চিকিৎসায় গাফিলতির দায়ে কল্যাণীর এক নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ ও শল্য চিকিৎসক তাপসী চৌধুরীকে ৫ লক্ষ ৩৪ হাজার টাকা জরিমানার নির্দেশ দিল কৃষ্ণনগরের ক্রেতা সুরক্ষা আদালত। ওই টাকা তাঁদের দিতে হবে চাকদহের বাসিন্দা আইজেল মণ্ডলকে। টাকা দিতে গড়িমসি করলে ফি বছর দশ শতাংশ করে সুদ গুনতে হবে নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষকে। চলতি মাসের ১৪ তারিখ আদালত ওই নির্দেশ দেয়।
চাকদহের বাসিন্দা বছর তেইশের অন্তঃসত্ত্বা শাবানা বিবি ২০১০ সালের ১৬ ডিসেম্বর কল্যাণীর ওই নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়। ওই দিন সন্ধ্যায় কোনওরকম প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই চিকিৎসক তাপসী চৌধুরী ওই মহিলার অস্ত্রোপচার করেন। মহিলা সুস্থ-স্বাভাবিক সন্তানের জন্ম দেন। কিন্তু রাত থেকেই ওই মহিলার শারীরিক অবস্থার অবনতি শুরু হয়। নাগাড়ে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তাঁর শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ রক্তক্ষরণ বন্ধে কোনওরকম ব্যবস্থা না নিয়ে বিল বাবদ ১৯ হাজার টাকা মিটিয়ে নিয়ে পরদিন সকালে ওই মহিলাকে কল্যাণীর গাঁধী মেমোরিয়াল হাসপাতালে স্থানান্তরিত করেন। সেখান থেকে মহিলাকে পাঠানো হয় কল্যাণীরই নেহেরু হাসপাতালে। ঘণ্টাখানেক পর সেখান থেকে পাঠানো হয় কলকাতার নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে। সেখানে চিকিৎসা শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যেই মারা যান ওই মহিলা। মৃত্যুর কারণ হিসেবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ব্যাখ্যা ছিল-- রক্তক্ষরণের জন্য শ্বাসকষ্টজনিত কারণে মহিলার মৃত্যু হয়েছে। মৃতার বাবা আইজেল মণ্ডল এদিক-সেদিক ঘুরে কোনও প্রতিকার না পেয়ে ঘটনার বছর দু’য়েক পর ১৭ ডিসেম্বর ২০১২ সালে ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের দ্বারস্থ হন। সপ্তাহ খানেক আগে ফোরামের সভাপতি প্রদীপকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় ও সদস্যা রীতা রায়চৌধুরী মালাকার আইজেল মণ্ডলের অভিযোগের সত্যতা যাচাই করে নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ ও চিকিৎসককে জরিমানা করেন। আইজেল মণ্ডলের বক্তব্য, “এতদিন পর ন্যায়বিচার পেলাম। চিকিৎসকের গাফিলতিতেই মেয়ে মারা গিয়েছিল।” নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ ও চিকিৎসক তাপসী রায়ের আইনজীবী কাজল ঘোষ বলেন, “নার্সিংহোমের তরফে কোনও গাফিলতি ছিল না। হিমোগ্লোবিনের পরিমাণও উল্লেখযোগ্য ভাবে কম ছিল না। আমরা এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাব।
সাত পাতার রায়ের প্রতিটা ছত্রে আদালত নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের কথা উল্লেখ করেছে। অভিযোগকারীর আইনজীবী শুভাশিস রায় জানান, শাবানা বিবির রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কম ছিল। নার্সিংহোমে ভর্তি হওয়ার মাস খানেক আগে ওই মহিলার শারীরিক পরীক্ষার রিপোর্টে তা উল্লেখ ছিল। সেই কারণে অস্ত্রোপচারের পর তার রক্তক্ষরণ আরও বেড়ে যায়। কিন্তু ওই নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতি বুঝেও রক্ত দেয়নি। শ্বাসকষ্ট কমাতেও কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। এছাড়াও অস্ত্রোপচারের আগে ইসিজি ও প্রয়োজনীয় রক্ত পরীক্ষার বন্দোবস্ত করেননি ওই নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ।