নানুরে শুক্রবার তোলা —নিজস্ব চিত্র।
বরাদ্দ রয়েছে চিকিৎসক-সহ ৬ জন স্বাস্থ্যকর্মী। কিন্তু বছর দু’য়েক ধরে জোড়াতালি দিয়ে চিকিৎসক ও একজন নার্স কাজ চালাচ্ছেন। অন্য শূন্যপদ পূরণ করা তো দূরের কথা তুলে নেওয়া হয়েছে একমাত্র চিকিৎসককে। তাই ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা তাই চিকিৎসককে ফেরানোর দাবিতে তালা ঝুলিয়ে দিলেন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। শুক্রবার ঘটনাটি ঘটেছে নানুরের বনগ্রাম প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে।
ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জন্য বরাদ্দ রয়েছেন ১ জন ডাক্তার, ২ জন নার্স, ১ জন ফার্মাসিস্ট, ১, ২ জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মী। অথচ বছর দু’য়েক ধরে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রয়েছেন চিকিৎসক আনতাজ আলি এবং নার্স রিজিয়া বেগম। কিন্তু বুধবার ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অস্থায়ী ভাবে তুলে নেওয়া হয় ওই চিকিৎসককে। জানাজানি হতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন গ্রামের মানুষ। বৃহস্পতিবার তাঁরা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে তালা ঝুলিয়ে নার্সকে ঢুকতেই দেননি। শুক্রবারও একই ঘটনা ঘটে। এ দিন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যান ফার্মাসিস্ট তপন জানা। তিনি বলেন, “স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশে স্বাস্থ্যকেন্দ্র খুলতে এসেছিলাম। কিন্তু চিকিৎসক ছাড়া গ্রামবাসীরা তালা খুলতে রাজি না হওয়ায় ফিরে যেতে হয়েছে।”
চিকিৎসক আমতাজ আলি বলেন, “বুধবার সিএমওএইচ-এর নির্দেশে অস্থায়ী ভাবে আমাকে ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যেতে হয়েছিল। খবর পেয়েছি চিকিৎসকের দাবিতে বনগ্রামের বাসিন্দারা তালা দিয়েছেন।”
চিকিৎসক সমস্যার জন্য বিপাকে পড়েছেন রোগীরা। কারণ, কাছে পিঠে ৮-১০ কিলোমিটারের মধ্যে কোনও স্বাস্থ্যকেন্দ্র নেই। তাই ১০-১২টি গ্রামের মানুষজনকে নির্ভর করতে হয় বনগ্রাম স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উপর। স্বাস্থ্যকেন্দ্র সূত্রেই জানা গিয়েছে, দৈনিক গড়ে ৭০ জন রোগী চিকিৎসা করাতে আসেন এখানে। রাজু মোল্লা, মিনা ঘোষদের ক্ষোভ, “তিন দিন ধরে চিকিৎসা করাতে এসে শুনছি ডাক্তারবাবু নেই। ডাক্তার না থাকলে চিকিৎসা করাবো কার কাছে?” রথীন মণ্ডল, প্রশান্ত ঘোষরা বলেন, “ডাক্তারই যদি না থাকে তা হলে স্বাস্থ্যকেন্দ্র খুলেই বা কি লাভ? তাই আমরা ঠিক করেছি স্বাস্থ্য দফতর কোন ডাক্তার না দেওয়া পর্যন্ত তালা বন্ধই থাকবে স্বাস্থ্যকেন্দ্র।”
সিএমওএইচ কার্তিক মণ্ডল বলেন, “ঘাটতি মেটাতে ওই চিকিৎসকে অস্থায়ী অভাবে ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়েছে। তবে শুধু ওই প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র নয়, এই মুহূর্তে জেলার ৩০টি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসক নেই। জেলায় মোট ১৫৮ জন চিকিৎসকের ঘাটতি আছে। সমস্যার কথা স্বাস্থ্য দফতরে জানানো হয়েছে। নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে খবর আছে। চিকিৎসক পেলেই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে শূন্যপদ পূরণের ব্যবস্থা করা হবে। অন্য শূন্যপদও সময় মতো পূরণের ব্যবস্থা করা হবে।”