এনসেফ্যালাইটিস সঙ্কট

শুয়োর সরান, দাবি এ বার বাসিন্দাদের

শুয়োর আর মশার বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করল স্বাস্থ্য দফতর এবং বিভিন্ন পুরসভা। কোথাও সিদ্ধান্ত হয়েছে, শুয়োর দেখলেই তুলে দেওয়া হবে বন দফতরের হাতে। কোথাও বা বাসিন্দারাও সরব হয়েছেন শহর থেকে শুয়োর সরানোর দাবিতে। আলিপুরদুয়ারের অভিভাবকরা এ বিষয়ে স্মারকলিপিও দিয়েছেন জেলাশাসককে। মশা ঠেকাতে জমা জলে স্প্রে করা শুরু হয়েছে। মাইকিং করে বাসিন্দাদের সতর্ক করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে, টিকাকরণ নিয়েও উদ্যোগী হচ্ছে প্রশাসন।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০১৪ ০২:২৪
Share:

জলপাইগুড়িতে শুয়োর ধরার কাজ চলছে। ছবি: সন্দীপ পাল।

শুয়োর আর মশার বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করল স্বাস্থ্য দফতর এবং বিভিন্ন পুরসভা। কোথাও সিদ্ধান্ত হয়েছে, শুয়োর দেখলেই তুলে দেওয়া হবে বন দফতরের হাতে। কোথাও বা বাসিন্দারাও সরব হয়েছেন শহর থেকে শুয়োর সরানোর দাবিতে। আলিপুরদুয়ারের অভিভাবকরা এ বিষয়ে স্মারকলিপিও দিয়েছেন জেলাশাসককে। মশা ঠেকাতে জমা জলে স্প্রে করা শুরু হয়েছে। মাইকিং করে বাসিন্দাদের সতর্ক করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে, টিকাকরণ নিয়েও উদ্যোগী হচ্ছে প্রশাসন।

Advertisement

মঙ্গলবার জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতাল, মালবাজার ব্লক হাসপাতাল, শুল্কাপাড়া ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ঘুরে পরিস্থিতির খোঁজখবর করেন রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী।

হলদিবাড়ি পুরসভার চেয়ারম্যান গৌরাঙ্গ নাগ জানান, পুর এলাকায় যাঁরা শুয়োর পালন করেন, তাঁদের সতর্ক করা হবে। শহরের রাস্তায় শুয়োর দেখলেই তা ধরে বন দফতরের হাতে তুলে দিয়ে বলা হয়েছে। বনাঞ্চল এলাকায় সেগুলি ছেড়ে দিতে অনুরোধ করা হবে। কোথাও জমা জল থাকলে মশা মারার তেল স্প্রে করা হবে।

Advertisement

দক্ষিণ দিনাজপুরে আজ, বুধবার থেকে প্রতিটি হাসপাতাল এবং ব্লক প্রাথমিক হাসপাতালে ফিভার-ক্লিনিক চালু করছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর। মঙ্গলবার বালুরঘাটে ওই রোগ নিয়ে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের উদ্যোগে বৈঠকে ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বৈঠকে ছিলেন ৮টি ব্লকের মেডিক্যাল অফিসার, প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের আধিকারিক সহ চিকিৎসকেরা। দক্ষিণ দিনাজপুরের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক কাজল মন্ডল বলেন, “রক্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হচ্ছে সর্বত্র। জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের নজরদারি ও চিকিৎসার উপর গুরুত্ব দিতে ফিভার-ক্লিনিক চালু করা হচ্ছে।”

গত বছর জেলা জুড়ে একদিনে ১ বছর থেকে ১৫ বছর বয়সের ছেলেমেয়েদের এনসেফ্যালাইটিস রোগ প্রতিরোধ-টিকাকরণ করা হয়েছিল। এ জেলার প্রায় ৯২ শতাংশ শিশু ও বালককে ওই টিকাকরণ কর্মসূচিতে আনা হয়েছিল। জেলা হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে সদ্যোজাতদের রুটিন টিকাকরণের সঙ্গে জাপানি এনসেফালাইটিস রোগ প্রতিরোধে টিকাকরণও চালু হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে কী ভাবে ফের এনসেফ্যালাইটিস রোগের প্রকোপ দেখা দেখা দিতে পারে, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা।

মঙ্গলবার হলদিবাড়ি পুরসভায় সমস্ত কাউন্সিলর এবং স্বাস্থ্য দফতর, পুলিশ প্রশাসনের প্রতিনিধিদের নিয়ে জরুরি বৈঠক হয়। সিদ্ধান্ত হয় স্বাস্থ্যকর্মী এবং অন্য কর্মীরা বাড়ি বাড়ি ঘুরে বাসিন্দাদের এনসেফ্যালাইটিস সম্পর্কে সচেতন করবেন।

এ দিন জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতাল পরিদর্শন করে স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জনবাবু জেলার অতিরিক্ত মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক পূরণ শর্মা এবং হাসপাতাল সুপার সুশান্ত রায়ের সঙ্গে বৈঠক করেন। তিনি জানান, বিভিন্ন হাসপাতালে ফিভার ক্লিনিক খোলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যে সমস্ত গ্রামে বাসিন্দারা জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা সেখানে গিয়ে সমীক্ষা করবেন। রক্তের নমুনা সংগ্রহ করবেন। সেই কাজ শুরু হয়েছে। আক্রান্তদের ফিভার ক্লিনিকে পাঠাতে বলা হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিকর্তা বলেন, “বসতি এলাকা থেকে শুয়োর সরাতে শিলিগুড়ি পুর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছে। জলপাইগুড়ি পুর কর্তৃপক্ষও ব্যবস্থা নিচ্ছেন। গ্রামে মশা মারার তেল ছড়াবে স্বাস্থ্য দফতর। শহরে পুরসভাগুলিকে ব্যবস্থা নিতে হবে। ওরা চাইলে আর্থিক সাহায্য করা হবে।” মঙ্গলবার ১০ জন জ্বর নিয়ে জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে এক জনের এনসেফ্যালাইটিস উপসর্গ দেখা গিয়েছে।

বিশ্বরঞ্জনবাবু মালবাজার মহকুমা হাসপাতালে যান। সেখানে খোলা ফিভার ক্লিনিক থেকে প্রতিদিন জেলায় রিপোর্ট পাঠানোর নির্দেশ দেন। এ দিন বিকাল থেকেই শুয়োরের খামার শহর থেকে হটাতে তৎপর হয়ে ওঠে মালবাজার পুরসভা। নাগরিকদের সচেতন করতে মাইকে প্রচারও শুরু করেছে তারা।

এনসেফ্যালাইটিসের সংক্রমণ রুখতে এলাকার শুয়োরের খামারগুলি উচ্ছেদের দাবি তুলল আলিপুরদুয়ারের বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। স্থানীয় স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত জানুয়ারি মাস থেকে এই পর্যন্ত এনসেফ্যালাইটিসের উপসর্গ নিয়ে আলিপুরদুয়ার জেলার বাসিন্দা ৬ জন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা গিয়েছেন। অতিরিক্ত মুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারিক দীনেশ বিশ্বাস বলেন, “বিভিন্ন ব্লকে সর্তকতা জারি করা হয়েছে।” আলিপুরদুয়ার অভিভাবক মঞ্চের সম্পাদক ল্যারি বসু জানান, শহর থেকে শুয়োরে খামার সরাতে তাঁরা মহকুমাশাসকে স্মারকলিপি দিয়েছেন। আলিপুরদুয়ারের প্রাক্তন বিধায়ক নির্মল দাস জানান, এনসেফ্যালাইটিসের রোগ নির্ণয়ের ব্যবস্থা আলিপুরদুয়ার হাসপাতালে করা দরকার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন