।
প্রশাসন সূত্রের খবর, গত বছর সেপ্টেম্বরে জেলায় প্রশাসনিক বৈঠক করতে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই হাসপাতালে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট গড়ার সিদ্ধান্ত নেন। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরকে দ্রুত এই কাজ শেষ করার নির্দেশ দেন তিনি। এই কাজের জন্য এক কোটি টাকার বেশি বরাদ্দও করে স্বাস্থ্য দফতর। দফতর সূত্রের খবর, পুরুলিয়া সদর হাসপাতালের দোতলায় ১২ শয্যার এই সিসিইউ গড়ে ওঠার কথা। লোকসভা ভোটের আগেই কাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, ভোটের আগে তো দূর অস্ত, এখনও কাজ শেষ হয়নি।
লোকসভা ভোটের প্রচারে এই স্বাস্থ্য পরিষেবার বিষয়টিও উঠেছিল। ঝালদা ২ ব্লকের বামনিয়ায় নির্বাচনী জনসভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে সিসিইউ পরিষেবা চালু হতে চলেছে। তৃণমূল নেত্রীর এই ঘোষণাকে কটাক্ষ করে বাঘমুণ্ডির বিধায়ক তথা জেলা কংগ্রেস সভাপতি নেপাল মাহাতোর প্রশ্ন ছিল, হাসপাতালে সিসিইউ চালু করতে কত দিন সময় লাগে। জেলার মানুষ অনেক দিন ধরেই শুনছেন এই পরিষেবা নাকি চালু হতে চলেছে।
রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের পক্ষে এ ধরনের নির্মাণকাজ দেখভালের দায়িত্বে থাকা মনিটরিং অফিসার সুমন বিশ্বাস-সহ তিন জনের প্রতিনিধিদল বৃহস্পতিবার সদর হাসপাতালে আসেন কাজের অগ্রগতি দেখতে। কিন্তু, কাজ ঢিমেতালে চলছে দেখে তাঁরা যারপরনাই অসন্তুষ্ট হন। তাঁরা জেলার স্বাস্থ্য কর্তাদের জানিয়ে দেন, কাজের গতি বাড়াতে হবে। জেলা স্বাস্থ্যকর্তারা তাঁদের জানান, যে সংস্থা নির্মাণ কাজের দায়িত্বে রয়েছে, তারাই কাজে ঢিলেমি করছে। প্রতিনিধিদল কোনও অজুহাত শুনতে চায়নি। কাজ যে সময়সীমৈারৈ চেয়ে পিছিয়ে রয়েছে তা মেনে নিয়েছেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক মানবেন্দ্র ঘোষ। তবে, তাঁর বক্তব্য, “কাজ শুরু হয়েছিল গত ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে। নিবার্চনের আগে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। নানা কাজে একটু দেরি হয়েছে। আসলে পূর্ত দফতরই আমাদের এখনও হস্তান্তর করেনি।” পূর্ত দফতরের এগ্জিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার তরুণকুমার চক্রবর্তী বলেন, “লোকসভা নিবার্চনের কারণে কিছুটা দেরি হয়েছে। তা ছাড়া, একটি চালু হাসাপাতালে কাজ করার কিছু ঝামেলা আছেই। সে-সব অসুবিধার মধ্যেই কাজ করতে হচ্ছে।” দু’সপ্তাহের মধ্যে কি কাজ শেষ করা যাবে? তরুণবাবুর দাবি, “আশা করছি, তার মধ্যেই কাজ শেষ করে ফেলতে পারব।”