দূষণে লাল নদীর জল, গ্রামের চিঠি মুখ্যমন্ত্রীকে

কারখানার দূষণের জেরে নদীর জল আর দৈনন্দিন প্রয়োজনে ব্যবহার করা যায় না। জামুড়িয়ার বিজয়নগরের একটি স্পঞ্জ আয়রন কারখানার আবর্জনা জলে মেশায় ক্ষতি হচ্ছে এলাকার চাষাবাদেও। বৃহস্পতিবার অবস্থার প্রতিকার চেয়ে ন’টি গ্রামের বাসিন্দারা চিঠি পাঠালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

জামুড়িয়া শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০১৫ ০০:৩৬
Share:

এমনই হাল সিঙ্গারণ নদীর।—নিজস্ব চিত্র।

কারখানার দূষণের জেরে নদীর জল আর দৈনন্দিন প্রয়োজনে ব্যবহার করা যায় না। জামুড়িয়ার বিজয়নগরের একটি স্পঞ্জ আয়রন কারখানার আবর্জনা জলে মেশায় ক্ষতি হচ্ছে এলাকার চাষাবাদেও। বৃহস্পতিবার অবস্থার প্রতিকার চেয়ে ন’টি গ্রামের বাসিন্দারা চিঠি পাঠালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে।

Advertisement

ধাসনা গ্রামের দুলাল মিশ্রের অভিযোগ, দূষণের জেরে এলাকার প্রাকৃতিক পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে। প্রভাব পড়ছে দৈনন্দিন জীবনেও। এলাকার রাস্তাঘাট, গাছপালা সবই ছেয়েছে কারখানার ছাইয়ে। বাসিন্দারা জানান, ছাইয়ের দাপটে দিনের অধিকাংশ সময় দরজা-জানলা খোলা যায় না। খাবারেও ছাই মিশে যাচ্ছে। কারখানার আবর্জনা সংলগ্ন সিঙ্গারণ নদীর জলে মিশছে। নদীর জল বর্তমানে লালচে হয়ে গিয়েছে। এর জেরে নদীর জল আর ব্যবহার করা যায় না বলে দাবি ধসল, ধাসনা, বিজয়নগর, ইকড়া-সহ বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দাদের। চিকিৎসকেরা জানান, এই জল অনেক সময় খেয়ে ফেলার ফলে এলাকার শিশুদের স্বাস্থ্যের ক্ষতি হচ্ছে। মাঝেসাঝেই তারা পেটের রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছে। তা সহজে সারতেও চাইছে না বলে দাবি। এ ছাড়াও এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে শ্বাসকষ্ট, চামড়ার রোগে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা বাড়ছে বলে জানান চিকিৎসকেরা। তা ছাড়া কারখানা থেকে ব্যাপক শব্দদূষণও এলাকায় ছড়াচ্ছে। এর জেরে এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে বাড়ছে শ্রবণজনিত সমস্যাও।

বর্ষাকালে অবস্থা আরও খারাপ হয়ে পড়ে। সেই সময় নদীর জল দু’কুল ছাপিয়ে পাশের খেত জমিতেও ঢুকে যায়। এর ফলে অনেক সময়েই চাষেও প্রভাব পড়ে বলে দাবি বাসিন্দাদের। ওই সব জমির ধান খেয়ে এলাকার গবাদি পশুরাও অসুস্থ হয়ে পড়ছে বলে জানান স্থানীয় পশু চিকিৎসকেরা। ধসল গ্রামের বাসিন্দা তাপস ঘোষের দাবি, সংলগ্ন প্রায় ন’টি গ্রামে অল্প সময়ের ব্যবধানে প্রায় ৭০টা গরু রোগের শিকার হয়ে মারা গিয়েছে।

Advertisement

গ্রামাসীদের দাবি, কারখানা চালুর আগে জনশুনানির সময় কর্তৃপক্ষ শূন্য থেকে ২ শতাংশের মধ্যে দূষণের মাত্রা থাকবে বলে জানিয়েছেন। তা ছাড়া এলাকায় প্রচুর গাছ লাগানোরও প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় কারখানা কর্তৃপক্ষের তরফে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, কারখানা শুরুর সময় দেওয়া কোনও প্রতিশ্রুতিই বাস্তবে রক্ষা করা হয়নি।

এই পরিস্থিতিতেও কারখানার ইউনিটের সংখ্যা বাড়ছে বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ, পুলিশ-সহ প্রশাসনের বিভিন্ন মহলে বারবার আবেদন জানিয়েও লাভ হয়নি বলে অভিযোগ ন’টি গ্রামের বাসিন্দাদের। যদিও কারখানা কর্তৃপক্ষের দাবি, তাঁরা সমস্ত নিয়মনীতি মেনেই কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। দূষণের অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। দূষণ পর্যদের এক কর্তার দাবি, ‘‘অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়। নিয়মিত অভিযানও চালানো হয় এলাকায়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন