ডেঙ্গি আক্রান্ত সিপিএমের প্রাক্তন কাউন্সিলর রামেশ্বরপ্রসাদ গুপ্ত। নিজস্ব চিত্র।
ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব দাবি করলেও তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন অনেকেই। ডেঙ্গিতে এ বার আক্রান্ত হলেন সিপিএমের প্রাক্তন কাউন্সিলর রামেশ্বরপ্রসাদ গুপ্ত।
রবিবার জ্বর নিয়ে শিলিগুড়ির স্টেশন ফিডার রোডে একটি নার্সিংহোমে তাঁকে ভর্তি করানো হয়েছিল। তাঁর রক্ত পরীক্ষায় ডেঙ্গির জীবাণু থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গিয়েছে বলে জানিয়েছেন রামেশ্বরবাবুই। আপাতত তাঁর শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন। অন্যদিকে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত খালপাড়ার পবন অগ্রবালের পরিবারের দুজনের শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। তাঁদের পরিবারের দুই সদস্য ইতিমধ্যেই নার্সিংহোমে ভর্তি হয়েছেন। তাঁদের চিকিৎসা চলছে। অপর দু’জন শুভম অগ্রবাল এবং অমন অগ্রবালের শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। তাদের রক্তে অনুচক্রিকার সংখ্যা ১ লক্ষের নিচে কমে যাওয়ায় চিকিৎসক নার্সিংহোমে ভর্তি হতে বলেছেন বলে পবনবাবু জানান।
স্বাস্থ্য দফতরের রিপোর্ট নিয়েও তিনি প্রশ্ন তুলেছেন। গত শুক্রবার স্বাস্থ্য দফতর তাদের পরিবারের লোকদের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার পর জানিয়ে দেয় ১ জনের রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছে। অথচ অমন, শুভমের শারীরিক পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় স্বাস্থ্য দফতরের রিপোর্ট নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। পবনবাবু বলেন, “ওই রিপোর্ট ঠিক নেই বলেই সন্দেহ হচ্ছে। তা ছাড়া আমাদের কোনও রিপোর্ট তারা দেননি। ফোনে শুধু বলেছেন এক জনের রক্তের ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছে। মনে হচ্ছে তাঁরা কিছু চাপা দিতে চাইছেন।” ঘটনায় উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সিপিএম নেতা তথা প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য।
রাজ্য সরকার ও শিলিগুড়ি পুরসভাকে আর বেশি দায়িত্ব নিয়ে ডেঙ্গির মোকাবিলা করতে হবে বলে দাবি করেন। এদিন রামেশ্বরবাবুকে হাসপাতালে দেখতে যান অশোকবাবু ও সিপিএমের জেলা সম্পাদক জীবেশ সরকার। সিপিএমের আরও দুই নেতা জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন বলে তাঁরা জানান। তাঁদের রক্ত পরীক্ষা করা হচ্ছে।
এ দিন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রোগী কল্যাণ সমিতির বৈঠকের পর উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী অবশ্য বলেন, “ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে। স্বাস্থ্য দফতরকে প্রয়োজনীয় সমস্ত ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।” বিরোধীদের অভিযোগ, মন্ত্রী সঠিক কথা বলছেন না। অশোকবাবুর অভিযোগ, “ডেঙ্গি মোটেই নিয়ন্ত্রণে নেই। শহরের বিভিন্ন নার্সিংহোমে প্রতিদিন একাধিক জ্বরের রোগী ভর্তি হচ্ছেন। তার মধ্যে অনেকেই ডেঙ্গিতে আক্রান্ত। পুরসভা এখনও ঠিকমত সাফাই করছে না। বিভিন্ন জায়গায় নোংরা, আবর্জনা জমে রয়েছে। মন্ত্রী বৈঠকের পর বৈঠক করছেন। কিন্তু আসলে কাজ হচ্ছে না।”
শিলিগুড়ির পুর কমিশনার সোনম ওয়াদি ভুটিয়া দাবি করেন, তারা সাফাইয়ের কাজে জোর দিয়েছেন। সাফাই নিয়ে কেউ অভিযোগ জানালে তখনই লোক পাঠানো হচ্ছে। বহু জায়গায় দু’বার করেও সাফাই হচ্ছে।
রামেশ্বরবাবুর অভিযোগ, “তাঁর বাড়ির সামনে নদর্মা বেশ কিছুদিন ধরে পরিষ্কার হচ্ছে না। পুরসভায় জানানো সত্ত্বেও তাতে কোনও কাজ হয়নি। এলাকায় নোংরা জল জমে রয়েছে।” তাঁর এক প্রতিবেশী সঞ্জয় গুপ্ত জানান, পুরবোর্ড ভেঙে যাওয়ার পর থেকেই সাফাই প্রায় বন্ধ। সোমবার জ্বরে আক্রান্ত হন সিপিএমের আরও এক কাউন্সিলর শরদিন্দু চক্রবর্তী এবং ডিওয়াইএফের জেলা সম্পাদক শঙ্কর ঘোষ। শঙ্করবাবুর জ্বর সেরে গেলেও শরদিন্দুবাবুর রক্ত পরীক্ষা করতে পাঠানো হয়েছে।