এক বছরেরও বেশি সময় মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ‘রক্ত বিভাজিকরণ যন্ত্র’ খারাপ হয়ে পড়ে রয়েছে। অথচ তা সারানোর ব্যাপারে মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ উদাসীন। বারবার আর্জি করার পরেও কর্তৃপক্ষ মেশিন মেরামত না করায় চিকিৎসক থেকে শুরু করে সাধারণ রোগীদের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
এ দিকে রক্ত বিভাজিকরণ মেশিন না সারানোয় মেডিক্যাল কলেজের পাশাপাশি জেলা জুড়ে তীব্র রক্তসঙ্কট দেখা দিয়েছে। এই রক্ত বিভাজিকরণ মেশিনে এক ইউনিট রক্তকে রক্তরস, অনুচক্রিকা ও লোহিক রক্তকণিকা তিন ভাগে বিভক্ত করে। যে রোগীর যেমন প্রয়োজন তাকে সেই রক্ত সরবরাহ করা হয়। কিন্তু এই মেশিনটি খারাপ থাকার ফলে এক বছর ধরে রক্তের বিভাজন না হওয়ায় যে থ্যালাসেমিয়া রোগীর রক্তের উনচক্রিকার প্রয়োজন সেই রোগীকে পুরো রক্ত নিতে হচ্ছে। এর ফলে থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্তেরা আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছে। একই ভাবে আগুনে পোড়া রোগীর রক্তরস জরুরি। আগুনে পোড়া রোগীরা রক্তরস পাচ্ছে না। দীর্ঘদিন মেশিন অকেজো হয়ে পড়ে থাকলেও মেডিক্যাল কলেজের ব্লাডব্যাঙ্ক ইনচার্জের হেলদোল নেই। এ ব্যাপারে ব্লাডব্যাঙ্ক ইনচার্জ প্রলয় দাস বলেন, “আমি রক্ত বিভাজিকা যন্ত্রটির ব্যাপারে মন্তব্য করব না।” মেশিন সারানোর ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের এই উদাসীনতায় ক্ষুব্ধ তৃণমূল চিকিৎসকদের সংগঠন প্রোগ্রেসিভ ডক্টর্স অ্যসোসিয়েশন। সংগঠনের তরফে মেডিক্যাল কলেজে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে রাজ্যের স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তার কাছে নালিশ জানানো হয়েছে। জেলা সভাপতি তাপস চক্রবর্তী বলেছেন, “এমনিতেই জেলায় রক্তের সঙ্কট। রক্ত বিভাজিকরণ মেশিনটি চালু থাকলে রক্তের সমস্যা অনেকটা মিটত। বাধ্য হয়ে রাজ্যের স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তার কাছে অভিযোগ জানিয়েছি।” দ্রুত মেশিন সারানোর ব্যবস্থা করার আশ্বাস দেন রাজ্যের স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তাও। মেডিক্যাল কলেজে ভাইস প্রিন্সিপ্যাল মহম্মদ আবদুর রসিদ বলেন, “রক্ত বিভাজিকরণ যন্ত্রটিকে সারানোর জন্য রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরে চিঠি পাঠানো হয়েছে। ওয়েস্ট বেঙ্গল ভলান্টারি ব্লাড ডোনার অ্যাসোসিয়েশন-এর জেলা সভাপতি “সৌমিত্র দত্ত বলেন, জেলায় ৫০০ থ্যালাসেমিয়ায় আক্তান্ত রোগী আছে। তাদের অনুচক্রিকা প্রয়োজন। রক্ত বিভাজিকরণ যন্ত্র খারাপ থাকায় রোগীকে হোল ব্লাড নিতে হচ্ছে। এর ফলে রোগীর দেহে রক্তের সঙ্গে অধিক বর্জ্য জমা হচ্ছে। এতে আক্রান্ত রোগীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মেডিক্যাল কলেজ কতৃপর্ক্ষকে ওই মেশিন মেরামত করার জন্য বহু অনুরোধ করেছি। কিন্তু কর্তৃপক্ষের হেলদোল নেই।” মালদহ মেডিক্যাল কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৯ সালে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য দফতর প্রায় দুই কোটি টাকা মূল্যের রক্ত বিভাজিকরণ মেশিন পাঠিয়েছিল। প্রায় দুই বছর ব্লাড ব্যাঙ্কের নীচতলায় বাক্সবন্দি হয়ে পড়ে ছিল সেটি। ২০১১ সালে ওই মেশিনটি ব্লাড ব্যাঙ্কের বসানো হলেও তা ২০১২ সালে চালু হয়েছিল। মাঝে কিছুদিন চালু থাকার পর ২০১৩ সালে অক্টোবরে মেশিনের দায়িত্বে থাকা টেকনিশিয়ান সুপারভাইজার চাকরি ছেড়ে চলে যাওয়ার পর থেকে মেশিন অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে।
হাসপাতাল সূত্রেই জানা গিয়েছে, মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রতিদিন ৬৫ থেকে ৭০ ইউনিট রক্তের প্রয়োজন। অথচ এখন ব্লাডব্যাঙ্কে ২০ থেকে ২৫ ইউনিট থাকছে। এই মেশিন থাকলে রক্তের সংকট দূর হত। এ দিন চাঁচলের দিনমজুর মহম্মদ সামাদ তার থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত ছেলে আবদুল কালামকে জরুরি রক্ত দিতে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেছেন। কিন্তু মেডিক্যাল কলেজে ও নেগেটিভ রক্ত না পাওয়ায় ছেলেকে থ্যালাসেমিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি রেখে রক্তের জন্য বালুরঘাট হাসপাতালে ছুটে গিয়েছেন। অথচ মালদহে এই রক্ত বিভাজিকরণ মেশিন চালু থাকলে মহম্মদ সামাদকে আজ আর বালুরঘাটে ছুটে যেতে হত না।