ছড়াচ্ছে ডেঙ্গি, আশঙ্কা শিলিগুড়িতে

এই পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য দফতর বিষয়টিকে চাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ। স্বাস্থ্য দফতরের দাবি, এ মুহূর্তে শহরের নার্সিংহোমগুলিতে ডেঙ্গি সন্দেহে অন্তত ১৫ জন রোগী রয়েছেন। স্বাস্থ্য দফতরের একটি সূত্রের দাবি, দার্জিলিং জেলা স্বাস্থ্য দফতরের পক্ষ থেকে একাধিক বার পুরসভাকে চিঠি পাঠিয়ে সতর্কও করা হয়েছিল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০১৪ ০১:৪৯
Share:

শিলিগুড়ির একটি নার্সিংহোমে ডেঙ্গি আক্রান্ত রোগী। —নিজস্ব চিত্র।

এনসেফ্যালাইটিস পর এ বার ডেঙ্গির প্রকোপ ছড়াচ্ছে শিলিগুড়ি শহরে। মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সূত্রেই জানা গিয়েছে, গত দুই মাসে শহরের বিভিন্ন নার্সিংহোম থেকে ডেঙ্গি সন্দেহে যে সমস্ত রক্তের নমুনা এসেছে তার মধ্যে ৮০ শতাংশের রক্তের ডেঙ্গির জীবাণু রয়েছে। শহরের বিভিন্ন এলাকা মিলিয়ে গত এক দেড় মাসে শতাধিক ব্যক্তি ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন বলে চিকিত্‌সকদের একাংশ মনে করছেন।

Advertisement

এই পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য দফতর বিষয়টিকে চাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ। স্বাস্থ্য দফতরের দাবি, এ মুহূর্তে শহরের নার্সিংহোমগুলিতে ডেঙ্গি সন্দেহে অন্তত ১৫ জন রোগী রয়েছেন। স্বাস্থ্য দফতরের একটি সূত্রের দাবি, দার্জিলিং জেলা স্বাস্থ্য দফতরের পক্ষ থেকে একাধিক বার পুরসভাকে চিঠি পাঠিয়ে সতর্কও করা হয়েছিল।

পরিস্থিতি নিয়ে আজ, শুক্রবার উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরে জরুরি বৈঠক ডেকেছে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। তিনি বলেন, “শহরের কয়েকটি এলাকায় ডেঙ্গি হচ্ছে বলে খবর পেয়েছি। স্বাস্থ্য দফতরকে বিস্তারিত জানাতে বলা হয়েছে।” পুর কমিশনার সোনম ওয়াংদি ভুটিয়া বলেন, “বিস্তারিত খোঁজ নিচ্ছি। এলাকা পরিষ্কার রাখতেও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।” দার্জিলিং জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অসিত বিশ্বাস বলেন, “এনএসওয়ান রক্ত পরীক্ষায় যাদের ডেঙ্গি বলে মনে হচ্ছে ম্যাকএলাইজা পরীক্ষা করে তাঁদের ডেঙ্গির বিষয়টি নিশ্চিত হতে হবে। বিস্তারিত দেখা হচ্ছে।”

Advertisement

শিলিগুড়ির খালপাড়ার অগ্রসেনরোডের বাসিন্দা পবন অগ্রবাল এবং তাঁদের পরিবারের ৫ জনের রক্তে প্রাথমিকভাবে ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছে। নার্সিংহোম সূত্রের দাবি, ওই পরিবারের পাঁচ জনের রক্তে এনএস-ওয়ান পরীক্ষায় ডেঙ্গির জীবাণু থাকার কথা ধরা পড়েছে। বাড়ির আরও দু’জন জ্বরে আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন। পবনবাবুর রক্তে অনুচক্রিকার সংখ্যা ক্রমশই কমতে থাকায় চিকিত্‌সক নার্সিংহোমে ভর্তি হতে বলেছেন। তাঁদের প্রতিবেশী সন্তোষ ডালমিয়ার ছেলে এবং মেয়ে-ও ডেঙ্গিতে আক্রান্ত। তার মধ্যে মেয়ে শিখাকে নার্সিংহোম ভর্তি করানো হয়েছিল। মঙ্গলবার রাতে তাঁকে ছুটি দিলে বাড়িতে আনা হয়।

এখনও তিনি সুস্থ নন। ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে অন্তত সাত জন ভর্তি রয়েছে পবনবাবুর বাড়ির কাছে খালপাড়ার একটি নার্সিংহোমে। তাঁরা গঙ্গানগর, টিউমলপাড়া ও টিকিয়াপাড়ার বাসিন্দা। ডেঙ্গি আক্রান্ত কয়েকজন এ দিন ওই নার্সিংহোম থেকে ছুটি নিয়ে বাড়ি যান। ওই নার্সিংহোমে গত এক মাসে জ্বরে আক্রান্ত অন্তত ২০ জন রোগীর শরীরে প্রাথমিকভাবে ডেঙ্গির জীবাণু ধরা পরে। শহরের অন্য নার্সিংহোমগুলি থেকেও অনেক রোগীর রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু ধরা পড়ায় তাদের রক্ত পরীক্ষার জন্য উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। খালপাড়ার অপর একটি নার্সিংহোম এবং সেবক রোডের দুটি নার্সিংহোমেও অন্তত তিন জন ভর্তি রয়েছেন।

গত বছর ডেঙ্গিতে শিলিগুড়ি শহর এবং লাগোয়া এলাকায় ডেঙ্গিতে ১১ জনের মৃত্যু হয়। সেই সময়ে শহরে বিজেপি আন্দোলন করেছিল। এ বার আক্রান্ত পবনবাবু দার্জিলিং জেলা বিজেপি’র অন্যতম নেতা। তাঁর বাড়িতে যান বিজেপি’র জেলা সভাপতি রথীন্দ্র বসু ও অন্যরা। পবনবাবু বলেন, “এখন ওয়ার্ডে কাউন্সিলর নেই। কাকে বলব? বাড়ির আশেপাশে আবর্জনার স্তূপ জমে রয়েছে। পরিষ্কার করার কেউ নেই। চিকিত্‌সক আমাকে নার্সিংহোমে ভর্তি হতে বলেছেন। দেওয়ালির উত্‌সবের মধ্যে বাড়িতে এখন সকলেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।”

পরিবার সূত্রেই জানা গিয়েছে, গত ৮ অক্টোবর রক্ত পরীক্ষায় পবনবাবুর ভাইয়ের বউ আশাদেবীর ডেঙ্গি ধরা পড়ে। তিনি কিছুটা সুস্থ। এরং দিন কয়েক আগে অসুস্থ হয়ে পড়েন পবনবাবু। একে একে আশাদেবীর ছেলে আমন, পবনবাবুর ভাইপোর স্ত্রী সরিতাদেবী এবং কাকার ছেলের মেয়ে পূজা। এঁদের সকলেরই রক্তে এনএস-ওয়ান পরীক্ষায় ডেঙ্গির জীবাণু ধরা পড়েছে। পবনবাবুর ছোট ভাইয়ের মেয়ে সাত বছরের স্বাতী এবং সরিতাদেবীর মেয়ে এ দিন থেকে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন। আশাদেবী বলেন, “মশা মারতে পুরসভার তরফে কোনও উদ্যোগ নেই।” তাঁদের প্রতিবেশী সন্তোষবাবু ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “ছেলে এবং মেয়ে দু’জনেরই ডেঙ্গি হয়েছে।”

নার্সিংহোমে ভর্তি গঙ্গানগরের বাসিন্দা আনন্দ গুপ্তা ডেঙ্গিতে আক্রান্ত। তিনি বলেন, “আমাদের বাড়ির আশেপাশে অনেকে জ্বরে আক্রান্ত। তাঁদেরও কয়েকজনের ডেঙ্গি হয়েছে।” টিউমলপাড়ার বাসিন্দা শিবানী দাস, টিকিয়াপাড়ার বাসিন্দা বিকাশ প্রসাদদের প্রাথমিক রক্ত পরীক্ষায় ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছে। বিজেপির জেলা সভাপতি রথীন্দ্রবাবু এ দিন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “শহরের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হচ্ছে না। ডেঙ্গিতে অনেকেই আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন। আমাদের নেতা পবনবাবুর পরিবারের অনেকেই আক্রান্ত। কোনও অঘটন ঘটলে আমরা চুপ করে বসে থাকব না। শিলিগুড়ি অচল করে দেওয়া হবে।”

প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্যের অভিযোগ, “শহরে এক মন্ত্রী সপার্ষদে পদযাত্রা করছেন। তাতে কী মশা দূর হবে? জঞ্জাল সাফ হবে? দ্রুত পুরভোট করা দরকার।” একই সুরে অভিযোগ তুলেছে কংগ্রেসও। জেলা কংগ্রেস সভাপতি তথা মাটিগাড়া নকশালবাড়ির বিধায়ক শঙ্কর মালাকার বলেন, “উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীকেই সব দায়িত্ব নিতে হবে। কেনশহরে ফের ডেঙ্গি ছড়াচ্ছে? কেন জল জমে থাকছে, জঞ্জাল সাফাই ঠিকঠাক হচ্ছে না সেই জবাব মানুষ ওঁর কাছেই চাইতে পারেন। কারণ, ওঁদের সরকারই পুরবোর্ড ভেঙে দিয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন