দেড় বছর হাসপাতালে ঢাকা পড়ে ১৪ লক্ষের জেনারেটর

বছর দেড়েক ধরে পলিথিন মোড়া ১৪ লক্ষ টাকার আধুনিক জেনারেটর। দীর্ঘদিন ব্যবহৃত না হওয়ায় পলিথিনে মোড়া অবস্থায় ১৬০ কিলো ভোল্টের ‘নতুন’ জেনারেটরের যন্ত্রাংশ অকেজো হয়েছে বলে বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা। জেলা হাসপাতালে জেনারেটর ‘বন্দি’ দশায় রয়েছে, অথচ লোডশেডিং হলে জেরবার হতে হচ্ছে রোগী, কর্মীদের। এমনই অভিযোগ বাসিন্দাদের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কোচবিহার শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০১৪ ০১:৩৫
Share:

বসানোর পরে এক দিন চলেনি এই জেনারেটর। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব।

বছর দেড়েক ধরে পলিথিন মোড়া ১৪ লক্ষ টাকার আধুনিক জেনারেটর। দীর্ঘদিন ব্যবহৃত না হওয়ায় পলিথিনে মোড়া অবস্থায় ১৬০ কিলো ভোল্টের ‘নতুন’ জেনারেটরের যন্ত্রাংশ অকেজো হয়েছে বলে বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা। জেলা হাসপাতালে জেনারেটর ‘বন্দি’ দশায় রয়েছে, অথচ লোডশেডিং হলে জেরবার হতে হচ্ছে রোগী, কর্মীদের। এমনই অভিযোগ বাসিন্দাদের।

Advertisement

২০১২-র ডিসেম্বর মাসে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের প্রায় ১৪ লক্ষ টাকা আর্থিক বরাদ্দে হাসপাতালে ওই জেনারেটরটি ‘বসানো’ হয়। তার পরে অবশ্য এক দিনও জেনারেটর চালানো হয়নি বলে অভিযোগ। হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে, পুরানো ওয়ারিং ব্যবহার করে অধিক ক্ষমতার আধুনিক জেনারেটর চালানো সম্ভব নয়। নতুন জেনারেটর চালু করতে প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো উন্নয়নে ৮ লক্ষ টাকা স্বাস্থ্য দফতরের কাছে চাওয়া হয়েছিল। তারও প্রায় এক বছর কেটেছে। কিন্তু বরাদ্দ মেলেনি। তাই জেনারেটরটিকে পলিথিনে মুড়ে রাখা হয়। কোচবিহারের জেলাশাসক মোহন গাঁধী বলেন, “জেনারেটরের বিষয়টি নিয়ে বিশদে খোঁজ নিচ্ছি।” হাসপাতালের সুপার জয়দেব বর্মন জানিয়েছেন, “খুব দ্রুত জেনারেটরটি চালুর চেষ্টা হচ্ছে।”

প্রশাসনের কর্তারা ‘খোঁজ নিচ্ছি’ , ‘চেষ্টা চালাচ্ছি’ বলে মন্তব্য করলেও অব্যবহৃত পড়ে থাকায় জেনারেটরের কর্মক্ষমতা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন পূর্ত দফতরের আধিকারিকরা। সোমবার জেনারেটর সরবরাহকারী সংস্থা ও পূর্ত দফতরের (বিদ্যুৎ) বিভাগের কয়েক জন আধিকারিক জেনারেটরের ফিল্টার বদলানোর পরামর্শ দিয়েছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, দীর্ঘ দিন চালু না থাকায় জেনারেটরটিতে মোবিল দেওয়া হয়নি। ভাল পরিষেবার জন্য শুকিয়ে যাওয়া ফিল্টার বদলাতে হবে। এর জন্য প্রায় ৮ হাজার টাকা খরচ হবে। ফিল্টার বদালানো জেনারেটর রক্ষণাবেক্ষণের রুটিনের মধ্যেই পড়ে বলে জানানো হলেও, অব্যবহৃত অবস্থায় থাকলে জেনারেটরের কর্মক্ষমতা ফেরানোর খরচ বাড়বে বলে তাঁদের আশঙ্কা।

Advertisement

জেনারেটর পড়ে থাকলেও গরমে লোডশেডিং ও লো ভোল্টেজ সমস্যায় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে চিকিসাধীন রোগী ও তাঁদের পরিজনদের। রাতে লোডশেডিং হলে নানা ওয়ার্ডের ঘরে পর্যাপ্ত আলো জ্বলছে না, হাসপাতালের বেশ কিছু এলাকা অন্ধকারে ডুবে থাকছে। তার পরেও সমস্যা মেটাতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ থেকে প্রশাসন কোন মহলের হেলদোল নেই বলে অভিযোগ। যদিও নির্বাচন আচরণ বিধি লাগু থাকায় ওই বিষয়ে জনপ্রতিনিধিরা কোনও মন্তব্য করতে চাননি। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলা সদরের এমজেএন হাসপাতাল কোচবিহারের পাঁচটি মহকুমা তো বটেই লাগোয়া জলপাইগুড়ির বিস্তীর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের ভরসা। এমনকি নিম্ন অসম থেকে গুরুতর আশঙ্কাজনক রোগীদের অনেককে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। হাসপাতালের ওয়ার্ডে সংখ্যা বেড়েছে, শয্যাসংখ্যাও আগের তুলনায় বেশি। হাসপাতালে শয্যার সংখ্যা ৫০০। ফলে লোডশেডিঙের সময় পুরোনো ৬২ কেভি ক্ষমতার জেনারেটর দিয়ে ওই হাসপাতালের সব ওয়ার্ডে স্বাভাবিক পরিষেবা চালু রাখা যাচ্ছে না। শিশু, মহিলা, শল্য বিভাগ সহ বিভিন্ন ওয়ার্ডে সব আলো জ্বালানো সম্ভব হচ্ছে না বলে অভিযোগ। সব পাখাও ঘুরছে না। হাসপাতালের অফিস ঘর, শৌচাগার, বিশ্রামাগারের মত এলাকা অন্ধকারে ডুবে থাকছে বলে অভিযোগ।

তীব্র দাবদাহে আলো, পাখার মত পরিষেবা না পেয়ে রোগী ও তাঁদের পরিজনেরা নাকাল হচ্ছেন। কোচবিহার নাগরিক অধিকার মঞ্চের সভাপতি রাজু রায় বলেন, “পরিকল্পনার অভাবে ওই সমস্যা তৈরি হয়েছে। জেনারেটর বরাদ্দের সময়েই সেটি চালুর জন্য পরিকাঠামোর জন্য কী করতে হবে সে বিষয়টি খেয়াল করে বরাদ্দ অনুমোদন দরকার ছিল। গরমের সময় রোগীদের ভোগান্তি মেটাতে জরুরি ভিত্তিতে তা চালু করা না হলে আন্দোলনে নামব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন