পাশে শয্যায় মরদেহ, ঘুম নেই বাকিদের

হাসপাতালের সার্জিকাল বিভাগের মহিলা ওয়ার্ড থেকে মর্গের দূরত্ব বড়জোর দেড়শো মিটার। অথচ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গড়িমসিতে ওই ওয়ার্ড থেকে মর্গে দেহ আসতে সময় লেগে গেল প্রায় কুড়ি ঘণ্টা! এই দীর্ঘ সময় ঘরের অন্য রোগীদের মধ্যেই পড়ে রইল শাহনাজ পরভিন (১৯) নামে এক তরুণীর মৃতদেহ। মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে বুধবার দুপুর পর্যন্ত জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালে সার্জিকাল ওয়ার্ডের ১২ নম্বর শয্যায় সেই দেহ আগলে বসে থাকলেন মৃতার এক আত্মীয়া।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রঘুনাথগঞ্জ শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০১৪ ০৩:০৩
Share:

হাসপাতালের সার্জিকাল বিভাগের মহিলা ওয়ার্ড থেকে মর্গের দূরত্ব বড়জোর দেড়শো মিটার। অথচ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গড়িমসিতে ওই ওয়ার্ড থেকে মর্গে দেহ আসতে সময় লেগে গেল প্রায় কুড়ি ঘণ্টা! এই দীর্ঘ সময় ঘরের অন্য রোগীদের মধ্যেই পড়ে রইল শাহনাজ পরভিন (১৯) নামে এক তরুণীর মৃতদেহ। মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে বুধবার দুপুর পর্যন্ত জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালে সার্জিকাল ওয়ার্ডের ১২ নম্বর শয্যায় সেই দেহ আগলে বসে থাকলেন মৃতার এক আত্মীয়া।

Advertisement

পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই তরুণীমমঙ্গলবার দুপুরে বীরভুমের রাজগ্রামে ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দেন। গুরুতর জখম অবস্থায় তাঁকে ভর্তি করানো হয় জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালে। সন্ধ্যায় হাসপাতালেই মারা যান তিনি।

যে ঘরে শাহনাজের দেহ ছিল সেই ঘরেই ভর্তি রয়েছেন আরও ২৬ জন রোগী। তাঁদেরই একজন বলেন, ‘‘সন্ধ্যা নাগাদ ওই তরুণী মারা গেলেও প্রথমে আমরা বুঝতে পারিনি। মৃতের এক আত্মীয়াকে বাইরে ডেকে নিয়ে যান এক নার্স। পরে তিনিই এসে দেহ চাদর দিয়ে দেহ ঢেকে দেন। এত রোগীদের মধ্যে এ ভাবে শয্যাতে মৃতদেহ পড়ে থাকায় সকলেই ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। নার্সদের মৃতদেহ সরিয়ে নেওয়ার আবেদন জানাই। কিন্তু কেউই আমাদের কথায় কান দেয়নি।”

Advertisement

দুর্ঘটনায় পায়ে চোট নিয়ে ১১ নম্বর শয্যায় ভর্তি রয়েছেন শ্রাবণী রাজবংশী। পাশেই মৃতদেহ দেখে ভয়ে গোটা রাত ঘুমোতে পারেননি তিনি। শেষ পর্যন্ত নার্সদের অনুরোধ করে ১০ নম্বর শয্যায় তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়। শ্রাবণী বলেন, “হাসপাতাল সম্পর্কে এমনিতেই আমার খুব ভয় রয়েছে। তার উপর পাশের শয্যায় মৃতদেহ থাকায় খুব অস্বস্তির মধ্যে ছিলাম।” ছোটকালিয়াই গ্রামের তারজিনা বিবি বলছেন, “এভাবে পাশে মৃতদেহ নিয়ে কখনও থাকতে হয়নি। সরকারি হাসপাতালে এসে এমন অমানবিক অভিজ্ঞতা হল।’’

যে তরুণীর মৃতদেহ নিয়ে এত বিতর্ক তাঁর কাকা সুতির বৈষ্ণবনগর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল সালাম বলেন, “মাত্র ১৫ মাস আগে বিয়ে হয়েছিল ভাইঝির। শ্বশুরবাড়ির লোকজনের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়েই ট্রেনের তলায় ঝাঁপ দেয় ও। আমরাও চেয়েছিলাম রাতেই দেহ ওয়ার্ড থেকে মর্গে সরিয়ে নিয়ে যেতে। কিন্তু নার্সরাই বলল যে, পুলিশ ও ম্যাজিষ্ট্রেট না আসা পর্যন্ত দেহ সরানো যাবে না। রাতে হাসপাতাল থেকে খবরও পাঠানো হয়নি পুলিশের কাছে। সকালে পুলিশ ও ম্যাজিষ্ট্রেট আসার পর বেলা দু’টো নাগাদ আমরা জনা চারেক লোক মিলে ভাইঝির দেহ স্ট্রেচারে করে দেড়শো মিটার দূরে মর্গে নিয়ে যাই।”

জঙ্গিপুর পুরসভার কাউন্সিলার কংগ্রেসের বিকাশ নন্দ বলেন, ‘‘এ ভাবে ওয়ার্ডে ২০ ঘণ্টা মৃতদেহ পড়ে থাকার ঘটনা অত্যন্ত অমানবিক। এর আগেও এমন ঘটেছে। স্থানীয় সাংসদের পক্ষ থেকে আমরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাব দিয়েছিলাম এই ধরণের মৃতদেহ রাখার জন্য একটি ঘর তৈরি করে দেওয়ার। কিন্তু সে প্রস্তাব খারিজ হয়ে যায়। মৃতদেহ রাখার ঘরের ব্যবস্থা থাকলে এমন ঘটনা এড়ানো যেত।’’

জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালের সুপার শাশ্বত মণ্ডল বলেন, “এমন ঘটনা দুঃখজনক। ওয়ার্ড মাস্টারের উচিত ছিল পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে কথা বলে মৃত্যুর চার ঘণ্টা পরে মৃতদেহ সরিয়ে ফেলা। এর আগেও এমন ঘটনা ঘটেছে। খোঁজ নিয়ে দেখছি কেন এমন ঘটল। ভবিষ্যতে এমন ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না হয় সে বিষয়েও নজর রাখা হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন