খাদ্যে বিষক্রিয়ায় আরশোলাও দায়ী, মত বিশেষজ্ঞদের

শুধুমাত্র অস্বাস্থ্যকর খাবার, জল বা অপরিচ্ছন্নতাই নয়। পোকামাকড় থেকেও খাদ্যে বিষক্রিয়া হতে পারে বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকদের একাংশ। আর বর্ষাকালে এই সম্ভাবনা আরও বেড়ে যায়।

Advertisement

সৌভিক চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০১৫ ০২:২৭
Share:

শুধুমাত্র অস্বাস্থ্যকর খাবার, জল বা অপরিচ্ছন্নতাই নয়। পোকামাকড় থেকেও খাদ্যে বিষক্রিয়া হতে পারে বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকদের একাংশ। আর বর্ষাকালে এই সম্ভাবনা আরও বেড়ে যায়।

Advertisement

এসএসকেএম হাসপাতালের গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিভাগের প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান চিকিৎসক সত্যগোপাল মাইতি জানালেন, ফুড পয়জনিংয়ের ক্ষেত্রে মাছি আর আরশোলার ভূমিকা নেহাত কম নয়। বাড়ির রান্নাঘর যতই পরিষ্কার রাখা হোক না কেন, অনেক সময়ই পাইপ বেয়ে আরশোলা ঢুকে পড়ে। সেই সঙ্গে তারা আনে মারাত্মক সব জীবাণু।

বিশেষজ্ঞদের মতে, আরশোলার উপদ্রব একেবারেই হেলাফেলা করা উচিত নয়। কারণ, আরশোলাকে যতটা ক্ষতিকারক মনে করা হয়, তার থেকেও তারা অনেক বেশি ক্ষতিকর জীব। তাঁরা জানাচ্ছেন, আরশোলা জোরালো আলো পছন্দ করে না ও যে কোনও ধরনের কম্পনে তারা খুবই স্পর্শকাতর। আর তাই বসবাসের জন্য এরা বেছে নেয় এমন জায়গা, যেখানে সচরাচর মানুষের হাত পড়ে না। অন্ধকার হলেই এরা বাসনপত্রের উপর অবাধে ঘোরাঘুরি করে আর তা থেকেই ছড়ায় সংক্রমণ। একটি পূর্ণবয়স্ক আরশোলা তার জীবৎকালে প্রায় এক লক্ষ আরশোলার জন্ম দেয়। ফলে এক বার যদি বাড়িতে আরশোলা বাসা বাঁধে, এদের একেবারে নির্মূল করা খুবই কঠিন।

Advertisement

চিকিৎসক প্রবীর বিশ্বাসেরও একই মত। তিনি আরও জানালেন, পোকামাকড় দ্বারা বাহিত জীবাণু থেকে যে ফুড পয়জনিং হয়, ব্যাক্টেরিয়া ঘটিত ফুড পয়জনিংয়ের থেকে তার চরিত্র আলাদা। এ ক্ষেত্রে অনেকটা আন্ত্রিকের মতো হয়। ফলে অনেক সময়ই রোগটা নির্ণয় করতে দেরি হয়ে যায়। তিনি আরও জানান, যদি দেখা যায় দীর্ঘদিন ধরে পেটের রোগ সারছে না, তা হলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কারণ এই ধরনের জীবাণুগুলির উপর সাধারণ ওষুধ ব্যবহারে ফল হয় না। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের দেশে তো মাছি, আরশোলার উৎপাতটা বেশি। তাই সব সময় সাবধান থাকতে হবে। কারণ এদের থেকে ফুড পয়জনিং ছাড়াও টাইফয়েডের মতো মারাত্মক রোগও হতে পারে।’’

তবে এর ভিন্ন মতও আছে। পোকামাকড় থেকে খাদ্যে বিষক্রিয়ার সম্ভাবনা প্রায় উড়িয়েই দিয়েছেন চিকিৎসক দীপঙ্কর সরকার। তাঁর মতে, খাবার সংরক্ষণ নিয়ে মানুষ যথেষ্ট সচেতন। তিনি বলেন, ‘‘প্রধানত অস্বাস্থ্যকর খাবার ও জল থেকেই খাদ্যে বিষক্রিয়া হয়। পোকামাকড়ের ভূমিকা এতে খুবই কম।’’

তবে কারণ যাই হোক না কেন, খাদ্যে বিষক্রিয়া এড়াতে কিছু দাওয়াই দিচ্ছেন চিকিৎসকেরাই। চিকিৎসক মিহির ভট্টাচার্য জানান, শুধু রান্নাঘর পরিষ্কার রাখলেই হবে না। যিনি রান্না করবেন তাঁকেও সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। জল পরিস্রুত হচ্ছে কি না সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। কাঁচা সব্জি বা মাছ-মাংস রান্নার আগে অন্তত ঘণ্টাখানেক গরম জলে ভিজিয়ে রাখতে হবে। তিনি বলেন, ‘‘গরম জলে ভিজিয়ে রাখলে ক্ষতিকারক রাসায়নিকগুলি আস্তে আস্তে বেরিয়ে আসে।’’ সত্যগোপালবাবু বরং অসময়ের শাক-সব্জি এড়িয়ে চলারই পরামর্শ দিচ্ছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন