বোলপুর হাসপাতালে রক্তের আকাল, সঙ্কটে বহু রোগী

ভোট পর্ব মিটেছে কবেই, কিন্তু বোলপুর মহকুমা হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কের রক্তের সংকট মিটল না। ফের জরুরীকালীন অবস্থায় রক্তের আকাল নিয়ে অভিযোগ তুললেন রোগীর আত্মীয় পরিজনরা। তাঁদের অভিযোগ, অস্ত্রোপচারের অপেক্ষায় থাকা রুগী বা, থ্যালাসেমিয়ার মতো রোগে আক্রান্ত রোগীদের অবস্থা সংকটজনক হয়ে উঠছে দিন দিন। পরিজনদের দাবি, “জেলার সদর হাসপাতালের পাশাপাশি রামপুরহাট জেলা হাসপাতাল এবং বোলপুর হাসপাতালেও প্রত্যেক দিন একাধিক গ্রুপের রক্তের আকাল দেখা দিয়েছে। কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও ফল মেলেনি।”

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বোলপুর শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০১৪ ০১:৪৪
Share:

ভোট পর্ব মিটেছে কবেই, কিন্তু বোলপুর মহকুমা হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কের রক্তের সংকট মিটল না। ফের জরুরীকালীন অবস্থায় রক্তের আকাল নিয়ে অভিযোগ তুললেন রোগীর আত্মীয় পরিজনরা। তাঁদের অভিযোগ, অস্ত্রোপচারের অপেক্ষায় থাকা রুগী বা, থ্যালাসেমিয়ার মতো রোগে আক্রান্ত রোগীদের অবস্থা সংকটজনক হয়ে উঠছে দিন দিন। পরিজনদের দাবি, “জেলার সদর হাসপাতালের পাশাপাশি রামপুরহাট জেলা হাসপাতাল এবং বোলপুর হাসপাতালেও প্রত্যেক দিন একাধিক গ্রুপের রক্তের আকাল দেখা দিয়েছে। কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও ফল মেলেনি।”

Advertisement

বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে রক্তের সংকট নতুন নয়। ষোড়শ লোকসভা নির্বাচনের পর থেকেই রাজ্যের অন্যান্য হাসপাতাল গুলির মতো ও রক্তের সঙ্কট দেখা দিয়েছিল এই হাসপাতালে। সঙ্কট মেটাতে কোথাও কোথাও হাসপাতালের উদ্যোগে রক্তদান শিবিরের আয়োজন হয়েছিল তো কোথাও আবার খোদ হাসপাতালের কর্মীরা নিজেরাই রক্ত দান করেছিলেন। তবু সঙ্কট এখনও কাটেনি। সংকটজনক রোগীদের রক্তের যোগান দিতে কার্যত হিমশিম খেতে হচ্ছে পরিবারের লোকদের। প্রয়োজনীয় রক্তের সঙ্কটে ওই সমস্ত রোগীরা ও তাঁদের আত্মীয়রা প্রমাদ গুনছেন। অবস্থাপন্ন রোগীদের পরিবার টাকার বিনিময়ে রক্তের যে ব্যাবস্থা করছেন, তা অবশ্য অন্যদের কপালে জুটছে না। এতে মরণাপন্ন রোগীদের জন্য অবিলম্বে রক্তদাতা খুঁজে পেতে নাজেহাল হচ্ছেন রোগীদের পরিবারগুলি।

বোলপুরের মহকুমা হাসপাতাল যে সমস্ত স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কাছে থেকে রক্তের যোগান মেটানোর জন্য নির্ভর করে তাঁদের মধ্যে বোলপুরের ভুবনডাঙ্গার একটির সঙ্গে যুক্ত, স্বেচ্ছাসেবী শুভাশিস খামরাই জানান, জরুরীকালীন অবস্থার রোগী থেকে শুরু করে থ্যালাসেমিয়া রুগীদের জন্য প্রায় রক্তের প্রয়োজন হয়। তাঁদের পরিবারের লোকেরা যোগাযোগ করেন, আমরা কার্ড দিই। কিন্তু ব্লাড ব্যাঙ্কে তো রক্তের মজুত পরিমাণ নেই, কি ভাবে তাহলে ওই রুগীরা বা তাদের আত্মীয়রা রক্তের যোগান পাবেন? বোলপুর মহকুমা হাসপাতাল কতৃপক্ষকে আরও উদ্যোগী হতে হবে। জানা যায়, রক্ত সংকটের জেরে সমস্যায় পড়েছেন কিডনির সমস্যা ভোগা দুলাল সমাদ্দার, কাশিমবাজার এলাকার সুব্রত ভাস্কর, কুরুম্বার বাসিন্দা গনেশ মাঝি। ভুবনডাঙ্গার বাসিন্দা বেবি খাতুনের থ্যালাসেমিয়ার কারণে প্রয়োজন রক্তের, তাঁকেও রক্তের সংকটের জন্য হেনস্থা হতে হচ্ছে। মহকুমা হাসপাতালের গত এক সপ্তাহের ব্লাড ব্যাঙ্কের পরিসংখ্যান চিত্র দেখলেই বোঝা যায় ওই হেনস্থার কারণ ব্যাঙ্কে রক্তের মজুত কম।

Advertisement

ব্লাড ব্যাঙ্কের কর্মী দেবব্রত চট্টোপাধ্যায় বলেন, “দিন দশ আগে কীর্ণাহারে একটি রক্তদান শিবির হয়। সেখানে রক্ত সংগ্রহ করা হয়েছে। ওই সংগৃহীত রক্ত থেকে যত দিন সম্ভব রক্ত দিয়েছি। এখন মজুত রক্ত ফুরিয়ে গেলে, রক্তদাতার খোঁজ করতে হয়। সেক্ষেত্রে রোগীর পরিবারকে বলে দেওয়া হয় রক্তদাতা নিয়ে আসতে। রক্তদাতার সন্ধান না মিললে রোগীদের ফেরানো ছাড়া অন্য কোনও রাস্তা নেই আমাদের।” গত ১৮ তারিখ থেকে ২৪ তারিখ পর্যন্ত বোলপুর ব্লাড ব্যাঙ্কের একাধিক গ্রুপের রক্তের তালিকায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রে শূন্য রয়েছে। রক্ত মজুতের পরিমাণ এমতবস্থায় রোগীদের নিয়ে নাজেহাল যেমন পরিবারের লোকজন তেমনই সমস্যায় পড়েছেন হাসপাতাল কতৃপক্ষও। আটটি গ্রুপের মধ্যে এ-পজিটিভ এবং বি-নেগেটিভ গ্রুপের একটি করে ইউনিট ছাড়া অন্য কোনও গ্রুপের রক্ত ছিল না। ২২ তারিখ ও-পজিটিভ দুই ইউনিট, বি-পজিটিভ তিন ইউনিট, বি-নেগেটিভ এক ইউনিট, এবি পজিটিভ এক ইউনিট করে রক্ত ছিল। ২৩ জুন ও-পজিটিভ দুই ইউনিট, এ- পজিটিভ তিন ইউনিট, বি-নেগেটিভ এক ইউনিট এবং এবি- পজিটিভ ৫ ইউনিট রক্ত বর্তমানে মজুত রয়েছে ব্যাঙ্কে।

ব্লাড ব্যাঙ্কের ভারপ্রাপ্ত চিকিত্‌সক তীর্থঙ্কর চন্দ্র বলেন, “আমরা সব রকম ভাবে চেষ্টা করছি প্রয়োজন মতো রক্তদান শিবিরের আয়োজন করার। ইতিমধ্যেই বেশ কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এবং ক্লাবে খবর পাঠানো হয়েছে। রক্তদান সম্পর্কিত জনসচেতনতা বাড়াতে স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় স্তরের ছাত্রছাত্রীদের যাতে এই অভিযানে সামিল করা যায় এবং তাদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করে সমাজের সকল স্তরের কাছে রক্তদানের গুরুত্ব পৌঁছনো যায় সে নিয়ে আলোচনা করছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন