চিকিৎসক-কর্মী বাড়ন্ত, রুগ্ণ কাঁথি হাসপাতাল

বেড়েছে শুধু হাসপাতালের শয্যা সংখ্যাই। প্রয়োজনীয় চিকিৎসক থেকে চতুর্থ শ্রেণির কর্মী বাকি সব সংখ্যাই কমতে কমতে তলানিতে। এই অবস্থায় খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে কাঁথি মহকুমা হাসপাতালের মেডিসিন, নাক, কান, গলা, প্রসূতি এবং শিশু বিভাগ। কার্যত শিকেয় হাসপাতালের গোটা স্বাস্থ্য-পরিষেবাটাই।

Advertisement

সুব্রত গুহ

কাঁথি শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০১৪ ০১:২০
Share:

খসে পড়েছে হাসপাতালের ছাদের চাঙর। — নিজস্ব চিত্র।

বেড়েছে শুধু হাসপাতালের শয্যা সংখ্যাই। প্রয়োজনীয় চিকিৎসক থেকে চতুর্থ শ্রেণির কর্মী বাকি সব সংখ্যাই কমতে কমতে তলানিতে। এই অবস্থায় খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে কাঁথি মহকুমা হাসপাতালের মেডিসিন, নাক, কান, গলা, প্রসূতি এবং শিশু বিভাগ। কার্যত শিকেয় হাসপাতালের গোটা স্বাস্থ্য-পরিষেবাটাই।

Advertisement

হাসপাতালে প্রয়োজনীয় সার্জেন নেই, নেই যথেষ্ট বিশেষজ্ঞ কিংবা স্থায়ী চিকিৎসক। ময়নাতদন্তের জন্যও নেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। দীর্ঘ দিন ধরে শূন্য ডেন্টাল সার্জেন ও রেডিওলজিস্টের পদ। তলানিতে ঠেকেছে হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণির কর্মীসংখ্যা। কম রয়েছে ওয়ার্ড মাস্টারও। হাসপাতালের দু’টি সহকারি সুপারের পদও দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে খালি পড়ে রয়েছে। ‘নেই’-এর তালিকাটা এমনই দীর্ঘ কাঁথি মহকুমা হাসপাতালের!

রাজ্যে পালা পরিবর্তনের পরে ১৪০ শয্যার কাঁথি মহকুমা হাসপাতালকে ২০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। কিন্তু সার্বিক পরিকাঠামোর কোনও উন্নতি করা হয়নি। ফলে হাসপাতালের বেহাল দশা কাটেনি। কাঁথি মহকুমার নানা এলাকার লক্ষাধিক মানুষ স্বাস্থ্য পরিষেবার জন্য মহকুমা হাসপাতালের উপরে নির্ভরশীল। অথচ, রোগী এবং তার পরিজনদের ক্ষোভ, হাসপাতালে নূন্যতম পরিষেবাটুকুই মেলে না। হাসপাতালের বারান্দা, ওয়ার্ড সর্বত্রই মেঝেতেই রোগীদের পড়ে থাকতে দেখা যায়। এমনকী সদ্যোজাত শিশুসন্তান-সহ প্রসূতি মা-ও হাসপাতালের নোংরা মেঝেতেই আশ্রয় নিতে বাধ্য হন বলে অভিযোগ। তাঁদের নেই নূন্যতম নিরাপত্তাটুকুও।

Advertisement

মহকুমা হাসপাতালের স্বাস্থ্য পরিষেবার হাল ফেরাতে দক্ষিণ কাঁথির বিধায়ক তথা কাঁথি মহকুমা হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির সভাপতি দিব্যেন্দু অধিকারীর বিধায়ক তহবিল থেকে কয়েক লক্ষ টাকা দিয়ে নতুন আলট্রাসেনোগ্রাফি মেশিন কেনা হয়। কিন্তু রেডিওলজিস্ট না-থাকায় সেই মেশিন হাসপাতালেই পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে বলে অভিযোগ। ফলে ভর্তি হওয়া গর্ভবতী মহিলাদের আলট্রাসেনোগ্রাফিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জননী সুরক্ষা প্রকল্পের টাকা খরচ করে বাইরের প্যাথলজি সেন্টারগুলি থেকে করিয়ে আনতে হচ্ছে। তা হলে কেন রেডিওলজিস্ট নিয়োগ করা হচ্ছে না? হাসপাতালের সুপার সব্যসাচী চক্রবর্তী বলেন, “বিষয়টি বহুবার ঊর্ধ্বতন কৃর্তপক্ষকে জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি।”

পূর্ব মেদিনীপুরের মুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারিক শৈবাল বন্দ্যোপাধ্যায় হাসপাতালের এই বেহাল দশার কথা কার্যত স্বীকার করে নিয়েছেন। তিনি বলেন, “রাজ্যজুড়েই চিকিৎসক সঙ্কট চলছে। এই পরিস্থিতিতেও কাঁথি হাসপাতালে একজন সার্জেন এবং অন্য কোনও হাসপাতাল থেকে সপ্তাহে দু’দিনের জন্য রেডিওলজিস্ট দেওয়ার চিন্তাভাবনা চলছে।”

এই পরিস্থিতিতে হাসপাতালে শল্য চিকিৎসক একাধিক থাকার কথা থাকলেও রয়েছেন মাত্র একজন। ফলে তাঁকে প্রতিদিনই গড়ে আট থেকে দশটি করে অপারেশন করতে হয়। অপারেশন করাতে দীর্ঘক্ষণ প্রতীক্ষা করতে হয়। মহকুমা হাসপাতালে সব বিভাগ নিয়ে ১৬ জন সার্জেনের থাকার কথা থাকলেও আছেন মাত্র চার জন। তার মধ্যে দু’জন গাইনি অন্য জন অর্থোপেডিক বিভাগে।

শুধু স্বাস্থ্য পরিষেবা নয়, হাসপাতালে দীর্ঘ দিন সংস্কার না হওয়ায় ওয়ার্ডগুলির জীর্ণদশা। বিভিন্ন ওয়ার্ডের দেওয়াল, ছাদ থেকে সিমেন্টের চাঙড় খসে পড়ছে। সম্প্রতি মহিলা ওয়ার্ডে সিমেন্টের চাঙড় খসে এক সদ্যোজাত শিশু ও প্রসূতি-মা জখম হন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, দীর্ঘ দিন ধরে উচ্চমহলে জরাজীর্ণ ঘরগুলির সংস্কারের কথা বলা হলেও কাজের কাজ কিছু হয়নি।

হাসপাতালের সুপার-সহ কর্মীদের আবাসনের অবস্থাও তথৈবচ। যে কোন মুহূর্তে অংশবিশেষ ভেঙে বড় রকমের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। এ ক্ষেত্রেও হাসপাতালের কর্মীদের অভিযোগ, প্রশাসনিক আধিকারিকদের বিষয়টি বারবার জানিয়েও সুরাহা হয়নি। অভিযোগ, এই বেহাল পরিস্থিতির মধ্যেও রয়েছে দালালদের দৌরাত্ম্য। হাসপাতাল চত্বরেই রয়েছে শববাহী খাট বিক্রির রমরমা কারবার। রোগী কল্যাণ সমিতির সভাপতি দিব্যেন্দু অধিকারী মহকুমা হাসপাতালে থেকে এই দালালচক্র হটানোর জন্য সম্প্রতি মহকুমা হাসপাতালে আচমকা এক অভিযান চালিয়ে দালালদের হাসপাতাল চত্বর থেকে বের করে দিয়েছিলেন।

তারপর থেকে দালালদের সেই রমরমা কিছুটা কমলেও, তা কত দিন বজায় থাকবে তা নিয়েও রীতিমতো সন্দিহান ভুক্তভোগীরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন