নিরাপত্তার দাবিতে ফের কর্মবিরতির পথে গেলেন জুনিয়ার ডাক্তাররা। সোমবার সকাল থেকে তাঁরা কর্মবিরতি শুরু করেন। দুপুরে জুনিয়ার ডাক্তারদের এক প্রতিনিধি দলের সঙ্গে হাসপাতাল সুপার যুগল করের এক বৈঠক হয়। দাবিগুলো নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়। অবশ্য ওই বৈঠক ফলপ্রসূ হয়নি বলেই হাসপাতাল সূত্রে খবর। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবশ্য দাবি, আলোচনা ফলপ্রসূই হয়েছে। প্রতিনিধি দলের সদস্যরা তাঁদের দাবি জানিয়েছেন। সমস্যার কথা তুলে ধরেছেন। সুপারও তাঁর মতামত প্রকাশ করেছেন। সুপার বারেবারে কর্মবিরতি প্রত্যাহারের আর্জি জানিয়েছেন। জুনিয়ার ডাক্তাররা এই আর্জিতে সাড়া দেবেনই। সোমবার বিকেলে হাসপাতাল সুপার যুগলবাবু বলেন, “এ দিন সকাল থেকে জুনিয়ার ডাক্তাররা কর্মবিরতি শুরু করেন। আমি কর্মবিরতি প্রত্যাহারের অনুরোধ করেছি। আশা করি, জুনিয়ার ডাক্তাররা কাজে যোগ দেবেন।” সন্ধ্যা পর্যন্ত অবশ্য পরিস্থিতির হেরফের হয়নি।
সমস্যার সূত্রপাত কী ভাবে? হাসপাতাল সূত্রে খবর, দু’দিন আগে এক অ্যাম্বুল্যান্স চালকের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়েন এক জুনিয়ার ডাক্তার। ওই জুনিয়ার ডাক্তারকে শারীরিক ভাবে হেনস্তা করা হয় বলেও অভিযোগ। এরপর থেকেই পরিস্থিতি অন্য দিকে মোড় নিতে শুরু করেছিল। হেনস্তার ঘটনায় অবশ্য দ্রুত পদক্ষেপ করে পুলিশ। অভিযুক্ত চালককে গ্রেফতারও করা হয়। সূত্রের খবর, রবিবার জুনিয়ার ডাক্তাররা আলোচনা করে ঠিক করেন, নিরাপত্তার দাবিতে তাঁরা সুপারের কাছে দরবার করবেন। সুনির্দিষ্ট আশ্বাস না মিললে কর্মবিরতি শুরু করবেন।
এই প্রথম নয়, আগেও নিরাপত্তার দাবিতে এ ভাবে আন্দোলন করেছেন জুনিয়ার ডাক্তাররা। শুধু নিরাপত্তার দাবিই নয়, সঙ্গে সিনিয়ার ডাক্তারদের নিয়মিত কাজে যোগ দেওয়া সুনিশ্চিত করা সহ আরও কয়েক দফা দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রতিদিন বহু মানুষ আসেন। হাসপাতালে ১৮টি ওয়ার্ড রয়েছে। ৫৬০ টি শয্যা রয়েছে। গড়ে রোগী ভর্তি থাকেন ৭০০- ৭৫০ জন। ১৭টি বহির্বিভাগ রয়েছে। দিনপিছু গড়ে রোগী আসেন ৫৩০ জন। জরুরি বিভাগে দিনপিছু গড়ে রোগী আসেন ২২০ জন। সোমবার সকাল থেকে জুনিয়র ডাক্তাররা কর্মবিরতির পথে যাওয়ার ফলে স্বাভাবিক ভাবেই হাসপাতালে চিকিৎসা পরিষেবা ব্যাহত হয়। এখন আবার ৫০ জনেরও বেশি সিনিয়ার ডাক্তার মেদিনীপুর মেডিক্যালে নেই। কলকাতার এনআরএসে এমসিআই পরিদর্শনের জন্য মেদিনীপুর মেডিক্যাল থেকে তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ডাক্তারের অভাবে চিকিৎসা পরিষেবা ব্যাহত হওয়ার কথা অবশ্য মানতে নারাজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সুপার যুগলবাবু বলেন, “কিছু সমস্যা হয়েছে। তবে পরিষেবা ব্যাহত হয়নি। আমরা চিকিৎসা পরিষেবা স্বাভাবিক রাখার সব রকম চেষ্টা করেছি।” কাজে না- ফিরলে আন্দোলনরত জুনিয়ার ডাক্তারদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা হতে পারে বলেও মেডিক্যাল সূত্রে খবর। মেডিক্যালের এক আধিকারিকের মতে, দাবিদাওয়া থাকতে পারে। তা নিয়ে দরবারও করা যেতে পারে। তবে এ ভাবে কর্মবিরতি চলতে থাকলে রোগীরা সমস্যায় পড়বেন। এটা জুনিয়ার ডাক্তারদেরও ভেবে দেখা দরকার। স্বাস্থ্য ক্ষেত্র আর পাঁচটা ক্ষেত্রের থেকে একটু আলাদা।