কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য দফতর ও ইউনিসেফের প্রতিনিধি দলের আসার মুখে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নিওনেটাল বিভাগে রাতারাতি ২৫টি শয্যা বাড়িয়ে দেওয়া হল। গত সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার রাত ১২টার মধ্যে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ছ’টি শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এই নিয়ে গত পাঁচ দিনে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ২১টি শিশুর মৃত্যু হল।
শিশু মৃত্যুর কারণ খতিয়ে দেখতে দিল্লি থেকে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য দফতর ও ইউনিসেফের প্রতিনিধি দল মঙ্গলবার রাতে মালদহ পৌঁছয়। তাঁদের আসার কথা শোনার পরেই মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ জন্মের ২৮ দিনের মধ্যের শিশুদের জন্য নির্ধারিত নিওনেটাল বিভাগে অতিরিক্ত ২৫টি শয্যা বাড়িয়ে দেয়। শিশু বিভাগে নতুন ১৪টি ওয়ার্মার যন্ত্রও বসানো হয়েছে। মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, শিশুমৃত্যুর ঘটনাগুলি স্বাভাবিক। মৃত্যুর পিছনে কোনও গাফিলতি নেই।
বুধবার সকাল ৯টা নাগাদ কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের প্রতিনিধি, চিকিৎসক হরিশ চিল্লানিয়া ও ইউনিসেফের অরুন্ধতী জৈনের নেতৃত্বে এক প্রতিনিধি দল মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আসেন। তাঁরা অধ্যক্ষ, সুপার ও শিশু বিভাগের প্রধান-সহ চিকিৎসকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। প্রতিনিধি দলটি মেডিক্যাল কলেজে হাসপাতালের ওটি-র লেবার রুম, প্রসূতি বিভাগ, এসএনসিইউ, শিশু বিভাগ ও নিওনেটাল বিভাগ ঘুরে দেখেন।
হরিশ চিল্লানিয়া বলেছেন, “আমরা যৌথভাবে মালদহে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে শিশু মৃত্যুর কারণ খতিয়ে দেখতে এসেছি। তবে কী দেখলাম, কী হয়েছে সব কেন্দ্রীয় মন্ত্রকে রিপোর্ট দেওয়া হবে। প্রকাশ্যে কিছু বলতে পারব না।” হাসপাতাল সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক ও ইউনিসেফের প্রতিনিধিরা মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগগুলিতে কম সংখ্যক নার্স দেখে এদিন অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার মহম্মদ আব্দুর রসিদ জানান, সোমবার থেকে মঙ্গলবার রাত অবধি ছয়টি শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে একটি শিশুর জন্ম হয়েছিল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। শিশুটির ওজন ছিল এক কেজি। কম ওজনের কারণে ওই শিশু মারা গিয়েছে। বাকি পাঁচটি শিশু চাঁচল, কালিয়াচক ব্লক স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে রেফার করা হয়েছিল। পাঁচটি শিশুর দু’টি কম ওজন ও তিনটি শ্বাসকষ্টজনিত রোগে মারা গিয়েছে। শিশুগুলির অবস্থা খুবই খারাপ ছিল।
আর কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলের পরিদর্শন সম্পর্কে সুপারের দাবি, প্রতিনিধি দল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের পরিকাঠামো দেখছেন। এসএনসিইউ দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এদিনও নিওনেটাল বিভাগে ছয় জন নার্স বাড়ানো হয়েছে। তিন শিফটে দু’জন করে নার্স কাজ করবেন।
এদিন মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের আরও দু’টি দলের প্রতিনিধিরা পৃথক পৃথকভাবে কলিয়াচকের সিলামপুর ব্লক স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও চাঁচল মহকুমা হাসপাতাল পরিদর্শন করেছেন।