বিক্রি নেই ন্যায্য মূল্যের বাইপাস-সরঞ্জামের

পরিসংখ্যান বলছে, পাঁচ মাসে মাত্র চার! রাজ্যের সব সরকারি মেডিক্যাল কলেজের ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকান থেকে ৬৫ শতাংশেরও বেশি ছাড়ে ওপেন হার্ট বা বাইপাস সার্জারির প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি বিক্রি শুরু হয়েছিল ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে। কিন্তু পাঁচ মাস কাটার পরে দেখা যাচ্ছে, গোটা রাজ্যে ন্যায্য মূল্যের দোকান থেকে কম দামে জিনিসপত্র কিনে বাইপাস সার্জারি হয়েছে টেনেটুনে ৪টি। তার মধ্যে তিনটিই এসএসকেএমে।

Advertisement

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০১৫ ০২:০৫
Share:

পরিসংখ্যান বলছে, পাঁচ মাসে মাত্র চার!

Advertisement

রাজ্যের সব সরকারি মেডিক্যাল কলেজের ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকান থেকে ৬৫ শতাংশেরও বেশি ছাড়ে ওপেন হার্ট বা বাইপাস সার্জারির প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি বিক্রি শুরু হয়েছিল ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে। কিন্তু পাঁচ মাস কাটার পরে দেখা যাচ্ছে, গোটা রাজ্যে ন্যায্য মূল্যের দোকান থেকে কম দামে জিনিসপত্র কিনে বাইপাস সার্জারি হয়েছে টেনেটুনে ৪টি। তার মধ্যে তিনটিই এসএসকেএমে। আর একটি হয়েছে কল্যাণীর সুপার স্পেশ্যালিটি গাঁধী মেমোরিয়াল হাসপাতালে। এটি কল্যাণী মেডিক্যাল কলেজের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস হিসেবে চিহ্নিত।

অথচ সব মেডিক্যাল কলেজে ন্যায্য মূল্যের দোকান রয়েছে। তাতে বাইপাস সার্জারির জিনিসপত্রও রয়েছে। কিন্তু অস্ত্রোপচারের জন্য তা কেনা হচ্ছে না। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ, আরজিকর, এনআরএস, ন্যাশনাল মেডিক্যাল সর্বত্র একই অবস্থা। প্রত্যেকটিতেই সপ্তাহে ৮-১০টি করে বাইপাস অস্ত্রোপচার হয়। কিন্তু তার জন্য রোগীর বাড়ির লোককে দিয়ে বাইরের দোকান বা এজেন্টদের থেকেই জিনিসপত্র কেনাচ্ছেন চিকিত্‌সকেরা। এমনকী, এসএসকেএমেও ন্যায্য মূল্যের দোকান থেকে জিনিস কিনে অস্ত্রোপচারে চিকিত্‌সকদের কোনও উত্‌সাহ দেখা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ। ফলে অর্ধেক টাকায় বাইপাস সার্জারি করে গরিব রোগীকে স্বস্তি দেওয়ার যে পরিকল্পনা ছিল, তা কার্যত ভেস্তে যেতে বসেছে বলে স্বীকার করেছেন স্বাস্থ্যকর্তারা। আগামী সপ্তাহে স্বাস্থ্য ভবনে বিশেষ বৈঠক ডেকেছেন ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকানের দায়িত্বে থাকা স্বাস্থ্য দফতরের সচিব ওঙ্কার সিংহ মীনা।

Advertisement

কেন এই অবস্থা? কেন আগ্রহ দেখাচ্ছেন না চিকিত্‌সকেরা?

কার্ডিওথোরাসিক বিভাগের চিকিত্‌সকদের দাবি, বাইপাস সার্জারির জন্য প্রায় ১৫৯ ধরনের যন্ত্রপাতি প্রয়োজন হয়। এর মধ্যে ১৩-১৫টি জিনিস এখনও ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকানে পাওয়া যাচ্ছে না। সব জিনিস না-পাওয়া গেলে কিছু জিনিসের ভরসায় এই অস্ত্রোপচার করতে যাওয়া যথেষ্ট ঝুঁকির। কারণ, অস্ত্রোপচার চলাকালীন হয়তো এমন কিছুর দরকার হল, যা ন্যায্য মূল্যের দোকানে নেই। তখন রোগীর বাড়ির লোককে তা কিনতে দৌড়োদৌড়ি করতে হবে। তার থেকে বাইরের দোকান বা এজেন্টদের থেকে সব ধরনের জিনিস কিনে একেবারে প্রস্তুত হয়ে অস্ত্রোপচার করাই তাঁরা শ্রেয় বলে মনে করছেন।

যদিও সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকান প্রকল্পে স্বাস্থ্য দফতরের উপদেষ্টা গৌতম মজুমদারের বক্তব্য, “চিকিত্‌সকদের ইচ্ছা থাকলেই কম টাকায় বাইপাসের সুবিধা পেতেন গরিব রোগী। যদি ১২-১৩টি জিনিস না-পাওয়া যায়, তা হলেও তো ১৩৬টি জিনিস পাওয়া যাচ্ছে। সেগুলি দিয়েই কিছু অস্ত্রোপচার হতে পারত। বাকি কিছু দরকার পড়লে রোগীর বাড়ির লোক বাইরে থেকে কিনতেন। তাতেও তাঁদের অনেক সাশ্রয় হত। কিন্তু তা হচ্ছে না।” তাঁর কথায়, “এর পিছনে বিভিন্ন সংস্থার থেকে চিকিত্‌সকদের কমিশন পাওয়ার চালু ব্যবস্থার প্রভাব উড়িয়ে দেওয়া যায় না।”

যা শুনে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের কার্ডিওথোরাসিক বিভাগের প্রধান প্লাবন মুখোপাধ্যায়ের উক্তি, “অত সহজ নয় ব্যাপারটা। আমি হিসেব নিয়ে দেখেছি, ওপেন হার্ট সার্জারিতে প্রয়োজন হয় এমন অন্তত ৪৫ ধরনের যন্ত্রপাতি এবং ছয় ধরনের ওষুধ আমাদের ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকানে মিলছে না। এই রকম অর্ধেক জিনিস নিয়ে কখনও এত গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্রোপচার করা যায়? ছেলেখেলা নাকি?” এসএসকেএমের কার্ডিওথোরাসিকের প্রধান শুভঙ্কর ভট্টাচার্যের কথাতেও, “যত দিন না ন্যায্য মূল্যের দোকানে বাইপাস সার্জারির সব জিনিস পাওয়া যায়, আমরা সেখানকার জিনিস নিয়ে অস্ত্রোপচারে যাব না।”

কলকাতার চারটি মেডিক্যাল কলেজে ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকানের দায়িত্বে থাকা সংস্থার প্রধান স্বপন দাস বলেন, “পুরোটাই চিকিত্‌সকদের অজুহাত। ১২-১৩টা জিনিস বাকি রেখে তাঁরা অস্ত্রোপচার শুরু করতে পারছেন না, এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। আসলে কমিশনের খেলা চলছে পুরো বিষয়টার মধ্যে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন