মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল

কোটি টাকার যন্ত্র বাক্সবন্দি বছরভর

এক বছরের বেশি সময় ধরে ৭০ লক্ষাধিক টাকার মেশিনপত্র বাক্সবন্দি হয়ে পড়ে রয়েছে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। পাশাপাশি বাক্স বন্দি হয়ে পড়ে রয়েছে ১৫ লক্ষাধিক টাকার অস্থি চিকিৎসা বিভাগের জন্য আনা অর্থোস্কোপি মেশিন।

Advertisement

পীযূষ সাহা

মালদহ শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০১৪ ০৪:৩২
Share:

এক বছরের বেশি সময় ধরে ৭০ লক্ষাধিক টাকার মেশিনপত্র বাক্সবন্দি হয়ে পড়ে রয়েছে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। পাশাপাশি বাক্স বন্দি হয়ে পড়ে রয়েছে ১৫ লক্ষাধিক টাকার অস্থি চিকিৎসা বিভাগের জন্য আনা অর্থোস্কোপি মেশিন। দীর্ঘ দিন ধরে বাক্সবন্দি হয়ে পড়ে থাকলেও মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ মেশিনগুলি বাসাতে উদ্যোগী নন বলে অভিযোগ।

Advertisement

সম্প্রতি বিষয়টি নজরে আসতেই রাজ্যে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তা মেডিক্যাল কলেজ কতৃপর্ক্ষকে দ্রুত ওই সমস্ত মেশিন বসানোর নির্দেশ দিয়েছে। আর নড়েচড়ে বসেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। রাজ্যের স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বিষয়টি আমার নজরে এসেছে। মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষকে দ্রুত সম্ত মেশিন বসানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফিজিক্যাল মেডিসিন বিভাগের প্রধান অঞ্জন ঘোষ বলেন, “আমাদের যে সমস্ত যন্ত্রপাতি এসেছে, তা বসানোর জন্য প্রায় ২ হাজার বর্গফুট জায়গা দরকার। এখন আমরা সেই জায়গা পাইনি। তবে আমরা খুব তাড়াতাড়ি সমস্ত মেশিন বসানোর চেষ্টা করছি।” মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ভাইস প্রিন্সিপাল মহম্মদ আবদুর রসিদ বলেন, “পঠনপাঠন ভবনের কাজ শেষ না হওয়ার জন্য এই সমস্যা দেখা দিয়েছে। তবে খুব শীঘ্রই ফিজিক্যাল মেডিসিনের সমস্ত মেশিন বসানোর কাজ শুরু করা হবে।” তিনি জানান, নতুন ছয়টি অপারেশন থিয়েটারের জন্য টাকা অনুমোদন হয়েছে। সেই অপারেশন থিয়েটার তৈরি হলে যে সমস্ত সমস্যা মিটে যাবে।

ঘটনার জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষকেই দায়ী করেছে তৃণমূল চিকিৎসক সংগঠন প্রোগ্রেসিভ ডক্টরস অ্যসোসিয়েশন। বাক্সবন্দি মেশিনগুলি দ্রুত বসানোর দাবিতে তাঁরা রাজ্যের স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তাকে স্মারকলিপি জমা দিয়েছে। সংগঠনের জেলা সভাপতি তাপস চক্রবর্তী বলেন, “এক বছর আগে ফিজিক্যাল মেডিসিন ও অর্থোপেডিক বিভাগের মেশিন এসেছে। সংগঠনের পক্ষ থেকে আমরা ওই মেশিনগুলি বসানোর দাবি জানিয়েছি।”

Advertisement

মেডিক্যাল কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১২ সালে মার্চ মাসে টেন্ডার অনুয়ায়ী একাধিক সংস্থা ৭০ লক্ষাধিক টাকা মূল্যের ইলেক্ট্রো থেরাপি, সোলডার হুইল, প্যারালাল বার, আলট্রাসাউন্ড সহ একাধিক যন্ত্র সরবরাহ করেছিল। সেই মেশিনগুলি মেডিক্যাল কলেজের হস্টেলের তিনতলার কয়েকটি ঘরে বাক্সবন্দি হয়ে পড়ে রয়েছে। অর্থোপেডিক বিভাগের অর্থোস্কোপি মেশিনও বাক্সবন্দি। হাঁটু কিংবা সোল্ডারে জয়েন্টে লিগামেন্ট ছিঁড়ে গেলে এই মেশিনের মাধ্যমে সেই লিগামেন্ট জুড়ে দেওয়া হয়। ছয়মাস আগে ১৫ লক্ষাধিক টাকা দিয়ে এই মেশিন কেনা হয়েছিল। অভিযোগ, লিগামেন্ট ছেঁড়া রোগীরা কলকাতায় কিংবা নার্সিংহোমে যাচ্ছেন বাধ্য হয়ে।

কালিয়াচকের বীরনগর গ্রামের মিলন মন্ডল বলেন, “দেড়মাস আগে বাবার হাঁটুর লিগামেন্ট ছিঁড়ে গিয়েছিল। মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে এসেছিলাম। এখানে মেশিন নেই বলে কলকাতা বা নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। কলকাতায় নিয়ে বাবার অস্ত্রোপচার করাই।” হাসপাতালের একাংশ কর্মী জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন বাক্সবন্দি হয়ে পড়ে থাকার পর সি-আর্ম মেশিন বসানো হয়। সেটিও মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের দোতলায় ফেলে রাখা হয়েছে। অর্থোপেডিক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান দেবব্রত বন্দোপাধ্যায় বলেন, “অপারেশন থিয়েটার ছোট হওয়ার জন্য সিআর্ম মেশিন ঠিকমত ব্যবহার করা যাচ্ছে না।” ওই মেশিন দিয়ে ছোট ছোট কাজ করা হচ্ছে বলে ওই চিকিৎসকের দাবি। শরীরে হাত, কোমড়ের মত এলাকায় ভাঙা অংশ জোড়া লেগেছে কী না তা দেখার জন্য এই যন্ত্রটি ব্যবহার করা হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন