চার বছরে একটিও ‘নিশ্চয় যান’-এর ব্যবস্থা করতে পারেনি হাওড়া জেলার চারটি ব্লক।
প্রসূতি এবং শিশুদের নিখরচায় হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া-নিয়ে আসার জন্য কেন্দ্র সরকারের উদ্যোগে চার বছর আগে ব্লকে ব্লকে ‘নিশ্চয় যান’ চালু করার কথা বলা হয়। কিন্তু এত দিনেও হাওড়া জেলার ১৪টি ব্লকের মধ্যে পাঁচলা, সাঁকরাইল, জগত্বল্লভপুর এবং উলুবেড়িয়া-১ ব্লক ওই যান চালু করতেই পারল না। কারণ, মেলেনি গাড়ি। ফলে, ওই চারটি ব্লকের বহু পরিবার সরকারি পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাঁদের বেশি খরচ করে হাসপাতালে যেতে-আসতে হচ্ছে। ওই পরিষেবা এই চার ব্লকে কবে চালু হবে, উঠছে সেই প্রশ্নও।
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক দেবাশিস রায় অবশ্য আশ্বাস দিয়েছেন, “আমরা শীঘ্রই ওই চারটি ব্লকের স্বাস্থ্য দফতর এবং পঞ্চায়েত সমিতির সঙ্গে কথা বলব। যাতে ওই যান দ্রুত চালু করা যায়।”
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১১ সালে কেন্দ্র সরকারের জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের ‘জননী ও শিশু সুরক্ষা’ প্রকল্পে ওই যান চালু করার কথা বলা হয়। প্রথমে গাড়িটির নাম ছিল ‘মাতৃযান’। পরে তা পাল্টে হয় ‘নিশ্চয় যান’। উদ্দেশ্য ছিল, প্রসূতি এবং এক বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের বিনা খরচে বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া-নিয়ে আসার ব্যবস্থা করা। যাতে তাঁরা দ্রুত স্বাস্থ্য পরিষেবা পান। এ জন্য প্রতি ব্লকে সর্বোচ্চ পাঁচটি করে ‘নিশ্চয় যান’ রাখার কথা বলা হয়। নিয়ম অনুযায়ী, এই যান প্রসূতি বা শিশুর জন্য নেওয়া হলে তার খরচ মেটাবে কেন্দ্র। ১ থেকে ১০ কিলোমিটার পর্যন্ত দূরত্বের জন্য ওই যান-মালিককে দেওয়া হবে ১৫০ টাকা, ১১-২০ কিলোমিটার পর্যন্ত ২৫০ টাকা, ২১-৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত ৩৫০ টাকা এবং ৩১-৫৫ কিলোমিটার পর্যন্ত ৪৮০ টাকা। এর পরে কিলোমিটারপিছু ৮ টাকা করে। গাড়ি জোগাড় করতে হবে ব্লক স্বাস্থ্য দফতর এবং পঞ্চায়েত সমিতিকেই।
কিন্তু এত দিনেও কেন গাড়ির ব্যবস্থা করা গেল না?
ওই চারটি ব্লকের স্বাস্থ্য দফতর এবং পঞ্চায়েত সমিতির দাবি, গাড়ি পাওয়ার ক্ষেত্রে তারা স্থানীয় গাড়ির মালিক বা চালকদের সঙ্গে বৈঠক করলেও তেমন ইতিবাচক সাড়া পাচ্ছেন না। সাধারণত কম দূরত্বে হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্র হলে কেউ ওই যান নিতে চান না। ৩১-৫৫ কিলোমিটারের মধ্যে হাসপাতাল হলে আবার কোনও অ্যাম্বুল্যান্স বা গাড়ি কমপক্ষে এক হাজার টাকা নেয়। সেখানে সরকারের বেঁধে দেওয়া টাকা কম। তাই গাড়ির চালক-মালিকেরা রাজি হচ্ছেন না।
“আমরা পরিষেবার ব্যবস্থা করতে বহু চেষ্টা করেছি। কিন্তু লাভ হয়নি। ফের চেষ্টা করব। বিধায়ক এবং সাংসদদেরও বিষয়টি জানিয়েছি।” —জয়ন্ত ঘোষ। পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি।
তবে, গ্রামবাসীদের অভিযোগ, প্রশাসনিক গাফিলতির জন্যই চারটি ব্লকে এই অবস্থা। অথচ, জেলার বাকি ১০টি ব্লকে এই পরিষেবা ভালই চলছে। পাঁচলার দেউলপুরের বাসিন্দা মানসী রায় গত ২৯ জানুয়ারি কলকাতার নীলরতন সরকার হাসপাতালে সন্তান প্রসব করেন। সে দিন এক হাজার টাকায় গাড়ি ভাড়া করে এসে তিনি ওই হাসপাতালে ভর্তি হন। তিনি বলেন, “ফেরার সময়েও হাজার টাকা ভাড়া দিতে হয়েছে গাড়িকে। নিশ্চয় যান পাওয়া গেলে সুবিধা হত। অনেক খুঁজেও ওই গাড়ি পাইনি।” কুশডাঙার রুনা সর্দার বা জয়রামপুরের অম্বিকা মল্লিকও সম্প্রতি মা হয়েছেন। একই রকম বাড়তি খরচের কথা জানিয়েছেন তাঁরাও। তাঁদের বক্তব্য, “এক বছর বয়স পর্যন্ত সন্তানদের নিয়ে বারেবারেই তো হাসপাতালে যেতে হবে। নিশ্চয় যান চালু হলে অনেক সুবিধা হয়।”
সাঁকরাইল পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি জয়ন্ত ঘোষ বলেন, “আমরা ওই পরিষেবার ব্যবস্থা করতে বহু চেষ্টা করেছি। কিন্তু লাভ হয়নি। ফের চেষ্টা করব। বিষয়টি আমরা বিধায়ক এবং সাংসদদেরও জানিয়েছি। তাঁরাও আশ্বাস দিয়েছেন, কী ভাবে ওই যান দ্রুত চালু করা যায়, সেটা দেখছি।” একই রকম ভাবে নিজেদের অসহায়তার কথা জানিয়েছেন ওই ব্লকের বিএমওএইচ ঋতু রায়, পাঁচলার বিএমওএইচ গৌতম পাইক, উলুবেড়িয়া-১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মানস মণ্ডলও।