বেহাল হাসপাতালের পরিকাঠামো।
‘নেই রাজ্যে’ বাস দিঘা স্টেট জেনারেল হাসপাতালের।
তৈরি হয়েও পড়ে রয়েছে অপারেশন থিয়েটার। নেই শৌচালয়, নেই অ্যানাস্থেসিস্ট, নেই প্রয়োজনীয় সংখ্যক নার্স কিংবা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।
রাজ্যে পালা বদলের পর সৈকত পযর্টনকেন্দ্র হিসেবে দিঘার সংস্কারে নানা ভাবে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য সরকার। কিন্তু, সেই ‘পরিবর্তন’ থমকে রয়েছে দিঘা স্টেট জেনারেল হাসপাতালের চৌহদ্দির বাইরেই!
শৌচালয়ের অভাবে হাসপাতালের পাঁচিলের দেওয়ালেই প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে বাধ্য হতে হন আউটডোরে আসা রোগী ও তাঁর পরিজনরা। এটাই প্রতিদিনের চিত্র। রাজ্যে পরিবর্তনের পর নানা উন্নয়নমূলক কাজ শুরু হলেও বাম আমলে তৈরি দিঘা স্টেট জেনারেল হাসপাতালের পরিকাঠামোর কোনও রকম উন্নতি হয়নি। বেহাল পরিকাঠামো আর কর্মী সঙ্কটের জেরে বর্তমানে দিঘা স্টেট জেনারেল হাসপাতালের এখন চরম অব্যবস্থা। স্বাভাবিক মারেই মার খাচ্ছে চিকিৎসা পরিষেবাও। হাসপাতালের সুপার স্বপন ওঝাও কার্যত স্বীকার করেছেন হাসপাতালের এই অব্যবস্থার কথা। দীর্ঘ দিন ধরে সুপার পদ শূন্য থাকার পর সম্প্রতি স্বপনবাবু নতুন স্থায়ী সুপার হিসেবে বদলি হয়ে এসেছেন। স্বপনবাবুর কথায়, “হাসপাতালের ভিতরে রোগীদের জন্য শৌচালয় থাকলেও বাইরে তা নেই। ফলে রোগী কিংবা পরিজনরা অসুবিধায় পড়েন। আর মহিলা রোগীদের চূড়ান্ত অসুবিধার মধ্যে পড়তে হয়।” তা হলে ব্যবস্থা নিচ্ছেন না কেন? তাঁর দাবি, বিষয়টি বারাবার হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতি থেকে জেলা স্বাস্থ্য দফতরে জানানো হলেও এখনও পর্যন্ত কোনও সুরাহা হয়নি।
নিয়মিত পরিষ্কার না হওয়ায় হাসপাতালে
অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ (ডান দিকে)। ছবি: সোহম গুহ।
দিঘা হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির সভাপতি তথা রামনগরের বিধায়ক অখিল গিরিও সমস্যার কথা মানছেন। তিনি জানিয়েছেন, অবিলম্বে হাসপাতালের আউটডোরে একটি শৌচালয় তৈরির জন্য রোগী কল্যাণ সমিতিতে সিদ্ধান্ত নিয়ে জেলা স্বাস্থ্য দফতরে পাঠানো হয়েছে। দিঘা স্টেট জেনারেল হাসপাতালে শুধু শৌচালয় সমস্যা নয়, মানুষের ন্যুনতম স্বাস্থ্য পরিষেবাটুকুও পাওয়া যায় না বলে রোগী ও তাঁদের আত্মীয় স্বজনদের অভিযোগ। হাসপাতালে চিকিৎসা পরিষেবার জন্য ১০ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও, বতর্মানে সুপার-সহ আছেন মাত্র ৫ চিকিৎসক। অন্য দিকে, ন্যুনতম ৩০ জন নার্সের বদলে রয়েছেন ১৪ জন নার্স। হাসপাতালে কোনও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। প্রতিদিন আউটডোর আর ইনডোর মিলিয়ে ২৫০ থেকে ৩০০ জন রোগীদের পরিষেবা দিতে গিয়ে চিকিৎসক থেকে নার্সদের নাভিশ্বাস উঠার উপক্রম। রোগী কল্যাণ সমিতির অন্যতম সদস্য তথা স্থানীয় পদিমা ১ গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান মনীন্দ্র দত্তের অভিযোগ, “রোগীদের স্বার্থে রামনগর ১ পঞ্চায়েত সমিতির পক্ষ থেকে ক’য়েক লক্ষ টাকা খরচ করে আলট্রাসোনোগ্রাফি মেসিন দেওয়া হলেও সেটি অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে পড়ে নষ্ট হচ্ছে। চালু হয়নি লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে তৈরি হওয়া আধুনিক মানের একটি অপারেশন থিয়েটারও।”
অথচ, ভৌগলিক ভাবেই এই হাসপাতালের গুরুত্ব যথেষ্ট। ৫০ শয্যার এই হাসপাতালের উপর দিঘা, রামনগর এমনকি প্রতিবেশি ওড়িশারও বেশ ক’য়েক লক্ষ মানুষ নির্ভরশীল। এমন হাসপাতালের এমন দশা কেন?
কাঁথির সহকারী মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তরুনকান্ত খাটুয়া বলেন, “হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারটি স্বাস্থ্যভবনের অনুমোদন না থাকায় চালু করা যায়নি। দীর্ঘ দিন সুপার পদটি শূন্য থাকার ফলেও পরিষেবায় কিছু সমস্যা হয়েছে। বাকি পরিকাঠামোগত সমস্যাগুলিরও দ্রুত সমাধান করা হবে।” একই প্রতিশ্রুতি জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শৈবাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ১৯৭৯ সালে হাসপাতালটি তৈরির পর থেকেই শুধু প্রতিশ্রুতিই দেওয়া হয়েছে। এ বার তার বাস্তবায়ন চান দিঘা-রামনগরের অধিবাসীরা।