সুহানা-কাণ্ড

তদন্তের পরেও সাজা হয়নি ‘দোষী’ চার চিকিত্‌সকের

রোগীমৃত্যুর এক দিনের মধ্যে তদন্ত কমিটি গড়া হয়েছিল। সেই কমিটি চার জুনিয়র ডাক্তারকে দোষী চিহ্নিতও করে। কিন্তু তার পরে এক মাসেরও বেশি হয়ে গিয়েছে। কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি এসএসকেএমে সুহানা-কাণ্ডে গাফিলতি প্রমাণিত হওয়া চার জুনিয়র ডাক্তারের বিরুদ্ধে। স্বাস্থ্য দফতর, স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল কাউন্সিল সব পক্ষই নির্বিকার। এসএসকেএমের অধিকর্তা প্রদীপ মিত্র জানান, তিনি হাল ছাড়ছেন না।

Advertisement

সোমা মুখোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০১৫ ০২:৫৮
Share:

রোগীমৃত্যুর এক দিনের মধ্যে তদন্ত কমিটি গড়া হয়েছিল। সেই কমিটি চার জুনিয়র ডাক্তারকে দোষী চিহ্নিতও করে। কিন্তু তার পরে এক মাসেরও বেশি হয়ে গিয়েছে। কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি এসএসকেএমে সুহানা-কাণ্ডে গাফিলতি প্রমাণিত হওয়া চার জুনিয়র ডাক্তারের বিরুদ্ধে। স্বাস্থ্য দফতর, স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল কাউন্সিল সব পক্ষই নির্বিকার। এসএসকেএমের অধিকর্তা প্রদীপ মিত্র জানান, তিনি হাল ছাড়ছেন না। নিয়মিত এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষকে তাগাদা দিচ্ছেন। সুহানার বাড়ির লোকেরা কখনও হাসপাতাল, কখনও স্বাস্থ্য ভবন, কখনও বা নবান্নে ধর্না দিচ্ছেন। কিন্তু কবে মেয়ের মৃত্যুর সুবিচার মিলবে, সে ব্যাপারে তাঁরাও অন্ধকারে।

Advertisement

প্রশ্ন উঠেছে, এর আগে জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের ভয়ে যে ভাবে বিভিন্ন ঘটনায় তাদের নানা ‘অপরাধ’ হজম করে নিয়েছে প্রশাসন, এ ক্ষেত্রেও কি তা-ই হতে চলেছে?

এ প্রসঙ্গে ফের সামনে এসেছে এনআরএসে গণপিটুনিতে কোরপান শাহর মৃত্যুর ঘটনা। সে ক্ষেত্রেও তদন্তের কাজ শুরু হয়েছিল অনেক ঢিমেতালে। প্রশ্ন উঠেছে, এনআরএসে না হয় দোষীদের চিহ্নিত করা যায়নি। কিন্তু এসএসকেএমে তো তদন্ত কমিটির রিপোর্টে সব স্পষ্ট। তা হলে বিলম্ব কেন?

Advertisement

এসএসকেএমের অধিকর্তা প্রদীপ মিত্র বলেন, “যা ঘটেছিল, তা অত্যন্ত মর্মান্তিক। সেই কারণেই দ্রুত তদন্ত শেষ করে রিপোর্ট পেশ করা হয়েছিল। অথচ এখনও কোনও তরফেই কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। তবে আমি হাল ছাড়তে রাজি নই। এই ধরনের গাফিলতির ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেওয়া না হলে ভবিষ্যতেও এগুলো আটকানো যাবে না।”

গত ২৫ নভেম্বর স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে রড-বোঝাই গাড়ির ধাক্কায় গুরুতর জখম হয়েছিল উত্তর ২৪ পরগনার স্বরূপনগরের বাসিন্দা সুহানা। প্রথমে বসিরহাট এবং পরে আরজিকরে উপযুক্ত চিকিত্‌সা না মেলায় তাকে পিজিতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেই রাতে চার ইউনিট রক্ত লাগবে বলে সুহানার পরিবারকে জানিয়েছিলেন ডাক্তাররা। পরের দিন দুপুরে তা জোগাড়ও করেন বাড়ির লোকেরা। কিন্তু পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় তা সুহানাকে দেওয়ার ‘সময় পাননি’ ডাক্তাররা। রক্তের অভাবে ধুঁকতে ধুঁকতে মারা যায় ওই কিশোরী।

রাজ্যের সেরা সরকারি হাসপাতাল এসএসকেএমে এ ভাবে রোগীমৃত্যুর ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয় নানা মহলে। হাসপাতাল কর্তারা সদুত্তর দিতে পারেননি। কিন্তু ঘটনার এক দিনের মধ্যেই তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গড়া হয়। সেই কমিটি চার জুনিয়র ডাক্তারকে দোষী সাব্যস্ত করে। তাঁরাই সেই ২৪ ঘণ্টায় ডিউটিতে ছিলেন।

কোথায় কোথায় পাঠানো হয়েছিল ওই তদন্ত রিপোর্ট? এসএসকেএম কর্তারা জানান, স্বাস্থ্য ভবন, রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিল ও স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো হয়েছে রিপোর্ট। স্বাস্থ্য দফতরের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, “যেহেতু ওই চার ডাক্তারই পোস্ট ডক্টরাল ট্রেনি, তাই তাঁরা স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে। তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার এক্তিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের। পাশাপাশি তাঁদের রেজিস্ট্রেশন দিয়েছে যে প্রতিষ্ঠান, সেই মেডিক্যাল কাউন্সিলেরও দায়িত্ব রয়েছে। প্রয়োজনে তারা ডাক্তারদের সতর্ক করতে পারে, এমন কী সাময়িক ভাবে রেজিস্ট্রেশন নম্বর বাতিলও করতে পারে।

আদতে কী করছে তারা? কাউন্সিল কর্তারা জানিয়েছেন, সিদ্ধান্ত দূরে থাক, এখনও কোনও আলোচনাই হয়নি। কেন হয়নি, কোনও ব্যাখ্যা নেই। একই অবস্থা রাজ্য স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়েও। উপাচার্য ভবতোষ বিশ্বাস বলেন, “আমি কিছু জানি না। আমাকে সরকারি তরফে কোনও নির্দেশ দেওয়া হয়নি।”

সুহানার পরিবারের আশঙ্কা, এ ভাবে টালবাহানা করতে করতেই হয়তো এক দিন গোটা বিষয়টা ধামাচাপা পড়ে যাবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন